কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলাটির আয়তন ২০০.৫২বর্গ কি.মি.যার উত্তরে তারাইল  উপজেলা, দক্ষিনে নিকলী এবং কটিয়াদী উপজেলা;পূর্বে ইটনা ও মিঠামাইন উপজেলা আর পশ্চিমে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা।

প্রধান নদী সমূহঃ
নরসুন্দা,বাথাইল,সিংগুয়া,ধানু।প্রধান বিল বালিয়া, নাউলি। বিল বাড়া,উখলা, ছোটাহারিয়া,কোলাই।

করিমগঞ্জ শহরঃ
শহরটির আয়তন ৬.২১বর্গ কিমি,এতে মৌজা আছে ৪ টি। এর লোকসংখা ১৪৪৪০ জন; পুরুষ ৫১.৩৬%,মহিলা ৪৮.৬৪%। জনসংখ্যার ঘনত্ব ২৩২৫/বর্গ কিমি।শহরের স্বাক্ষরতার হার ৩৪.৫%।

প্রশাসনঃ

বর্তমানে করিমগঞ্জ থানা একটি উপজেলা যা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৩২ সালে এবং উপজেলা হয় ১৯৮৫ সালে। এতে ১১টি ইউনিয়ন পরিষদ,৮৫টি মৌজা,১৮৪টি গ্রাম আছে।

প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন ও ভগ্নস্তুপঃ জঙ্গলবাড়ি দুর্গ(ষোড়শ শতাব্দী),ঈসা খান শাহী মসজিদ ষোড়শ শতাব্দী), ঈশা খাঁর প্রাসাদ।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলীঃ
ঈসা খাঁন বার ভূইয়ার প্রধান জঙ্গলবাড়ি ঘেরাও করে এবং দখল করে কচ রাজা লক্ষন হাজো এর কাছ থেকে যে পালিয়ে গিয়েছিল। ঈসা খাঁন  তার দ্বিতীয় রাজধানী এই জঙ্গলবাড়িতে স্থাপন করে ছিলেন।

মুক্তিযুধের স্মৃতিচিন্হ গনকবর ১টি জয়সিন্ধু এর বয়রা গ্রামে।

জনসংখ্যাঃ ২৩৭১৫৫; পরুষ ৪৯.৭৫%, মহিলা ৫০.২৫%; মুসলিম৯৬.৯৪%, হিন্দু ২.৫৫%, বৌদ্ধ০.০৯%, খ্রীষ্টান০.০৯%;অন্যান্য ০.৩৩%।

ধর্মীয় প্রতিস্ঠানঃ মসজিদ ৫৫০টি, মন্দির ৮টি।

স্বাক্ষরতা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানঃ

গড় স্বাক্ষরতা ২০.৩%; পুরুষ ২৫.৩%, মহিলা ১৫.৩%।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানঃ
কলেজ ৩টি, উচ্চ বিদ্যালয় ১৪টি, মাদ্রাসা ১৫টি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮৪টি, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩২টি।স্যাটেলাইট স্কুল ৪টি। উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান জঙ্গলবাড়ি ইংলিশ স্কুল(১৮৬২),গোজাদিয়া আব্দুল হেকিম উচ্চ বিদ্যালয়।

সংবাদপত্র ও বিলুপ্ত  সাময়িকীঃ সুচনা(১৯৮১),স্বাধীন বার্তা(১৯৮৮),ঈসা খাঁ(১৯৮৮-১৯৯১), সাহসের পদবলী(১৯৯২)।

সাংস্কৃতিক সংগঠনঃ

অফিসার্স ক্লাব ৩৯টি, সিনেমা হল ৩টি, নাট্য মঞ্চ১টি, নারী সংগঠন ১টি,থিয়েটার গ্রুপ ১০টি, খেলার মাঠ ২১টি, শিশু পার্ক ১টি।

প্রধান পেশাসমূহঃ

কৃষি ৪২.৩৮%,কৃষি মজদুরি ২৪.৭%,দিনমজুর ২.৭৮%, ব্যবসায় ১২.৯%, মাছ ধরা ১.৫৯%, চাকুরী ২.৮৮%, অন্যান্য১০.৪২%।

জমির ব্যবহার

মোট চাষ উপযোগী জমির পরিমান ১৪৮৭০ হেক্টর,পতিত জমি ২.৯৩ হেক্টর; এক-ফসলী ২২%,দ্বি-ফসলী৫৭%, ত্রিফসলী ২১%। সেচেঁর আওতাভূক্ত চাষের জমি ৮৫%।

জমির মূল্যঃ প্রথম মানের ০.০১ হেক্টর জমির মূল্য প্রায় ২৫০০টাকা।

প্রধান শস্য ধান,পাট,সরিষা, রসুন,বাদাম,পেঁয়াজ,টমেটো,মরিচ।

বিলুপ্ত বা প্রায় বিলুপ্ত শস্য তিল,আঁখ,মটর,আমন ধান।

প্রধান ফল আম,কলা,পেঁপে,লিচু,কাল জাম।

মাছ চাষ,পশুপালন,পোল্ট্রিঃ

মাছের খামার ২০টি,পোল্ট্রি ১৫৭টি,পশুর খামার ১৮টি, হ্যাচারী ১টি।

যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ পাঁকা রাস্তা ২১.৪০কিমি,আধাপাঁকা ১.৪০কিমি এবং মাটির রাস্তা ৫২৫কিমি।

ঐতিহ্যবাহী যানবাহন পাল্কি(বিলুপ্ত),গরুর গাড়ি।এই পরিবহন গুলো এখন বিলুপ্ত।

আইসক্রিম ফ্যাক্টরী ৮টি,ওয়েল্ডিং ২৫টি,বেকারী ৩টি,অন্যান্য ছোট ও মাঝারী শিল্পকারখানা ১৩৪টি।

