কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলাটির আয়তন ১৯৩.৭৬ বর্গ কি.মি.যা উত্তরে কটিয়াদি,নিকলী এবং অষ্টগ্রাম উপজেলা, দক্ষিনে কুলিয়ারচর এবং সরাইল উপজেলা; পূর্বে অষ্টগ্রাম এবং নাসিরনগর উপজেলা আর পশ্চিমে কটিয়াদি উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত।

নামকরনঃ
বাজিতপুর নামের উৎপত্তি সম্মন্ধে দুটি জনশ্রুতিতে আছে। এর মধ্যে প্রথমটি হলো মুগল আমলে বায়োজিদ খাঁ নামক জনৈক রাজ কর্মচারী তার অপর তিন ভ্রাতা ভাগল খাঁ, পৈলন খাঁ ও দেলোয়ার খাঁ সহ দিল্লী থেকে এসে এখানে অবস্থান করেন। কিছুদিন পর তারা বাজিতপুর এর আশেপাশে ৪টি স্থানে স্ব-স্ব বাসস্থান ঠিক করে নেওয়ার পর বায়োজিদ খাঁর বাসস্থানের নামে বায়োজিদপুর পরে উচ্চারণ বিবর্তনে তা হয় বাজিতপুর। এই রম্নপে পৈলন খাঁর নামে পৈলনপুর এবং ভাগল খাঁর নামে ভাগলপুরও দেলোয়ার খাঁর নামে দিলালপুর বলে পরিচিতি লাভ করে।

দ্বিতীয় প্রকাশে জনশ্রতিতে আছে বায়েজিদ খাঁ নামক মুগল সেনাপতিকে নাকি প্রেরণ করা হয়েছিল হাওড় অঞ্চলে ঈশা খাঁর অগ্রগতিকে রোধ করার জন্য। ঈশা খাঁ তখন অবস্থান নেন হাওড় এলাকার নদী পরিবেষ্ঠিত ঘাগড়া অঞ্চলে, তখন বায়েজিদ খাঁ অবস্থান নেন ঘোড়াউত্রা নদী হতে দুই মাইল পশ্চিমে বর্তমান বাজিতপুরে। তবে তিনি ঈশাখাঁর সাথে কখনও কোন যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন কিনা কিংবা হলেও যুদ্ধের ফলাফল কি হয়েছিল সে সম্বন্ধে কোন বিসত্মারিত ইতিহাস না থাকায় এটি তেমন বিশ্বাস বা সমর্থনযোগ্য বলে মনে হয় না। আর তাছাড়া এখানে তাঁর স্থায়ী ভাবে বসবাসের কোন নিদর্শন পাওয়া যায় না। অস্থায়ী বাসস্থানকে প্রথমে বায়েজিদপুর পরে বাজিতপুর নামে ডাকা শুরম্ন হতে পারে। তবে প্রথম জনশ্রম্নতিটিই অধিকতর গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়।

বাজিতপুর নামের উৎপত্তি সম্মন্ধে দুটি জনশ্রুতিতে আছে। এর মধ্যে প্রথমটি হলো মুগল আমলে বায়োজিদ খাঁ নামক জনৈক রাজ কর্মচারী তার অপর তিন ভ্রাতা ভাগল খাঁ, পৈলন খাঁ ও দেলোয়ার খাঁ সহ দিল্লী থেকে এসে এখানে অবস্থান করেন। কিছুদিন পর তারা বাজিতপুর এর আশেপাশে ৪টি স্থানে স্ব-স্ব বাসস্থান ঠিক করে নেওয়ার পর বায়োজিদ খাঁর বাসস্থানের নামে বায়োজিদপুর পরে উচ্চারণ বিবর্তনে তা হয় বাজিতপুর। এই রুপে পৈলন খাঁর নামে পৈলনপুর এবং ভাগল খাঁর নামে ভাগলপুরও দেলোয়ার খাঁর নামে দিলালপুর বলে পরিচিতি লাভ করে।

দ্বিতীয় প্রকাশে জনশ্রতিতে আছে বায়েজিদ খাঁ নামক মুগল সেনাপতিকে নাকি প্রেরণ করা হয়েছিল হাওড় অঞ্চলে ঈশা খাঁর অগ্রগতিকে রোধ করার জন্য। ঈশা খাঁ তখন অবস্থান নেন হাওড় এলাকার নদী পরিবেষ্ঠিত ঘাগড়া অঞ্চলে, তখন বায়েজিদ খাঁ অবস্থান নেন ঘোড়াউত্রা নদী হতে দুই মাইল পশ্চিমে বর্তমান বাজিতপুরে। তবে তিনি ঈশাখাঁর সাথে কখনও কোন যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন কিনা কিংবা হলেও যুদ্ধের ফলাফল কি হয়েছিল সে সম্বন্ধে কোন বিসত্মারিত ইতিহাস না থাকায় এটি তেমন বিশ্বাস বা সমর্থনযোগ্য বলে মনে হয় না। আর তাছাড়া এখানে তাঁর স্থায়ী ভাবে বসবাসের কোন নিদর্শন পাওয়া যায় না। অস্থায়ী বাসস্থানকে প্রথমে বায়েজিদপুর পরে বাজিতপুর নামে ডাকা শু্রু হতে পারে। তবে প্রথম জনশ্রুতিটিই অধিকতর গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়

