ধানে চিটাগত বছর হাওরাঞ্চলসহ সারা দেশে ব্রিধান-২৮ ও ৫৮  চিটা হয়ে কৃষক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল । ঠান্ডাজনিত কারণে (Cold injuri) ই চিটা হওয়ার মূল কারণ বলে জানা গেছে । হাওর কৃষক ২০১৩ সালে ব্রিধান-২৯ চাষ করেছিল। কিন্ত ধান কাটার শেষের দিকে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারনে বন্যার পানিতে ধান শুকানোর সব জায়গা তলিয়ে যায় এবং পর্যাপ্ত রোদের অভাবে প্রচুর ধান পচে নষ্ট হয়। কৃষক বাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে গত বছর (২০১৪) হাওরবাসি কৃষক সল্পজীবী ব্রিধান-২৮ ও ৫৮ আগাম চাষ করেছিল। আগাম বন্যা হতে রক্ষা পেতে তারা অনেক আগে বীজতলা তেরী এবং চারা রোপন করেছিল বলে জানা যায় । ফল স্বরুপ ধানে চিটা । এ যেন ‘বেচে থাকার জন্য মৃত্যুর দিকে ধাবিত হওয়া’র মতো । শাখের করাতের নীচে হাওর কৃষকের ধান চাষ।

ধান চিটা হবার কারণ সমূহঃ

ব্রিধান-৫৮ এর উদ্ভাবক বিজানী, মূখ্য বৈজানিক কর্মকর্তা (সিএসও) এবং ব্রি কুমিল্লা আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ড তমাল লতা আধিত্য ধান চিটা হবার কারণ সমূহ সম্পর্কে বলেন, ধান চিটা হওয়া থেকে রক্ষা করতে বীজ তলা

  • ব্রিধান ২৮ এর ক্ষেত্র ১৫-৩০ নভেম্বরের মধ্যে;
  • ব্রিধান ২৯ এর ক্ষেত্র ৫-২৫ নভেম্বরের মধ্যে;
  • ব্রিধান ৫৮ এর ক্ষেত্র ২১-৩১ নভেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে ।

এ তারিখ সমুখের আগে ধানের বীজ তলায় বীজ ফেলা হলে ধান চিটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। এ তারিখগুলোর মধ্যেই বীজ তলা সম্পন্ন করতে হবে, কারণ ‘কাইচ থোড়’ আসার সময় কম তাপমাত্রার আঘাত হতে ধান গাছকে রক্ষা করার জন্য তা করতে হবে ।

‘কাইচ থোড়’ আসার সময় যদি দিনের তাপমাত্রা ১৭-১৮ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড এবং রাতের তাপমাত্রা ১২-১৩ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড এর নীচে থাকে; তবে ধান চিটা হবেই । ‘কাইচ থোড়’কে ঠান্ডা জনিত আঘাতের সময়টিকে পাস কাটানো বা রক্ষা পেতে উপরে উল্লেখিত তারিখের মধ্যে বীজ তলা শেষ করতে হবে । তাছাড়া, শৈত্য প্রবাহ, ঝড়ো হাওয়া, খরা (milking stage) এবং অতিরিক্ত তাপমাত্রা (৩৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড এর বেশী) হলেও ধান চিটা হতে পারে ।

ড তমাল লতা আধিত্য আরো বলেন, ব্রিধান ৫৮ এর ৪০-৬০ দিনের চারা রোপন করলেও ফলনের কোন তারতম্য হবে না ।  হাওরে আরেক বড় সমস্যা হল- ধান রোপন, কাটা, পরিবহন ও মাড়াই করা । এখন মেঠু পথে না চলে ট্রলি (গরু / মহিষের গাড়ী বিরল), না নদীতে নৌকা । ভয়বহ সংকট । শ্রমিক সংকটও, বড় সমস্যা।

হাওরে ধানের বীজ তলা তৈরী, উত্তলন, রোপন, আগাছা নিধন করা হয় নগদ টাকার বিনিময়ে । সেচ, ধান কাটা, পরিবহণ ও মাড়াই করা হয়, উতপাদিত ধানের নির্দিষ্ট অংশ প্রদাণের মাধ্যমে । নগদ টাকা সংগ্রহ হয়-দাদন হিসাবে । শেষে হাওর কৃষকের ঘরে থাকে যতসামাণ্য। নদী খনন হয়নি, বন্যা প্রলম্বিতকারি বাধে কাজ হয়নি ।

ড নিয়াজ পাশা এ অবস্থায় হাওরবাসি কৃষক কে ভাড়ায় দ্রুত ধান রোপন যন্ত্র- রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, ধান কাটার কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ও রিপার দিয়ে কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো এবং ক্ষতি গ্রস্ত কৃষক কে সহায়তা প্রদাণের আহবান জানান ।  অন্যথায়, একমাত্র বোরো ধান আগাম বন্যার পানিতে তলিয়ে যাবার শংকা থেকেই যাবে । মান সম্পন্ন বীজ প্রাপ্তিও নিশ্চিত করতে হবে। সে সাথে কৃষি প্রকৌশলী ড নিয়াজ পাশা আরও বলেন, আমরা বার বার বলে এসেছি,  হাওরের জলবায়ূ, পরিবেশ এবং ফসল নিয়ে গবেষণা করে হাওর কৃষক কে বীজ তলা তৈরীর সুনির্দিষ্ট তারিখ এবং বিভিন্ন ফসলের উতপাদন প্রযুক্তি  উদ্ভাবণ করতে হবে। ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে যে, উক্ত তারিখের আগে বীজ তলা করা হলে ধান চিটা হয়ে যাবে । বীজ তলা করার মৌসুমের আগে ঐ তারিখগুলো ভাল ভাবে প্রচার করতে হবে। এখনই মোটিভেশনের উপযুক্ত সময়। তারিখটি এমন হবে যেন আগাম বন্যা আসার আগেই ধান কেটে ঘরে তুলতে পারে।

ড নিয়াজ পাশা আরো বলেন, আমাদের দাবী বাকৃবি’তে ‘হাওর কৃষি গবেষণা এবং উন্নয়ন ইন্সটিটিউট’ এবং BARI‘র হাওরে আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র’ স্থাপনের যুক্তিকথা প্রমাণিত হলো । তিনি দ্রুত উক্ত দু’টো প্রতিষ্ঠানসহ ‘হাওর মতস্য গবেষণা কেন্দ্র’ স্থাপনের জোর আবেদন জানান । ‘হাওর বাচলে দেশ বাচবে’। আসুন, হাওরের সম্পদ ব্যবহার করে নিজেরা বাঁচি , দেশকে বাঁচায় ।