কিশোরগঞ্জের তিতাস গ্যাস বিতরণ অফিসের কাছ থেকে যথাযথ সেবা পাচ্ছে না গ্রাহকরা। অনিয়ম-দুর্নীতিতে ডুবে আছে অফিসের কর্মচারীরা। কথায় কথায় ঘুষ দাবি করা এ অফিসের নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাসিক বিল বই আনতে গেলেও টাকা গুনতে হয় গ্রাহকদের। এসব অভিযোগ তিতাসের গ্রাহকদের। গত বুধবার তিতাসের ম্যানেজার আতিয়ার রহমান এক বিস্কুট কম্পানিতে গিয়ে এ কারণে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন। অভিযোগ রয়েছে, ঘুষ চাইতে গেলে তাঁকে মারধর করা হয়। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে ম্যানেজার আতিয়ার রহমান দাবি করেন, মিজানুর রহমান নামে এক টেকনিশিয়ান তাঁকে ষড়যন্ত্রের ফাঁদে ফেলে মারধর করে। পরে মিজান তাঁর কাছে এ ঘটনার জন্য মাফ চেয়েছে।
জানা গেছে,উপশহরের বত্রিশ এলাকায় অবস্থিত তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিশন কম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দিয়ে কিংবা অবৈধ এঙ্টেনশন লাইন বসিয়ে অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন। তা ছাড়া অবৈধ লাইন নেওয়া বা লোড বাড়ানোর ক্ষেত্রেও গ্রাহকদের তাঁরা প্ররোচিত করেন। বিশেষ করে স্থানীয় বিভিন্ন ফ্যাক্টরির বৈধ লাইনের পাশাপাশি অবৈধ লাইন বসিয়ে দিয়ে গ্যাস ব্যবহারের সুযোগ করে দিচ্ছেন তাঁরা। আবার কোনো কোনো ফ্যাক্টরিতে সমস্যা না থাকলেও অসৎ কর্মকর্তারা লাইনে ত্রুটির কথা বলে ঘুষ দাবি করেন। বিনা মূল্যের মাসিক বিলের বই আনতে গেলেও ২০০ টাকা দাবি করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শহরের পশু হাসপাতাল রোডের হাসনারা ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরির ম্যানেজার স্বপন জানান, গত বুধবার সকালে তিতাসের ম্যানেজার আতিয়ার রহমান ফ্যাক্টরিতে গিয়ে গ্যাস লাইনে অতিরিক্ত লোড ও ত্রুটি আছে বলে জানান। খবর পেয়ে প্রতিবেশি গ্যাস ও পানির লাইনের টেকনিশিয়ান মিজানুর রহমান গিয়ে তিতাসের উপমহাব্যবস্থাপক আলাউদ্দিন আহমেদকে বিষয়টি মোবাইল ফোনে অবহিত করেন। এরপর উপস্থিত কয়েকজন ম্যানেজার আতিয়ার রহমানকে একটি কক্ষে আটকে রেখে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।
মিজানুর রহমান জানান, বেশ কিছুদিন আগে তিতাসের এই ম্যানেজার ফ্যাক্টরির মালিকের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা আদায় করে দেওয়ার জন্য তাঁকে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি তাঁর কথামতো কাজ করেননি। ম্যানেজারের ধারণা ছিল তিনি টাকা আদায় করে তা আত্মসাত করে ফেলেছেন। এ বিষয়ে খোঁজ নিতে সকালে তিনি কারখানায় গিয়েছিলেন। ম্যানেজারকে মারধরের কথা স্বীকার করে মিজানুর রহমান বলেন, বহুদিন ধরে গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাড়তি আয় বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে তাঁরা অফিসে এলেই ঘুষের জন্য ঘুরে বেড়ান। তিনি জানান, মাসিক বিলের বই বিনা মূল্যে সরবরাহ করার কথা থাকলেও এসব বই আনতে গেলে ২০০ টাকা করে দিতে হয়।
এ ব্যাপারে ম্যানেজার আতিয়ার রহমান লাঞ্ছিত হওয়ার কথা স্বীকার করলেও তিনি ওই দিন কারখানা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘আমি সকালে গিয়েছিলাম গ্যাস লাইনে কোনো সমস্যা আছে কি না তা দেখতে।’জানা গেছে, কিশোরগঞ্জে বাণিজ্যিক গ্রাহক আছে ৪৮ জন। বাণিজ্যিক গ্রাহকদের বিলও হয় বেশি। এসব গ্রাহককে তিতাস কর্মকর্তারা ঘুষ বাণিজ্যের টার্গেট করেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিতাসের কয়েকজন ঠিকাদার অভিযোগ করেন। এ ছাড়া আবাসিক গ্রাহক আছেন ৭ হাজার ৪১৫ জন। কয়েকজন ঠিকাদার জানান, সরকার নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখলেও অসৎ কর্মচারী-কর্মকর্তারা ঘুষের বিনিময়ে বহু অবৈধ লাইনের সংযোগ দিয়েছে বলে তাঁদের ধারণা। শহরের বত্রিশ এলাকায় একটি বহুতল ভবনে এ রকম ১৪টি ডাবল বার্নারের অবৈধ সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। পরে বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে লাইন কাটা হয়। এ বিষয়ে মামলাও হয়েছে।
-কালের কন্ঠ