আমাদের কৃষ্ঠি কৃষি; কালচার এগ্রিকালচার, অস্থিত্বের; বাংলাদেশ একটি অমিত সম্ভাবনাময় কৃষি প্রধান দেশ। শিকড়। মোট জনসংখ্যার ৬৬% লোক কৃষির সাথে জড়িত এবং জাতীয় আয়ের প্রায় ২০% আসে কৃষি খাত থেকে। স্বাধীনতার সময় আমাদের লোক সংখ্যা ছিল ৭.৫ কোটি, খাদ্য উৎপাদন ছিল মাত্র এক কোট মেট্রিক টন। বর্তমানে লোক সংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। মানুষ বেড়েছে দুই গুণ কিন্তু খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে প্রায় সাড়ে তিন গুণ। কৃষি, মৎস্য, পোল্ট্রি, ডেইরী ক্ষেত্রেও আমাদের অর্জন ঈর্ষণীয়। তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে আমরা খাদ্যে ঝুড়ি উপচিয়ে পরা দেশে; প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণের দ্বার প্রান্তে।

agro-full

প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে উন্নত ফসলের জাত, GM অর্গানিজম, সেচ ব্যবস্থা, আবহাওয়া, সবই কৃষি উৎপাদনের মূল ফ্যাক্টর। সারা পৃথিবীতে জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের সাথে কৃষি উৎপাদনের অন্যান্য ফ্যাক্টরগুলোও পরিবর্তনশীল; মানুষের জন্য হুমকি। তাপমাত্রার পরিবর্তনে শস্যের জীবনকাল বা বৃদ্ধিকে সরাসরি প্রভাবিত করে। পানির অভার, নতুন/ পরিবর্তনীয় পোকামাকড়-রোগবালাইয়ের কারণে শস্য উৎপাদন অনেকাংশে কমে যাবে। ফলস্রুতিতে বিশ্বব্যাপী দেখা দেবে খাদ্যাভাব। কৃষি বলতে এখানে আমরা কৃষি, মৎস্য, শাক-সব্জি, পশুসম্পদ, পোল্টি, বন, ইত্যাদিকে বুঝবো।

বংলাদেশ বিশ্বে জনসংখ্যায় ৮ম এবং আয়তনে ৯৪তম দেশ। প্রতি বছর প্রায় ২ মিলিয়ন লোক আমাদের জনসংখ্যার সাথে যুক্ত্ হচ্ছে এবং শিল্প-কারখানা, নতুন আবাসনে ০১% হারে ফসলী জমি কমছে। ২০৫০ সালে জনসংখ্যা হবে ৩২ কোটি। এমতাবস্থায়, কম জমি হতে সর্বোচ্চ ফলন পেতে হবে। পরিবর্তন হচ্ছে প্রতিনিয়ত আমাদের পরিবেশ-প্রতিবেশের এবং খাদ্যাভাসেরও। অযাযিতভাবে সার, কীটনাশক ব্যবহারে মাটির উর্বরা শক্তি কমে পরিবেশ দুষিত হয়ে ”অধিক খাদ্য ফলাও” কর্মসূচী হয়েছে ”বেঁচে থাকার জন্য মৃত্যুর দিকে ধাবিত হওয়া”সম। জলবায়ু জনিত পরিবর্তনে মাটির ক্ষয় বৃদ্ধি, খরা, বন্যা, লবনাক্ততা, নদী ভাঙ্গন, বনের পরিমান কমে যাচ্ছে। উজানে পানি প্রত্যাহারের কারনে, ভাটিতে, বাংলাদেশে মিঠা পানির পরিমাণ কমে দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং প্রাণী-সম্পদ, মাছ ও জলজ প্রাণীর উপর বিরূপ প্রভাবে স্বাভাবিক ’খাদ্য চক্র’ ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম। নদী ভরাট হয়ে নৌ-চলাচলে ব্যাঘ্যাত ঘটছে। নীচে নেমে যাচ্ছে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর। স্বাভাবিক শস্য বিন্যাস, পরিচর্যা, চাষ পদ্ধতি ও সময়ের পরিবর্তন হচ্ছে। জীব জগতের অভিযোজন, কর্ম ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে রোগ-বালাই বৃদ্ধি পাবে। দুর্যোগের পরিমাণ বেড়ে ফসল ও জীবনহানিতে অসহায়-সম্বলহীন হয়ে পরছে অসংখ্য মানুষ। প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ এবং আয় কমে দারিদ্রতা দূরীকরণ কার্যক্রম দীর্ঘায়িত হবে। সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। আশংকা হচেছ, দেশের আয়তনের এক দশমাংশ জায়গা পানির নীচে চলে যাবে। ফলে জমি-ফলন কমে, সুপেয়-পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হবে। ভাটির দেশ হিসাবে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবে। জীবন, জীবিকা, কৃষি, স্বাস্থ্য সেবা ইত্যাদি চরম হুমকির মুখে পরবে। পুষ্টিকর, নিরাপদ ও সুষম খাদ্য প্রাপ্তি আজ বহুমূখী চ্যালেঞ্জর মুখোমুখি। এ অবস্থায় খাদ্য নিরাপত্তার জন্য দরকার পরিবর্তনশীল জলবায়ুর অভিঘাত সহনশীল ফসলের নতুন জাত এবং সর্বোচ্চ ফলনশীলতার জন্য চাষাবাদ প্রযুক্তি। কৃষকের কাছে নতুন এ জাত এবং প্রযুক্তি যথাযথ ও সঠিক সময়ে দ্রুত পৌছাঁতে দরকার তথ্য প্রাপ্তির সকল চ্যানেলের সমন্বিত ক্যাম্পেইন।

