ডুবসাঁতার দিতে সে বেশ পটু। তাই জুটেছে নানা নাম—পানডুবি, ডুবুরি, ডুবরি, ডুবলু, ডুবডুবি। ছোট ডুবুরি এর নতুন নাম। একসময় এই পাখিটিকে দেখা যেত দেশের নিরিবিলি জলাশয়গুলোয়। ক্রমাগত জলাশয় দখল আর জলাভূমির বন ধ্বংসের কারণে অনেক পাখিই এখন দুর্লভ হয়ে গেছে। সুন্দর এই ছোট ডুবুরিও নাম লিখিয়েছে দুর্লভদের তালিকায়। এখন কেবল সিলেট বিভাগের কিছু হাওরের বিলে দেখা যায় এদের। পাখিটির ইংরেজি নাম Little Grebe। বৈজ্ঞানিক নাম Tacybaptus ruficollis।

এটি হাঁস আকৃতির লেজহীন ছোট পাখি। দেহের ওপরের বর্ণ গাঢ় পাটকিলে, গলা ও ঘাড়ের দুই পাশ বাদামি। বুকের নরম পালক ধোঁয়াটে সাদা। ডানায় সাদা ছোপ। ওড়ার সময় সেই ছোপটি দেখা যায়। স্ত্রী ও পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। জলাশয়ের ছোট মাছ, ব্যাঙ, ব্যাঙাচি, জলজ পোকামাকড় এদের খাবার।
তবে এরা ডুবুরি হাঁসের মতো দ্রুত উড়তে পারে না। সাঁতার আর ঘন ঘন ডুব দিয়ে চলে এরা। মানুষ দেখলে ভয় পায়। স্রোতহীন ছোট জলাশয়ে নিরিবিলি থাকতে পছন্দ করে। তারা জোড়ায় ও ছোট দলে থাকে। ট্রিলি, ট্রিলি মিষ্টি সুরে ডাকে।

প্রজননের সময় বড় ডোবার কাছে নলবনে ভাসমান বাসা বানায় জলজ ঘাস দিয়ে। বাসা যাতে না ভেসে যায়, সে জন্য জলজ আগাছা দিয়ে বাসাটিকে নলের সঙ্গে বেঁধে নেয়। স্ত্রী পাখি ডিম দেয় চার থেকে ছয়টি। রং সাদাটে। ডিম ফুটে ছানা বের হয় সর্বোচ্চ ২০ দিনে। খাবার খেতে বাইরে গেলে ডিম ঘাস দিয়ে ঢেকে রেখে যায়। ছানাগুলো ডিম ফুটে বের হওয়ার কিছু সময় পরই চটপটে হয়ে ওঠে। মা-পাখি ছানাদের পিঠে নিয়ে হাওরের পানিতে সাঁতরে বেড়ায়। বিপদের আঁচ পেলে এবং মা সংকেত দিলে ছানারা পিঠ থেকে নেমে লুকিয়ে পড়ে জলজ ঝোপে।

লিখেছেনঃ সৌরভ মাহমুদ