উপেন্দ্র কিশোর রায়চৌধুরী এর জন্ম ১৮৬৩ সালের ১০ই মে, বাংলা ১২৭০ শে বৈশাখে কিশোরগঞ্জ জেলার  কটিয়াদী উপজেলার  সমূয়া গ্রামের বনেদি রায় পরিবারে। বাবা কালীনাথ রায় তাঁর পাণ্ডিত্যের জন্য পরিচিত ছিলেন মুন্সী শ্যামসুন্দর নামে। তাঁরই দ্বিতীয় পুত্র ছিলেন কামদারঞ্জন। এই পরিবারের আর এক শাখার নিঃসন্তান জমিদার হরিকিশোর রায়চৌধুরী দত্তক নিলেন তাঁর নিকট আত্মীয়ের চার কি পাঁচ বছরের এই রূপবান সুন্দর ছেলেটিকে। বাড়ি বদলের ফলে নামবদল – কামদারঞ্জন রায় হয়ে গেলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী।

পড়ুয়া ছেলে না হয়েও ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় বৃত্তি পেয়ে পাস করলেন উপেন্দ্রকিশোর। এরপর কলকাতা এলেন প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়তে। নিভৃত মফস্বল থেকে এলেন এক বিশাল সম্ভাবনার জগতে। যোগাযোগ ও যাতায়াত ঘটল জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে। সেখানকার ও সঙ্গীতচর্চায় অনুপ্রাণিত হলে উপেন্দ্রকিশোর। ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত ‘বালক’, শিবনাথ শাস্ত্রী সম্পাদিত ‘মুকুল’ প্রভৃতি ছোটদের কাগজ তাঁকে উদ্বুদ্ধ করল শিশুসাহিত্য সৃষ্টিতে। নতুন জন্ম নিলেন ছোটদের প্রাণের লেখক, মনের লেখক অদ্বিতীয় উপেন্দ্রকিশোর!

তখনই আলাপ তাঁর চেয়ে দু’বছরের বড় সদ্য-তরুণ রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে। আলাপ থেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব। সে বন্ধুত্ব আমৃত্যু অটুট ছিল।

১৯১৩ সালের এপ্রিল, অর্থাৎ বাংলা ১৩২০ সনের বৈশাখ থেকে প্রকাশিত হতে লাগল শিশুসাহিত্যের কিংবদন্তীতুল্য পত্রিকা ‘সন্দেশ’। সম্পাদক, প্রকাশক, মুদ্রক, লেখক ও চিত্রকর স্বয়ং উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী।

শুধু নিজেই লিখলেন না, ‘সন্দেশ’ পত্রিকা ঘিরে তৈরি করলেন ছোটদের নতুন ধারার নতুন লেখক-গোষ্ঠী। উপেন্দ্রকিশোরের প্রেরণায় সেকালের অনেক খ্যাতনামা লেখক লেখিকা যেমন কলম ধরলেন ছোটদের জন্য, তেমনি তাঁর পরিবারের লোকজনও। ঠাকুর পরিবারের মতো এই আর এক অবাক-করা গুণী পরিবার! বড়ো ছেলে সুকুমার তো সবার সেরা, তাঁর সঙ্গে আছেন মেয়ে সুখলতা, পুণ্যলথা। ছেলে সুবিনয়, সুবিমল। ছোটভাই কুলদারঞ্জন, প্রমদারঞ্জন। সে এক জমজমাট লেখক পরিবার, যার ধারা বাংলা শিশুসাহিত্যের পরবর্তী পর্যায়কে আজও সমৃদ্ধ করে চলেছে।

১৯১৫ সালের ২০শে ডিসেম্বর। সুন্দর স্বাস্থ্যের অধিকারী উপেন্দ্রকিশোর ডায়াবেটিস রোগে ভুগে মারা যান মাত্র ৫২ বছর বয়সে।

উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর সাহিত্য পড়তে –

টুনটুনির বই
গল্পমালা
পুরাণের গল্প