উল্লেখ্যযোগ্য স্থান বা স্থাপনাঃ
১. দেওয়ানবাড়ী মসজিদ
২.পাগলা শংকরের আখড়া
৩. জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
৪. বেংলা ফিসারী

প্রধান নদী সমূহঃ
মেঘনা, বাউলাই, ঘোড়াউত্রা, পুরনো ব্রহ্মপুত্র (প্রায় মৃত); খাল ৭টি, জলমহল ১৫টি; যার মধ্যে বাংলা চরবাধা উল্লেখ্যযোগ্য।

বাজিতপুর শহরঃ
শহরটি বর্তমানে একটি পৌরশহর যার আয়তন ৯.৮৪বর্গ কিমি, পুরুষ ৫০.৭৬%,মহিলা ৪৯.২৪%।এ শহরে ৯টি ওয়ার্ড এবং ২৮টি মহল্লা আছে। শহরের স্বাক্ষরতার হার ৪১.৪%। বাজিতপুর পৌরশহরে পরিনত হয় ১৮৬৯ সালে।

প্রশাসনঃ
বাজিতপুর থানা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৩৫সালে এবং উপজেলায় পরিনত হয় ১৯৮৩ সালে। এতে ১টি পৌরসভা, ১২টি ইউনিয়ন পরিষদ, ৯২টি মৌজা, ১৭৮টি গ্রাম আছে।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলীঃ
ব্রিটিশ শাসন আমলে এই উপজেলার দুলালপুরের নদীবন্দর বিখ্যাত হয়েছিল। নীল কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছিল গোপিনাথপুর এবং ঘোড়াঘাটে। ভাটি এলাকার মুক্তা চালান করা হত এই এলাকা দিয়ে। বাজিতপুর উন্নতমানের মসলিন ‘তাঞ্জাব’ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ছিল।“ফকির-সন্ন্যাসী” আন্দোলন বাজিতপুরে প্রচন্ডভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল।স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনী পাক আর্মিকে পরাজিত করে বাজিতপুরকে মুক্ত করে ২৬ অক্টোবর তারিখে। পাকিস্তানি আর্মির সাথে সংঘর্ষে সাত জন মুক্তিযুদ্ধা মারা যান। পাক আর্মি ৪০০ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে এবং ৬০ জন নারী তাদের সম্ভ্রম হারায়।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি গনহত্যা স্থানঃ সরারচর রেল গেট

ধর্মীয় প্রতিস্ঠানঃ মসজিদ ১২৫, মন্দির ১২, গীর্জা ৪
জনসংখ্যাঃ ১৯৭০৮১; পুরুষ ৫০.৪৯%, মহিলা ৪৯.৫১%; মুসলিম ৮৭.৪৯%, হিন্দু ১২.৫১%; পৌত্তলিক ৫৭২টি পরিবার।
স্বাক্ষরতা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানঃ গড় স্বাক্ষরতা ২২.১%; পুরুষ ২৭.৮%, মহিলা ১৬.৪%

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানঃ
কলেজ ১টি,বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ১টি,নার্সিং কলেজ ১টি, উচ্চ বিদ্যালয় ১২টি, জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয় ২টি, মাদ্রাসা ১০টি,সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮২টি,বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৪; উল্লেখ্য বাজিতপুর এইচ. ই. স্কুল(১৮৯০)।

  1. জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল, বাজিতপুর
  2. বাজিতপুর হাফেজ আব্দুর রাজ্জাক পাইলট মডেল ঊচ্চ বিদ্যালয়
  3. আফতাব উদ্দীন স্কুল এন্ড কলেজ
  4. বাজিতপুর রাজ্জাকুন্নেছা বালিকা মহাবিদ্যালয়
  5. বেগম রহিমা বালিকা উচ্চ বিদ্যা্লয়
  6. দিলালপুর আব্দুল করিম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়
  7. বাহেরবালী উচ্চ বিদ্যালয়, মাইজচর
  8. দিঘীরপাড় নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়
  9. ডুয়াইগাও সুলতানপুর উচ্চ বিদ্যালয়
  10. হালিমপুর উচ্চ বিদ্যালয়
  11. হিলিচিয়া উচ্চ বিদ্যালয়
  12. কমর আলী খান উচ্চ বিদ্যালয়
  13. গাজিরচর মফিজুর রহমান রুকন উচ্চ বিদ্যালয়
  14. নাজিরুল ইসলাম কলেজিয়েট হাই স্কুল (টাউন স্কুল)
  15. পিরিজপুর উচ্চ বিদ্যালয়
  16. সরারচর শিবনাথ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ।