কুটির শিল্পঃতাঁত ৯০টি, বাঁশের কারিগর ২৬০জন, কাঁঠের কাজ ৩৬৪, স্বর্ণকার ১৭৫,কামার ৪০, কুমোর ৩০,দর্জি ৩৩০।

হাট, বাজার,মেলাঃ মোট হাট বাজার ৩২টি,তার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হচ্ছে করিমগঞ্জ,বাবুর হাট ও মুরিকান্ধি।

প্রধান রপ্তানীজাত পণ্য ধান,পাট,সবজি,পেয়াজ,রসুন,মরিচ,সরিষা,কলা,বাঁশ,বোতলজাত পন্য।

এন.জি.ও কার্যক্রমঃ কার্যত গরুত্তপূর্ন এন.জি.ও গুলো হচ্ছে ব্র্যাক, অন্যেশা, গ্রামীন ব্যাংক,BLS,KIDS,SARP, সুরাইয়া মুখ্য মহিলা সমাজ কল্যাণ সংস্থা, RSDP,ORA।

স্বাস্থ্য কেন্দ্রসমূহ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র ১টি,স্যাটলাইট ক্লিনিক ১টি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৭টি।

বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বঃ

ডঃ এম ওসমান গণিঃ বিরল সম্মানের অধিকারী আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন শিক্ষাবিদ ও কৃষি বিজ্ঞানী ড. এম ওসমান গণি ১৯১৩ সালে করিমগঞ্জ উপজেলার গুজাদিয়া ইউনিয়নে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্রালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চ্যান্সেলর, ১৯৬৩ সন হতে ১৯৭০ সন পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, তাঞ্জানিয়ার রাষ্ট্রদূত, ১৯৭৯ সনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অঙশ গ্রহণ করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। হাওড় অঞ্চলে সেচের কাজে পাওয়ার পাম্প প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে কৃষি ক্ষেত্রে বিপ্লবের মাধ্যমে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

এম. সাইদুজ্জামানঃ করিমগঞ্জ উপজেলার ভাটিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি সিভিল সার্ভিসের সদস্য ছিলেন এবং দীর্ঘদিন সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকুরী করেন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৮৪ সনে মূখ্য অর্থ সচিব ও অর্থ উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।

ড. মিজানুল হকঃ করিমগঞ্জ উপজেলার গুজাদিয়া ইউনিয়নের ড. মিজানুল হক বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

ড. মুকন্দ চক্রবর্তীঃ তিনি গুজাদিয়ার রামনগর গ্রামে এক ব্রাহ্মন পরিবারো জন্মগ্রহণ করেন। তিনিই সম্ভবত করিমগঞ্জ উপজেলার প্রথম মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি প্রেম চাদ ও রায় চাদ স্কলারধারী।

ড. আসফাকুস সামাদঃ করিমগঞ্জ উপজেলার সতেরদরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজী সাহিত্যে প্রথম শ্রেণীতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।

সৈয়দ বদর উদ্দিন হোসাইনঃ করিমগঞ্জ উপজেলার জংগলবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এ.এম কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন এবং পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পদে দায়িত্ব পালন করেন।

মুন্সি আজিম উদ্দিনঃ গুজাদিয়া ইউনিয়নে জন্ম গ্রহণ করেন। পীর ও ধর্মীয় সংস্কারক ছিলেন। তিনি পুথি রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি দেহুন্দা ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা হন। তার কর্মজীবন অতিবাহিত হয় দেহুন্দা ইউনিয়নে। বর্তমানে দেহুন্দা ইউনিয়নে তার নামে একটি এতিমখানা আছে।

আতাউস সামাদঃ  আতাউস সামাদ করিমগঞ্জ উপজেলার হাত্রাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দীর্ঘদিনব্যাপী সুনামের সহিত বিবিসি’র সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন করেন।

এ.কে.এম. মনসুরঃ  গুজাদিয়াতে জন্ম। আমেরিকার টেক্সাস এন.এম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এস. ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপূর্ণ পদে আসীন ছিলেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহন করেন।

সামছুল ইসলামঃ গুজাদিয়ার কৃতি সন্তান। তিনি জিকে প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী এবং পরবর্তীতে উক্ত বোর্ডের সদস্য পদে কর্মরত ছিলেন।

মরহুম লেঃ কর্ণেল এ.টি.এম. হায়দারঃ  বীর উত্তম, জয়কা ইউনিয়ন। মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন।

ক্যাপ্টেন ডা: সিতারা বেগমঃ  বীর প্রতীক, জয়কা ইউনিয়ন।

ইলিয়াস কাঞ্চনঃ বিশিষ্ট চিত্র নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন করিমগঞ্জ উপজেলার আশুতিয়াপাড়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি প্রায় আড়াইশতাধিক বাংলা ছায়াছবিতে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি “নিরাপদ সড়ক চাই” আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালন করে জাতীয় পর্যায়ে অবদান রাখছেন।

শামীন আরা নিপাঃ বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নিপা করিমগঞ্জ উপজেলার খামার দেহুন্দা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নৃত্যশিল্পী হিসেবে দেশে ও বিদেশে সুনাম অর্জন করেন। বহু দেশ সফর করেছেন।

রিজিয়া পারভীনঃ করিমগঞ্জ উপজেলার জংগলবাড়ী গ্রামে বিশিস্ট গায়িকা রিরজিয়া পারভীন জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি টি.ভি, রেডিও তে গান পরিবেশন ছাড়াও ছায়াছবিতে অনেক গান করেছেন।

ছাড়াও করিমগঞ্জের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্ব রয়েছেন। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে তাদের নামের তালিকা এখানে অন্তর্ভূক্ত করা হবে।