জাত, জমি, জলবায়ু ও যত্ন; এই চারে মিলে হয়-রত্ন। বর্তমানে আর একটি নতুন উপকরণ যোগ করতে হবে। তা হচ্ছে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, অন্য চারটি উপকরণের কার্যকর বৃদ্ধিকারক উপাদান- তথ্য প্রযুক্তি। সমন্বিত কৃষি তথ্য প্রযুক্তিতে কৃষকের নিজের সিদ্ধান্ত এবং নীতি নির্ধারণে অংশ গ্রহণ; উৎপাদন বান্ধব পরিবেশ ও কর্মসংস্থার সৃষ্টি, আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজার খুঁজা, যোগাযোগ ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে। সব চ্যানেলের মাধ্যমে কৃষির সকল প্রকার প্রযুক্তির তথ্য একত্রে সন্নিবেশিত করাকে সমন্বিত তথ্য প্রযুক্তি বলব। তথ্য প্রযুক্তি কৃষকের ’ঠকানোর দিন শেষ, বঞ্চনার দিন খতম’ করবে।

তলোয়ারের জোরে বীর সাজার দিন শেষ। এখন যুদ্ধ ক্ষুধা, দারিদ্র ও যুদ্ধ-মুক্ত সুন্দর পৃথিবীর জন্য-প্রযুক্তির। কৃষির সমন্বিত তথ্য প্রযুক্তি কৃষি উপকরণ প্রয়োগের সঠিক নির্দেশণা দেবে। সামনে ডানে মোড়, সাবধানে চলুন! পথ চলায় এ রকম সর্তক বাণীর সাথে আমরা অতি পরিচিত। সমস্যা/বিপদ, জানতে পারলে মানুষ সর্তক হয়ে পথ চলে। তেমনি জ্ঞান ভিত্তিক প্রযুক্তির পূর্বাভাস ভবিষ্যত কৃষির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে অনেক ভ্রান্তি, ঝুকি ও অতিরিক্ত ব্যয় এড়িয়ে অধিক উৎপাদন সম্ভব হবে। তথ্য প্রযুক্তি কৃষি উৎপাদন প্রক্রিয়াকে সহজতর, শ্রমকে লাঘব, উৎপাদন ব্যয় ও ক্ষতি কমিয়ে মানসম্পন্ন ফলন বাড়াবে। তথ্য প্রযুক্তি কৃষক, সম্প্রসারণ এজেন্ট এবং গবেষকের মাঝে আন্তঃযোগাযোগ দ্রুত ও সহজতর করবে। সৎ পরামর্শ হাজার টাকার চেয়েও মহা-মূল্যবান। সময়ের এক ফোড়ন; অসময়ের হাজার চেষ্টা সমান। প্রত্যেকটা প্রাইভেট বা পাবলিক জনসভার শুরুতে বাধ্যতামূলকভাবে একটি কৃষি তথ্য প্রচারের ব্যবস্থাও নিতে হবে।onestop3