সাংস্কৃতিক সংগঠনঃ

ক্লাব ৫২, প্রেস ক্লাব ১, থিয়েটার ক্লাব ১, পাবলিক লাইব্রেরী ১ , নারী সংগঠন১, খেলার মাঠ ৪টি, সিনেমা হল ২টি।

প্রধান পেশাসমূহঃ
কৃষি ৪২.২৯%, মাছ ধরা ২.৬৭%, কৃষি মজদুরি ১৮.৯৭%,দিনমজুর ৪.১৩%, ব্যবসায় ১২.২৮%, যানবাহন ৩.১২%, চাকুরী ৫.২২%, অন্যান্য ১১.৩২%

জমির ব্যবহারঃ
মোট চাষ উপযোগী জমির পরিমান ১৫৮৬২ হেক্টর, এক-ফসলী ৩১.৯০%,দ্বি-ফসলী৫৬.৬১%, ত্রিফসলী ১১.৪৮%; সেঁচের আওতাভুক্ত জমি ১২৮০০ হেক্টর।

কৃষকের মাঝে জমির নিয়ন্ত্রন ৫৫% ভূমিহীন, ৩১% ছোট, ১২% মাঝারী, ২% ধনী চাষী।

জমির মূল্যঃ প্রথম মানের ০.০১ হেক্টর জমির মূল্য প্রায় ৮৫০০ + টাকা।

প্রধান শস্য ধান,পাট,গম,আলু,মিষ্টী আলু,মটরঁশুটি,শাকসব্জি। বিলুপ্ত বা প্রায় বিলুপ্ত শস্য তিল, তিসি, চিনা, কাউন, তামাক, ডাল, পান। প্রধান ফল আম, কাঁঠাল, কলা, বেল, লেবু, লটকন।

মাছ চাষ, পশুপালন , পোল্ট্রিঃ
মাছের খামার ৭০টি, পশু খামার ৪১টি, পোল্ট্রি ৩৭৫টি, হ্যাচারী ২০ টি।

যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ পাঁকা রাস্তা ৭০কিমি, মাটির রাস্তা ২৮৭কিমি, রেলওয়ে ১০কিমি; জলপথ ৪০কিমি।

ঐতিহ্যবাহী যানবাহন পাল্কি,মহিষের গাড়ি,ঘোড়ার গাড়ি,গরুর গাড়ি,পানসি নৌকা,সরাংগা নৌকা।এই যানবাহনগুলো বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায়।

শিল্পকারখানাঃ রাইস মিল ২৫, স’মিল ১০, লোহার কারখানা ২, বরফ কল ৩, ওয়েল্ডিং ১৫ ।

কুটির শিল্পঃ চাঁপা শুঁটকি ১০০, কাঁঠের কাজ৮০, স্বর্ণকার ৩২, কামার ২৫, কুমোর ৯, দর্জি ১১২, কাঠের নৌকা প্রস্তুতকারক ৭ টি

হাট, বাজার,মেলাঃ মোট হাট বাজার ১৯টি,তার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ফাতেহপুর (বর্তমান সরারচর), শ্রীধরগঞ্জ; মেলা ৩ টি

প্রধান রপ্তানীজাত পণ্য ধান, ডিম,দুধ, কলা, মুরগী।

এন.জি.ও কার্যক্রমঃ কার্যত গরুত্তপূর্ন এন.জি.ও গুলো হচ্ছে ব্রাক, প্রশিকা, আশা, গ্রামীণ ব্যাংক।

স্বাস্থ্য কেন্দ্রসমূহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ১টি, উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র ১টি, উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র ৯টি

গেস্ট হাউজঃ উপজেলা পরিষদ থেকে ৪ কিঃ মিঃ পশ্চিম দিকে হোটেল ‘শাহিনা’ নামে একটি গেস্ট হাউজ আছে। গেস্ট হাইজটিতে রেলওয়েতে, বাসে এবং অন্যান্য যানবাহনে যাতায়াতের সার্বিক সুবিধা রয়েছে। উক্ত গেস্ট হাউজ শয়ন কক্ষর সংখ্যা- ০৬টি, সাধারণ স্নানাগার -০২টিম পুরুষ স্নানাগার-০২টি, বৈদ্যুতিক পাখা- ০২টি, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা আছে। মেঝ কার্পেটিংসহ হলরুমে অত্যাধুনিক টি,ভি সংরক্ষিত আছে। গেস্ট হাউজটি সার্বক্ষনিক খোলা থাকে। প্রতি রুম ভাড়া ২০০(দুইশত) টাকা। এছাড়া বাজিতপুর ও সরারচরে জেলা পরিষদের ডাকবাংলো রয়েছে যেখানে সল্প খরচে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে ।