মানবজাতি আর এক হাজার বছর টিকে নাও থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। মানবজাতির ভবিষ্যত্ রক্ষায় তিনি মহাবিশ্ব সম্পর্কে কৌতূহলি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। গত রবিবার ৭০ বছরে পা দিয়েছেন এই জীবন্ত কিংবদন্তী। কিন্তু অসুস্থতার জন্য জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত হতে পারেননি। হকিংয়ের ৭০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করার জন্য ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ঐদিন এক সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করে। ‘মহাবিশ্বের অবস্থা’ নামের এই সিম্পোজিয়ামে আলোচনা করার কথা ছিল হকিংয়ের। কিন্তু মাত্র দু’দিন আগে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার কারণে তিনি অনুষ্ঠানে যোগদান করতে পারেননি বলে উপস্থিত অভ্যাগতদের জানান ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক স্যার লেসজেক বরিসিভিচ। তবে অনুষ্ঠানে হকিংয়ের রেকর্ডকৃত একটি ভাষণ শোনানো হয়।

ভাষণের শিরোনাম ছিল, ‘অ্যা ব্রিফ হিস্টোরি অব মাইন (আমার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস)’। এতে মহাবিশ্বের অন্য কোন জায়গায় উপনিবেশ গড়ার আগেই আগামী এক হাজার বছরও হয়তো মানবজাতি টিকে থাকতে পারবে না বলে সতর্কবাণী দেন হকিং। শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার পরও তিনি নিজেকে নিয়ে তার উদ্যম এবং প্রবল উত্সাহের বর্ণনা দেন এবং অন্যদের প্রতিও এরকম অনুপ্রেরণা নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। সেসঙ্গে তিনি সবাইকে ‘কৌতূহলি’ হওয়ারও পরামর্শ দেন। অডিও ভাষণে হকিং বলেন, আকাশের তারাদের দিকে তাকানোর কথা ভাবুন, আপনার পায়ের দিকে নয়। আপনি যা দেখলেন তা বোঝার চেষ্টা করুন, মহাবিশ্ব কীভাবে টিকে আছে তা নিয়ে বিস্ময় বোধ করুন এবং কৌতূহলি হোন।

বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অসামান্য প্রতিভার অধিকারী হকিংয়ের অবদান সম্পর্কে তুলে ধরেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড.দীপেন ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের পক্ষে স্টিফেন হকিংকে এতো সহজে বোঝা সম্ভব নয়। কারো সঙ্গে তুলনা করাও সত্যিই অসম্ভব। বিশেষ করে ‘ব্ল্যাক হোল’ নিয়ে তার গবেষণা বিজ্ঞানের জগতে বিপুল সাড়া ফেলেছে। মহাজাগতিক এই রহস্যময় বস্তু তাদের পারপস্পরিক সম্পর্ক এবং সৃষ্টির আদি যুগে ব্ল্যাক হোলের ভূমিকার নানা দিক তুলে ধরেন তিনি। নিজের গবেষণার বিষয় এতো জটিল হওয়া সত্ত্বেও একাধিক বই লিখে বিজ্ঞানকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করে চলেছেন তিনি। সত্তরের দশকে কার্ল সাগান যেভাবে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে সাফল্য পেয়েছিলেন, হকিংও সেই পথে চলেছেন। তাই হকিংয়ের কাছে বিশ্ববাসীর প্রত্যাশ্যার কোন শেষ নেই। আইনস্টাইনের মধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব ও কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর তত্ত্বকে এক এক করে কোয়ান্টাম গ্রাভিটি তত্ত্বের জন্ম দেবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। হকিং এ বিষয়ে কাজ করে চলছেন। ফলে তিনি এই রহস্যের সমাধান করবেন, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি’র ছাত্র থাকাকালে বিশ্ব সৃষ্টিতত্ত্ব ও মহাবিশ্বের অবস্থা নিয়ে কৌতূহলি হয়ে ওঠেন হকিং। এর পর তিনি মহাবিশ্ব নিয়ে প্রচুর গবেষণা করেন এবং মহাবিশ্ব সৃষ্টির ব্যাখ্যা দেন। জন্মদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেও হকিং যথেষ্ট সুস্থ না বলে চিকিত্সকরা জানানোর পর তিনি সিদ্ধান্ত পাল্টান। ১৯৬৩ সালে ২১ বছর বয়সে দূরারোগ্য মটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হন হকিং। তখন বলা হয়েছিল আর মাত্র দু’বছরের মতো বাঁচবেন তিনি। তারপর ৪৮ বছর পার হয়ে গেছে আর স্টিফেন হকিং আলবার্ট আইনস্টাইনের পর বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিভাবান বিজ্ঞানী হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। যে ধরনের মটর নিউরন রোগে হকিং আক্রান্ত তাতে দেহের পেশী নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুগুলো আক্রান্ত হয়। পেশীগুলো এক সময় পুরোপুরি শক্তিহীন হয়ে পড়ে। হকিং হুইল চেয়ার নিয়ে চলাফেরা করেন এবং কথা বলার জন্য কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ভয়েস সিন্থাসাইজার ব্যবহার করেন।

সুত্রঃ রয়টার্স, ইত্তেফাক