জ্ঞানাহরণ কেন্দ্র:
পরিবর্তনশীল জলবায়ু এবং ক্রম বর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে খাদ্য নিরাপত্তা সহ বিভিন্ন মূখী চাপ মোকাবেলায় কৃষির দ্রুত উন্নতি ঘটাতে হবে। এজন্য প্রয়োজন পরিবেশ বান্ধব জাত, তথ্য নির্ভর কৃষি-প্রযুক্তির সমন্বিত প্রয়োগ, প্রাপ্যতা One Stop Centre একত্রে সন্নিবেশিত করে আয়ত্বের মধ্যে রাখা অর্থাৎ কৃষি প্রযুক্তির একটি তথ্য ভান্ডার গড়ে তোলা। সকল শ্রেণীর মানুষের অবাধে প্রবেশাধিকার প্রাপ্ত এ স্থানটিকে আমরা ’জ্ঞানাহরণ কেন্দ্র’ বলে ডাকবো। তথ্য প্রাপ্তির প্রচলিত ও আধুনিক সকল মাধ্যমের সংযোগ এ কেন্দ্রে থাকবে। সাধারণ ডাক ব্যবস্থাও কাজে লাগানো হবে। ডিজিটাল ও নন-ডিজিটাল কৃষি প্রযুক্তি: জলে, স্থলে ও অন্তরীক্ষ্যে ভাসমান বা বিরাজমান সকল তথ্য প্রযুক্তির ল্যান্ডিং স্থান হবে প্রস্তাবিত ’জ্ঞানাহরণ কেন্দ্র’। তথ্যের নন-ডিজিটাল ডিভাইস হিসাবে আমরা প্রিন্ট ম্যাটেরিয়াল যথা-বই, লিফলেট, রিপোর্ট, জার্নাল, পত্রিকা, ছবি, অভিজ্ঞতা, প্রদর্শনী, আন্ত:যোাগাযোগ ইত্যাদি এবং তথ্যের ডিজিটাল ডিভাইস হিসাবে রেডিও, টিভি, ফোন, মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ই-মেইল, ফেইসবুক, ক্যামরো, সিডি-ভিসিপি, ভূ-উপগ্রহ, ইত্যাদিকে চিহ্নিত করতে পারি।

কৃষি উৎপাদন প্রযুক্তির প্যাকেজ, উপকরণের প্রাপ্যতা, মূল্য, পণ্যের বাজারের ’তথ্য বাণিজ্য কেন্দ্র’ হবে ’জ্ঞানাহরণ কেন্দ্র’। ফিড ব্যাক দিবে, আর নেবে নতুন প্রযুক্তি, মিলাবে আর মিলিবে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে। এলাকার মধ্যস্থল এবং মানুষের সহজে চলাচল উপযোগী খোলা মেলা স্থানে ’জ্ঞানাহরণ কেন্দ্র’ টি স্থাপন এবং সহজে চিহ্ণিতকরণে এটিকে সবুজ রঙে রাঙায়িত করা হবে।

