তিস্তাসহ সকল আন্তর্জাতিক নদীতে পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক নদী কনভেনশনে স্বাক্ষরদানের যৌথ দাবি জানিয়েছে দেশের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক  মানব-বন্ধন সমাবেশে এই দাবি জানিয়ে বলা হয়, কনভেনশনকে আইনে পরিণত করার জন্য আর একটি মাত্র দেশের সম্মতি প্রয়োজন, ভাটির দেশ হিসাবে বাংলাদেশ তাতে স্বাক্ষর দিলে কনভেনশনটি আইনে পরিণত হয়। বক্তারা ভারত কর্তৃক গঙ্গা, তিস্তাসহ সকল অভিন্ন নদীর একতরফা পানি প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ সনদটি বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক রক্ষাকবচ হতে পারে বলে বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. এম. এ. মতিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানব-বন্ধন সভায় বক্তারা বলেন, ১৯৯৭ সালে প্রণীত কনভেনশনের ৩৩(২) অনুচ্ছেদে অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তিতে তৃতীয় পক্ষের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। তারা অভিযোগ করে বলেন, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনসংক্রান্ত আলোচনায় ভারত বারবারই বাংলাদেশের ওপর তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা চাপিয়ে দিতে চেয়েছে। ফলে পানি বণ্টনের আলোচনা আর ন্যায্য থাকেনি। এক্ষেত্রে শক্তিশালী তৃতীয় পক্ষের অন্তর্ভুক্তি আমাদের উপর এই উৎপীড়ন থেকে রক্ষা করতে পারে বলে তারা অভিমত রাখেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে অনুষ্ঠিত মানব-বন্ধন সভায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন, রিভারাইন পিপল, হাওর অঞ্চলবাসী, জল ও পরিবেশ ইনস্টিস্টিউট, তিস্তা নদীরক্ষা সংগ্রাম কমিটি, তুরাগ বাঁচাও আন্দোলন, গ্রীন ভয়েজ, জল-জলা ও কৃষিজমিরক্ষা সংগ্রাম কমিটি, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী ফোরাম, বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ নেতারা বক্তব্য রাখেন। সভা পরিচালনা করেন নদীরক্ষা সংগ্রাম কমিটির ফরিদুল ইসলাম ফরিদ। বক্তব্য রাখেন, তুরগা বাঁচাও আন্দোলনের মনোয়ার হোসেন রণি, তিস্তা নদী সংগ্রাম কমিটির লাইজু নাহার, হাওর অঞ্চলবাসীর হালিমদাদ খান ও জাকিয়া বেগম, বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চের স্থপতি সুব্রত সরকার, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের আসলাম খান, জল-জলা ও কৃষি জমিরক্ষা সংগ্রাম কমিটির শামসুদ্দিন আহমদ প্রমুখ।

সমাবেশে তিনদফা দাবি তোলে ধরা হয়। দাবিসমূহ হলো:

(১). বাংলাদেশকে অবিলম্বে ‘জাতিসংঘ নদীধারা সনদ, ১৯৯৭’ অনুস্বাক্ষর এবং সংসদে অনুসমর্থন করতে হবে,
(২). ভারতের সঙ্গে পানি বণ্টন সংক্রান্ত আলোচনায় নিরপেক্ষ তৃতীয় পক্ষের ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে এবং
(৩). অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনে একমাত্র আন্তর্জাতিক চুক্তি কার্যকরের ঐতিহাসিক দায়িত্ব বাংলাদেশকেই পালন করতে হবে।

উল্লেখ্য, ১৯৭০ সালে জাতিসংঘ এ চুক্তির জন্য আলাপ-আলোচনা শুরু হওয়ার পর ১৯৯৭ সালে এই সনদ চূড়ান্ত করা হয়। ভারত ও চীন এই সনদে স্বাক্ষর না দিয়ে প্রকাশ্য বিরোধিতা করছে। এদিকে গত ২৫ ফেব্র“য়ারি আইভরি কোস্ট ৩৪তম দেশ হিসাবে অনুস্বাক্ষর করেছে। বর্তমানে একমাত্র বাংলাদেশ কনভেনশনটিতে স্বাক্ষর দিলে কনভেনশনটি আইনে পরিণত হয়।

১২টি পরিবেশবাদীদের যৌথ সমাবেশে বক্তরা সিন্ধু নদের পানি বণ্টনচুক্তিতে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতার উদাহরণ দিয়ে বলেন, আমরা দেখেছি, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধুনদের পানির বণ্টন চুক্তিতে বিশ^ব্যাংক তৃতীয় পক্ষের ভূমিকায় রয়েছে। দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী ভারতের মধ্যে পানি বণ্টনের আলোচনায় ভারতের বিরোধিতার কারণে কোনো তৃতীয় পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। এ কারণে বাংলাদেশ কখনোই ভারতের কাছ থেকে তার পানির ন্যায্য হিস্যা বুঝে পায়নি।
বক্তারা আরও বলেন, ফারাক্কার মরণ ছোবলে আজ আমাদের অন্যতম প্রধান জীবনপ্রবাহ পদ্মা এখন মৃত্যুমূখী, তার সঙ্গে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সকল নদীই ব্যাপকভাবে সংকটাপন্ন এবং ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত গঙ্গাচুক্তির পরও একদশকের অধিক সময় বাংলাদেশ তার প্রাপ্য পানি পায়নি। ব্রহ্মপুত্র ও সুরমা-কুশিয়ারার উপর ঝুলছে প্রায়-অবশ্যম্ভাবী ভারতীয় আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প ও টিপাইমূখ ড্যাম। আর তিস্তার অবস্থা তথৈবচ, সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গে নির্মিত তিস্তা নেটওয়ার্কের ওপর ভারতীয় ৫০ এর অধিক ড্যাম ও পানি প্রত্যাহার প্রকল্প এমনিতেই বাংলাদেশের জন্য বয়ে আসা ৮০% পানি আটকে দিচ্ছে, আর এবার পশ্চিমবঙ্গের সরকারি সিদ্ধান্তে চলমান স্বল্প পরিমাণ (গড়ে ৫০০০ কিউসেক) পানির সর্বোচ্চ মাত্র ১০% (অর্থাৎ গড় ৫০০ কিউসেক) আমাদের অংশের তিস্তায় প্রবেশ করছে।
বক্তারা জাতিসংঘ নদী কনভেনশনে অনুস্বাক্ষর-সহ অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে সরকারকে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরুর আহ্বান জানান।

যোগাযোগ: কামরুল ইসলাম বাবু
সদস্য সচিব, হাওর অঞ্চলবাসী
ঢাকামুঠোফোন: ০১৭১১-৯৩১৬৬৩