উত্তর-পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এক সুন্দর গ্রাম লুরে। পাহাড়ের উপরে অবস্থিত এই স্থানের বিষেশত্ব হল, এখানে একটি কেইভ আছে যা প্রকৃতির নিজস্ব সৃষ্টি। ১৮৭৮ সাল অর্থাৎ আমেরিকা স্বাধীন হবার ১০০ বছর পরে সিনান্ডো উপত্যকায় এই কেইভটি আবিস্কৃত হয়। দুই মিলিয়নেরও বেশি বয়সের এই কেইভটি মাটির নিচে ২০০ ফুট পর্যন্ত গভীর। একসময় এটি পানি, এসিড দ্বারা পরিপূর্ন ছিল। এখন পুরাটাই ফাকা।
ছাদের উপর থেকে টুপটুপ করে ফোটা ফোটা পানি ঝরে পড়ে। সেই পানিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম-কার্বোনেট যা বাতাসের (কার্বন-ডাই-অস্কাইড) সংস্পর্শে এসে তৈরি হয় লাইম। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে প্রতি মিলি-মিটার লাইম তৈরি হতে সময় লাগে ২৬ বছর। আরও মজার ব্যাপার হল, ছাদ থেকে চুইয়ে পরা পানি নিচে যেমন স্তম্ভ তৈরি করে তেমনি চুইয়ে পড়তে পড়তে সেই পানিও স্তম্ভ তৈরি করতে থাকে। এমনি করে হাজারো বছর পরে এরা একসাথে মিলিত হয়। এর মাঝে শতশত পিলার আছে যার উচ্চতা ২৫ থেকে ৩০ মিটার। কল্পনা করা যায় এর এক একটি তৈরি হতে কত সহস্র বছর লেগেছে!
কিছু কিছু পিলার মাসরুম আকৃতির, কিছু আবার চাঁদরের জালোটের মত দেখতে। প্লোটো নামের একটি গোষ্ট পিলার আছে যাকিনা অস্বাভাবিক মাত্রায় শুভ্র। তাই একে ভূতুরে কলাম বলা হয়।
আমরা জানি লাইম দেখতে সাদা। কিন্তু এই কেইভে ভেরাইটিস কালারের লাইমের দেখা যায়। এর কারন মুলতঃ অপরিষ্কার পানি যাতে কাদামাটি, লোহা-মাটি, তামা মিশ্রিত থাকে। সবচেয়ে মজার দৃশ্য হল একটি স্টোনের উপর ভাজা ডিমের আকৃতি ভাষ্কর্য্য গঠন যা দেখলে মনে হয় কেউ হয়ত ডিমটা ভেজে পাথরের উপর রেখে গেছে। প্রকৃতির মজার খেলা।
কেইভের ভিতরে একদম নিচে ‘ড্রিম’ নামের একটি লেইক আছে। আয়নার মত সচ্ছ পানিতে ছাদের যে প্রতিচ্ছবি দেখা যায় তা স্বপ্ন দৃশ্যের মত লাগে। ইলোশনটা এতটাই প্রবল যে মাত্র ২ ফুট গভীর লেইকেকে মনে হয় উপরের ছাদের প্রতিবিম্বের সমান গভীর।
এছাড়া এখানে রয়েছে গ্রিন – উইস লেইক। কথিত আছে এখানে পয়সা ফেলে মানত করলে মনের বাসনা পূর্ন হয়।
১৮৭৮ সালের ১৩ই অগাষ্ট এনড্রো, তার তের বছর বয়সের ভাতিজা কোয়েন্ট সহ আরো তিনজন মিলে এই কেইভটি আবিস্কার করেন। মাটির নিচ থেকে আতি ঠান্ডা বাতাস (১২-ডিগ্রি সেলসিয়াস) বের হতে দেখে তারা মাটি খোড়া শুরু করে। চার ঘন্টা খোড়াখুড়ির পর তারা একটি সুড়ংগের মত তৈরি করে যার মধ্য দিয়ে এনড্রো ও কোয়েন্টকে (গ্রুপের সবচেয়ে ক্ষুদ্রাকার) দড়িতে ঝুলিয়ে নামিয়ে দেয়া হয়। তাদের হাতে থাকে মোমবাতি। সেই আলোতে তারা প্রথম যে পিলারটি দেখে তার নাম আমেরিকার প্রথম প্রেসিডন্টের নামের অনুকরনে রাখে ওয়াসিংটন স্তম্ভ। অনান্য উল্ল্যেখযোগ্য আবিস্কারের মধ্যে ছিল ৫০০ বছর পুরানো একটি রেডইন্ডিয়ান মেয়ের কংকাল। ধারনা করা হয় কোন একসময় আশেপাশের কোন করব ভেংগে হয়ত কংকালটি এখানে চলে এসেছে। ন্যশনাল মিউজিয়াম অব আমেরিকান হিস্টোরিতে কংকালটি সংরক্ষিত আছে।
কেভটি ঘিরে আরো মজার মজার সব গল্প রয়েছে। যেমন লুরাই কেইভের এই এলাকাটি এনড্রো দুই বছরের মধ্যে কিনে ফেলে। তার আগ পর্যন্ত কেইভ আবিস্কারের কথা সম্পুর্ন গোপন রাখে। তাই জমির মালিক স্যাম ব্রুকার তার বিরুদ্ধে সত্যিকারের জমির মূল্য না প্রদানের জন্য দূর্নিতির মামলা করে। ভার্জিনিয়া সুপ্রিম কোট ১৮৮১ সালে দুইজনেরই জমির মালিকানা বাতিল করে। ১৯০১ সালে কেইভের ঠান্ডা বাতাস (২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পাশেই লিমার সানাটোরিয়ামের রুমে সাপ্লাই দেয়া হয়। এর জন্য সানাটোরিয়ামকে বিল প্রদান করতে হয়। এটাই ছিল আমেরিকার প্রথম শীতাতপ নিয়ন্ত্রন ব্যাবস্থা। ১৮ হাজার নিয়মিত মেম্বার থাকলে প্রতি বছর ৫০০ হাজার লোক এখানে ভ্রমন করতে আসে।
লিখেছেন : পাভেল চৌধুরী
You must log in to post a comment.