সারা দেশে প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপিত ’ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্র’কে ’জ্ঞানাহরণ কেন্দ্র’ রূপান্তর করা যেতে পারে। তাছাড়া দেশে ১৪ হাজার ৫৬০ কৃষি ব্লকে একজন করে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আছেন। এসব কর্মকর্তাদের ’জ্ঞানাহরণ কেন্দ্র’ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। NGO’র অফিসগুলোকেও এ ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যাবে। আগামীাদনের কৃষির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তথ্য প্রযুক্তির দক্ষ মানব সম্পদও তৈরী করতে হবে।

জ্ঞানাহরণ কেন্দ্রের কার্যক্রম:
ভিডিও, সিডি, টিভি ইত্যাদি প্রদর্শন  জ্ঞানাহরণ কেন্দ্র কে বহুমূখী কাজে ব্যবহার করা হবে। ট্রেডিশনাল ও আধুনিত তথ্য প্রযুক্তির সকল মাধ্যমের সাথে এর সংশ্রব থাকবে। কৃষকের চাহিদা ও প্রয়োজন মতো বিষয় ও Zone ভিত্তিক তথ্য উপাত্ত সরবরাহ করা হবে। ’জ্ঞানাহরণ কেন্দ্র’ তে কৃষি ভিত্তিক জারি, সারি, লোক নাট্য, সিডি-ডিভিডি, ফিল্ম-স্লাইড এর মাধ্যমে উদ্ধুদ্ধকরণ কর্মসূচীর প্রযুক্তি প্রদর্শিত হবে। অঞ্চল ও মৌসুম ভিত্তিক, প্রধান প্রধান ফসলের, উৎপাদন প্রযুক্তি, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজতকরণ, বাজার-ব্যবস্থপনা, রোগবালাই, বন্ধু পোকা, শত্র“ পোকা চেনা, দমন পদ্ধতি সার ও সেচ ব্যবস্থাপনার বাস্তব চিত্র ভিডিও তে প্রদর্শিত হবে। রোগ-বালাই আর উৎপাদিত পণের পরিবহণ, কর্তন, সঠিকভাবে ঝাড়াই, মাড়াই, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের অভাবে যে ক্ষতি হয়, তার পরিমাণ অনেক; দেশের সব মানুষের কয়েক মাসের খাদ্যের সমান। ফলে কৃষক দেখে, শুনে ও বুঝে কর্মপন্থা গ্রহণ করতে স্বাচন্দ বোধ করবে। স্থানীয় ভাষায়, সহজ সরলভাবে, বোধগম্য করে কেন্দ্রীয়ভাবে এগুলো নির্মিত ও বিতরণ হবে।

জ্ঞানাহরণ কেন্দ্রের কম্পিউটারটি ব্যবহৃত হবে বহুমাত্রিক কাজে। ইন্টারনেট সংযুক্তি, ঐ সিডি-ডিভিডি প্রদর্শণ, সংরক্ষণ ও স্বাভাবিক কাজ করা যাবে কম্পিউটারের মাধ্যমে। এখন প্রায় বাড়িতেই কম্পিউটার রয়েছে। আগ্রহীদের মাঝে এ গুলো সরবরাহও করা যেতে পারে। বার বার সুক্ষèভাবে দেখে বুঝতে পারবেন। শিক্ষিত ও অশিক্ষিত সকল শ্রেণীর মানুষের জন্য এটি একটি উত্তম মাধ্যম। টিভি’র কৃষি ও শিক্ষা মূলক অনুষ্ঠানও প্রদর্শন করা যাবে কম্পিউটার দ্ধারা। ICT lab and call centre হিসাবে বা ভিডিও কসফারেন্সের মাধ্যমে পরামর্শও নেয়া যাবে।

