আরজ আলী মাতুব্বর (১৯০০-১৯৮৫ ইং, ১৩০৭-১৩৯২ বাংলা) স্ব-শিক্ষিত দার্শনিক, চিন্তাবিদ এবং বিজ্ঞানমনস্ক লেখক। জগত ও জীবন সম্পর্কে নানামুখী জিজ্ঞাসা তার লেখায় উঠে এসেছে যা থেকে তার প্রজ্ঞা, মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায়।
সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ বরিশাল শহর থেকে ১১ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে চরবাড়িয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত লামচরি নামক গ্রামে বাংলা ১৩০৭ সনের ৭ই পৌষ এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে আরজ আলী মাতুব্বর জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম এন্তাজ আলী মাতুব্বর। আরজ আলী মাত্র চার বছর বয়সে তাঁর বাবাকে হারান। এর পরে তাদের পরিবারটি দেনার দায়ে বসতবাটি ও জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। আরজ আলী নিজ গ্রামের মুন্সি আবদুল করিমের মক্তবে সীতানাথ বসাকের কাছে ‘আদর্শলিপি’ পড়তেন। দারিদ্র্যতার কারনে তাঁকে মক্তব ছাড়তে হয়। এরপর তিনি কৃষিকাজে নিয়োজিত হন। সাথে সাথে তিনি নিজের ঐকান্তিক চেষ্টায় লেখাপড়া শিখতে থাকেন। কৃষিকাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি জমি জরিপ বা আমিনের কাজ শিখে নেন। এরপর জমি জরিপের কাজকেই পেশা হিসেবে গ্রহন করেন। এক সময় মানুষ ও জীবন সম্পর্কে তাঁর মনে প্রশ্ন জাগলে তিনি এই বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে নিজস্ব ধরনের চিন্তা-ভাবনা শুরু করেন। তাঁর বেশ কিছু বই প্রকাশিত হলে সুধী সমাজের কাছ থেকে স্বীকৃতি পান। নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়ে ১৩৮৬ বঙ্গাব্দে নিজের বাড়িতে ‘আরজ মঞ্জিল’ পাবলিক লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করেন। স্থানীয় চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান করেন। মানবকল্যানে ব্যবহারের জন্য বরিশাল মেডিকেল কলেজকে মরণোত্তর দেহদান করেন। ১৩৯২ সনের ১লা চৈত্র তারিখে ৮৬ বছর বয়সে ৭ কন্যা ও ৩ পুত্রে জনক এই প্রগতিবাদ ব্যক্তিত্ব বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরলোকগমন করেন।
তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থঃ-`
ম্যাকগ্লেসান চুলা (১৯৫০)
সত্যের সন্ধান (১৯৭৩)
সৃষ্টি-রহস্য (১৯৭৮)
স্মরণিকা (১৯৮২)
অনুমান (১৯৮৩)
মুক্তমন (১৯৮৮)
তাঁর প্রাপ্ত সম্মাননাঃ-
বাংলা একাডেমী কর্তৃক আজীবন সদস্য পদ প্রদান এবং বাংলা ১৩৯২ সালের ১লা বৈশাখ নববর্ষ সংবর্ধনা জ্ঞাপন।
হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার (১৩৮৫ ব.)
উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী কর্তৃক বরণীয় মনীষী হিসেবে সম্মাননা (১৩৯২ ব.)