আমার ফুল ও পাতা দেখে চিনতে পারবেনা, তবে রাস্তের ধারে আমার ক্ষত বিক্ষত দেহ,যার ছাল নির্মম ভাবে কেতে নেওয়া হয়েছে। সেসব দেখে আমাকে শনাক্ত করতে পারবে।আমার নাম অর্জুন।বৈজ্ঞানিক নাম -Terminalia arjuna এরা Combretaceae পরিবার ভূক্ত এর ইংলিশ নাম-Arjuna। প্রশ্ন –তোমরা আমার ছাল এমন নৃশংসভাবে চার দিক থেকে কেটে নাও কেন?জানোনা আমার ছালের মধ্য দিয়েই পাতার তৈরী খাবারের হয় চলাচল।আমার এই চামড়া কাটার জন্যই আমি কয়েক বছরের মধ্যেই শুকিয়ে বিনাশ হয়ে যাই। তাই তোমাদের আমি পাষাণ ছাড়া আর কি বলতে পারি।ভাবছো আমি অচল বলে আমার কোন কষ্ট হয় না। তোমাদের জানা উচিত অনাহারে আমার কতসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দুঃসহ যাতনায় ক্লীব হয়ে যায়।
এসব কথা বলে আমার মনের অশান্তি আর বাড়াতে চাই না। কারণ আমারও আছে এক ঐতিহ্যবাহী ইতিহাস।আমার বৈদিক নাম ছিল ককুভ।
ককুভঃ শুস্মা ঔষধীনাং গাবো গোষ্ঠাদি বেরতে।
ধনং সনিষ্যন্তী নামাত্নান্নগ তব পুরুষ।অর্থাৎ ককুভ (অর্জুন) তোমার শরীর সর্বশরীরের শ্রেষ্ঠ ধন যেবল, তাকেই দান কর।পরে অবশ্য আমার নামকরণ করা হয় অর্জুন। মানে অর্জ+উনন।এই অর্জ অর্থ বল।এই কথাটা বৈদিক শব্দাভিধানে আছে।আসলে আমি তোমাদের হ্রদযন্ত্রে বলদান করে থাকি। সে জন্যই তোমরা নির্মমভাবে আমার ছাল কেটে নিয়ে তার গুঁড়ো থেকে তোমাদের অন্তরে বল দান করে থাকে।নব্যের সমীক্ষায় দেখা যায়,আমার ছাল ও মূলে কয়েক রকমের উপকারী উপাদান আছে, যেমন-অর্জুটিন, অর্জুনেটিন, ট্যানিন ও ল্যাকটনিক দ্রব্য।
বুক ধড়ফরানি, হ্রদযন্ত্রের বেদনায় আমার ছালের রাসায়নিক উপাদান এক মহৌষধ। এইসব উপাদান নাকি হ্রদযন্ত্রের চারপাশের মেদ ও রক্তের কোলেষ্টেরেল কমাতে সাহায্য করে।এ কথা চীনা চিকিৎষকরা বলে থাকেন।ইদানীং ভারতীয় বিজ্ঞানীরাও আমারও আরো এক গুনের কথা উল্লেখ করেন।সেটা হলো যকৃৎ বা লিভারের জটিল রগে বিশেষ করে ক্ষয়রোধে আমার ঔষধ বেশ কার্যকর।আমার আবার অনেক সম্বলকৃত নাম আছে-যেমন-স্মবল, পার্থ, চিত্রবোধী, বৈরান্তক, কিরিটী, সব্যসাচী, কর্ণরি, কুরবিরক, কৌন্তেয়, ইন্দ্রসুনু, বীরন্দ্র, কৃষ্ণসারথি, পৃথাজ, ধন্বী।আমার ছাল কাটার আগে মনে রেখ-গায়ে আঘাত লাগলে তোমাদের মতো আমারও খুব কষ্ট হয়।
লিখেছেন: ডঃ নওয়াজেশ আহমদ