প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ সভা স্থল:
কৃষি ’জ্ঞানাহরণ কেন্দ্র’ কে প্রশিক্ষণ স্থল, কৃষি বিষয়ক পরামর্শ সভা, সমাবেশের কাজে ব্যবহার এবং নিয়মিত কৃষি তথ্য প্রযুক্তি মেলার আয়োজন হবে। স্থায়ী প্রযুক্তি প্রদর্শণী গ্যালরীও থাকতে পারে। গবেষক, সম্প্রসারণ কর্মী, নীতি নির্ধারক ও কৃষক একত্রে মিলিত হয়ে মতবিনিময় করবে। সফল কৃষক ও কৃষি বিষেজ্ঞগণও এতে অংশ নেবে। এতে তথ্য বিকৃতি এবং Yield gap কমে আসবে। মহিলাদের জন্যও নির্দিষ্ট দিনে পৃথক প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে। নতুন তথ্য, উপাত্তের সংবাদ, পরামর্শ, সার, বীজ, কীটনাশক প্রাপ্তির সংবাদ নোটিশ আকারে টাঙ্গানো থাকবে।

সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে ডাক্তারদের মতো পালাক্রমে কৃষি, মৎস্য, পশু সম্পদ বিশেষজ্ঞ/কৃষি ডাক্তারগণ ’ক্লিনিক’ হিসাবে এখানে বসে কৃষি চিকিৎসা সেবা/পরামর্শ দেবেন। তাঁদের এপ্রোণ হবে সবুজ রঙের। জ্ঞানাহরণ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হবে। আনন্দ-বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষার মিলনস্থল এবং কৃষি তথ্য প্রাপ্তির ঠিকানা হবে এটি।

কৃষি পাঠাগার:  বই হচ্ছে জ্ঞানের ধারক ও বাহক। ’জ্ঞানাহরণ কেন্দ্র’ টিকে একটি মিনি ’কৃষি পাঠাগার’ হিসাবেও ব্যবহার করা যাবে। এক পাশে বুক সেল্ফে বিষয় ভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ ফসল, মৎস্য, পশু সম্পদ, সার সুপরিশশালা, ভূমির ব্যবহর, শষ্য জোনিং, কালার লিফলেট চার্ট,কৃষি পত্রিকা এ জাতীয় বইগুলো থেকে কৃষক প্রয়োজনীয় পরামর্শ নেবে। অনেক বার, অনেক দিন, অনেক মানুষ এগুলো কার্যকরীভাবে ব্যবহার করতে পারবেন। ব্যয়ও হবে কম ।

একজন কৃষি কর্মকর্তা ও সম্প্রসারণ কর্মীকে কৃষির সব বিষয় নিয়ে কাজ করতে হয়। এমনকি তাঁর অধিত বিষয়ের বাইরেও তাঁকে সব কিছু মোকাবেলা করতে হচ্ছে। কোন বিষয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হলে এক মুহূর্তেই এ পাঠাগারটিকে রেফারেন্স হিসাবেও ব্যবহার করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে।

আমাদের প্রায় প্রত্যেক ঘরে কিছু ধর্মীয় বই অত্যন্ত আদবের সাথে সংরক্ষণ করা হয়। এর সাথে কিছু কৃষি সংত্রান্ত বই রাখতে উৎসাহিত করা যেতে পারে। যা কৃষকদের প্রয়োজনে পরামর্শের যোগান দেবে। নিজেরা তা অদল-বদলও করতে পারবেন। জেলা-উপজেলার সাধারণ পাঠাগারেরও ’কৃষি পাঠাগার কর্ণার’ স্থাপন করা যাবে।

প্রযুক্তির উৎসস্থল কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সমূহ উদ্ভাবিত প্রযুক্তি, জাত ও সফলতার কথা প্রচারে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। ব্যক্তি/বিচ্ছিন্নভাবে বিতরণ করা হয় বলে তেমনভাবে সংরক্ষিত হয় না। কৃষি পাঠাগারে এগুলো অধিকতর সুসংহত ও সুরক্ষিত থাকবে। Research without extension is a folly; Extension without research is a hobby. প্রত্যেকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একটি Out let থাকবে। যাঁরা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য থাকবেন। কেন্দ্রীয়ভাবে একটি কমিটির মাধ্যমে মূল্যায়িত এবং চাহিদা নিরূপণ করে সকল প্রকাশনা প্রকাশিত ও বিতরণ করা হবে। ব্যক্তিগতভাবেও প্রযুক্তির তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা যাবে।

সরকার প্রায় ৪৩.৩ মিলিয়ন পাঠ্য বই স্কুল শিক্ষার্থীর মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। কৃষি ক্ষেত্রেও এমন একটি যুগান্তরকারী সিদ্ধান্ত আমাদের কৃষির চিত্র আমূল পাল্টিয়ে দেবে। এ কার্যকরী বিনিয়োগে রিটার্ণ হবে বহুমূখী, বহু গুণে, সুদূর প্রসারি। কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টির জন্য বিষয়ভিত্তিক ’বই-পড়া’, ’কুইজ’ বা রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। সুশিক্ষত মানুষ মানেই স্ব-শিক্ষিত। জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে এ কেন্দ্রের ভূমিকা হবে অনন্য।

কমিউনিটি ও ইন্টারনেট রেডিও এবং কৃষি টিভি চ্যানেল :
দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্থাপন এবং সার্বক্ষণিক প্রচারে সক্ষম পূর্ণাঙ্গ একটি ’কৃষি বিষয়ক টিভি’ চ্যানেল চালু কর অপরিহার্য। একটি কৃষি টিভি-ই কৃষকের তথ্য প্রযুক্তির চাহিদার শতভাগ পূরণ অর্থাৎ Soil to Dining Table নিয়ে আসবে। প্রিন্টার, স্কেন মেশিন, ফটোকপিয়ার, ক্যামেরা, ফোন, মোবাইল, মাইক দিয়ে সজ্জিত করা হবে। থাকবে সচিত্র পোস্টার। প্রজেক্টার ও স্কিনও থাকতে পারে। ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রের যাবতীয় কার্যাদিও এখানে সম্পাদিত হবে; পরিণত হবে একটি জমজমাট স্থানে।

ইন্টারনেট সংযুক্তি:
কাজী নজরুল ইসলাম স্বপ্ন দেখেছিলেন, ’বিশ্ব জগত দেখবো আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে’। ইন্টারনেট প্রযুক্তির মাধ্যমে সে স্বপ্ন বাস্থবায়িত হয়েছে। কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযুক্তি মাউশের মাধ্যমে সারা পৃথিবীকে হাতের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। ইন্টারনেটে সব বিষয় আছে। বিদ্যুত, ব্যাটারী বা সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে শহর বা দুর্গম যে কোন জায়গায় অতি সহজেই সংযোগ সম্ভব। এক সময় হয়তো দুনিয়ার সব তথ্য আকাশে, শুণ্যে ভেসে বেড়াবে। মোবাইলের মাধ্যমে তা হাতে হাতে পৌঁছেছে। থ্রি-জি, ফোর-জি, স্মার্ট-ফোন দ্বারা অনেক কিছুই করা সম্ভব। দেশে ৯৭% লোক মোবাইল ব্যবহার করে। কৃষি তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎপাদন বাড়ে এবং GDP বৃদ্ধি পায়। সময় সময় আপডেট দিতে হবে। বাংলা Digital library  – Website হতে শুধু প্রয়োজন মতো ডাউনলোড করে তথ্য সিডি, প্রিন্ট বা অন্যত্র সংরক্ষণ করে বার বার ব্যবহার বা অদল বদল করতে পারবে।

দ্রুত তথ্য আদান প্রদাণ, সংরক্ষণ, এসএমএস, এমএমএস করা, ছবি তোলা, ভিডিও কনফারেন্স, ই-মেইল, ফেইস বুকের মাধ্যমে কৃষি বিষয়ক পরামর্শ গ্রহণ, ব্যাংকিং কার্যক্রমে কৃষি-ঋণ, পণ্যের মূল্য ঝাচাই, পরিশোধে মোবাইল ও ইন্টারনেট প্রযুক্তি হবে সহজতর মাধ্যম। Text, video, Animation & Audio সংমিশ্রণে বার্তা দেয়া যাবে। আমার স্বপ্ন, এ কেন্দ্রে এমন একটি ডিভাইস থাকবে যাতে, সংরক্ষিত ফসলের ছবি ও বৈশিষ্ঠ্যের সাথে কৃষকের আক্রান্ত ফসলের ছবি ও বৈশিষ্ঠ্য মিলিয়ে সমাধান পাবে। ইন্টারনেটের স্পিড বাড়ানো, সাশ্রুয়ী বা ফ্রি সংযোগ থাকতে হবে। আগামীতে বাংলাদেশ কৃষিতে নেতৃত্ব দিবে।

কাঙ্খিত জাত উদ্ভাবন:
আন্তজার্তিক জীব বিজ্ঞান তথ্য কেন্দ্রের সহযোগিতায় আমাদের বিজ্ঞানীগণ জিন, জিনোম, জেনেটিক ম্যাপ, ডিএন ইত্যাদি তথ্য ভান্ডার ব্যবহার করে উন্নত ও কাঙ্খিত ফসল ও জীব জন্তুর জাত উদ্ভাবন করতে পারবে।

GPS and GIS ব্যবহার:
GPS and GIS ব্যবহার করে সার্ভারে সংরক্ষিত কৃষি, মাটি, মাটির মানচিত্র, আবহাওয়া তথ্য, কীট ও কীটনাশকের ডাটা কাজে লাগিয়ে ফসল ব্যবস্থাপনার সকল পুর্বাভাস ও নির্দেশণা দেবে ইন্টারনেটে সংযুক্ত বিভিন্ন softwear Modelling পুর্বাভাস অনুযায়ী কৃষি উৎপাদন পরিকল্পনা, চাহিদা, ক্রপস জোনিং এবং লাভজনক বিভিন্ন ফসলের চাষাধীন জমির পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। সরকারি খাদ্যনীতি- গোদামে খাদ্য মজুদ বা খালাস কার্যক্রমও এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে। Remote sencing Agriculture, Real time alarming system; Automation or Precision Agriculture এর মাধ্যমে একটি সুনিয়ন্ত্রিত ও সাশ্রয়ী Complete Production Pakage উপহার দেবে। Model এ স্থানীয়-মাঠ পর্যায়ের Data ব্যবহৃত হবে। জ্ঞানাহরণ কেন্দ্রের সাথে উপজেলা, জেলা, কেন্দ্রীয় কমিটি/ Webmaster/Research Institutes এর সাথে যোগাযোগ/তথ্য আদান-প্রদাণ হবে।

দ্রোণ, সেটেলাইট, হেলিক্যাপ্টার প্রযুক্তি ব্যবহৃত হতে পারে মাঠের কৃষির তথ্য আহরণ ও প্রেরণে। BRRI ’ম্যানেজার ফর রাইস’ Model ইতিমধ্যেই উদাহরণ সুষ্টি করেছে। Group Networking হবে। সরকারি, বেসরকারি পৃষ্টপোষকতা ও বিনিয়োগ দরকার। সব কিছুকে ই-কৃষিতে রূপান্তর করে সর্বত্র তথ্যের আবহ সুষ্টি করা হবে। প্রস্তাবিত ”জ্ঞানাহরণ কেন্দ্রে” সব মাধ্যমেরই তথ্য অর্থাৎ এক ছাতার নীচে প্রাপ্তি এবং যার যেভাবে সুবিধা নেয়ার নিশ্চয়তা থাকবে। ’জ্ঞানই শক্তি’র মাধ্যমে পরিবর্তনশীল কৃষির চ্যালেজ্ঞ মোকাবেলায় কৃষককে সক্ষম করে গড়ে তোলাই হবে অন্যতম পদক্ষেপ।

কৃষি প্রকৌশলী, কৃষি সাংবাদিক ও হাওর ভূমিপুত্র
ফোন -০১৭২৭ ০৭৪ ৫৮৪