বিশ্বে একটি দেশের, একটি জাতির একটি স্থানের, একটি লোকালয়ের এবং যে কোন জনগোষ্ঠীর সার্বভৌমত্ব , ভৌগলিক সীমারেখা, প্বার্শবর্ত্তীদের সাথে শান্তিপুর্ন ভাবে সহবস্থান, প্রতিবেশীদের দ্বারা নিজেদের অস্তিত্বের স্বীকার এবং শান্তিপুর্ন ভাবে বসবাসের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে পৃথিবী যুগ যুগ ধরে মানুষ নানাভাবে নানা কৌশল অবল্মবন করে আসছে, এবং ভবিষ্যতেও করবে, এটাই হয়তো পৃথিবীর ধারা।
কিন্তু ভাবতে অবাক লাগে, লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে প্রাপ্ত একটি স্বাধীন দেশ, যে দেশের অকুতোভয় আপামর জনতা কাধে কাধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে ছিলাম সেই আমরা যখন , নিজ জেলার মধ্যে ভাই ভাইয়ের মধ্যে এহেন নির্লজ্জ ভাগাভাগির যুদ্ধে লিপ্ত হই।
কোন এক সময়ে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিলো “ভৈরব কে জেলা করা হবে” নির্বাচনী প্রচারনার প্রতিশ্রুতি প্রায় সময়েই দুনিয়ার প্রায় দেশেই- রাজনৈতিক জটিলতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, ভৌগলিক সমস্যা এবং নানাবিধ কারনে বাস্তবায়িত হয়না। এটা খুবিই স্বাভাবিক, প্রতিশ্রুত সকল প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয়না বলেই তো গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের প্রচলন।
উন্নত বিশ্বের দেশ গুলোর দিকে তাকিয়ে আজ কি দেখি, জনাব বুশ ঝকমকে অনেক নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেন নি বলেই কিন্ত আজ় মার্কিন মুল্লুকের অর্থনৈ্তিক অবস্থার এ বেহাল, নাস্তানাবুদ পরিস্থিতি। জনাব ওবামা নির্বাচনী প্রচারনার প্রতিশ্রুতিতে বলে ছিলেন, নির্বাচিত হলে বহু আকাংখিত, ১৪ মিলিয়ন অবৈ্ধ অভিবাসীর ভারে কুজো হয়ে যাওয়া, অভিবাসন আইন সংস্কার করবেন, ঢেলে সাজাবেন, ক্ষমতার আট মাসের মধ্যে। উনি ক্ষমতায় আছেন আঠারো মাস। অভিবাসন আইন বাস্তবায়িত হয়নি, বরং এ বিষয়ে এখন মামলা চলছে আরিজোনা রাজ্য সরকার আর জনাব ওবামার প্রশাসনের মধ্যে। বড়ই লজ্জার ব্যাপার।আর বিদেশের মাটি থেকে যথাশীঘ্র মার্কিন সৈন্য ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি? আল্লাহ মালুম।
এই যদি হয় ঊন্নত দেশের অবস্থা, যাদের গনতন্ত্র চর্চ্চার ইতিহাস আমাদের দেশের চাইতে বেশী, তাহলে আমাদের দেশে এর ব্যতিক্রম ঘটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
ঐতিহ্যবাহী কিশোরগঞ্জ জেলা কে ভেঙ্গে ভৈরব কে একটি নুতন জেলা করা হবে, এ নিয়ে পক্ষ বিপক্ষের সে কি আন্দোলন, কত কিছু হলো, রাস্তাঘাট অবরোধ, অসহায় যাত্রীদের ভোগান্তি, ভাংচুর, মামলা মোকদ্দমা । অবশেষে, দেশের বড় বড় রাজনৈতিক নেত্রীবৃন্দের হস্তক্ষেপে আন্দোলন স্তিমিত হল, কারন দাবী উঠলো বাজিতপুর কে জেলা করার; তথা দেশের “ ডাকসাইটে” উপজেলা গুলোও জেলায় উন্নীত হওয়ার বাহানা ধরতে থাকল।
একটা মজার ঘটনা না উল্লেখ না করলেই নয়, মাস আট দশেক আগের কথা, ঢাকা জি, পি, ও তে লাইনে দাড়িয়েছি, আমার সামনের ভদ্রলোক সুন্দর আধাসামরিক পোষাক পরিহিত। কিন্তু ভদ্রলোকের শারীরিক গঠন কেমন যেন পোষাকের সাথে যাচ্ছিল না, দৃষ্টি গেল বাম বাহুর ব্যাজে, আমার অতি পরিচিত মুক্তিযোদ্ধার ব্যাজ, সাথে সাথে ভাবলাম বাহ, দেশের সাহসী মুক্তিযোদ্ধারা অন্তত একটা official পোষাক পেয়েছেন। জিজ্ঞাস করলাম ভাই, এই পোষাকটি কি সকল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য? উনি আমার দিকে না তাকিয়েই বেশ দাম্ভিকতার সাথে জানালেন,” না”। “যারা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মহামান্য রাস্ট্রপতির আমন্ত্রনে ঢাকার সম্মেলনে আসার সুযোগ পেয়েছেন তারাই শুধু এ পোষাক পেয়েছেন”। উনার হাতের খামে প্রাপকের ঠিকানায় চোখ গেল। এখানে উল্লেখ করব না, তবে এতটুকু বলতে পারব উনি মাননীয় এবং সম্মানীয়। প্রেরক এর ঠিকানা বলি- প্রেরকঃ …………… মুক্তিযোদ্ধা, গ্রাম, কালিকা প্রসাদ, থানা, ভৈরব, জেলা, ভৈরব , বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে আমরা কাউন্টারের সামনে, জিজ্ঞাস করলাম ভাই “ ভৈরব কি জেলা হয়ে গেছে”? মুক্তিযোদ্ধা ভাই কোন জবাব দিলেন না। তখন উনার খাম টি পোস্টাল কর্মচারির হাতে, উনি একবার খামের দিকে তাকালেন আর একবার প্রেরকের (মুক্তিযোদ্ধা) মুখের দিকে তাকালেন, আর আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন। আইনত ভাবে পোস্টাল কর্মচারী যার ঠিকানা বা চিঠি সম্পর্কিত প্রশ্ন করার এখতিয়ার সবচেয়ে বেশী, সেই বেচারাও প্রাপকের ঠিকানার ভয়ে, টু শব্দটি পর্যন্ত করলেন না।
ব্যাপারটা মানতে আমার খুব কস্ট হলো , কারন আমার স্বার্থপরতা, এবং নীতিগত প্রশ্নে, প্রথমতঃ আমি কিশোরগঞ্জ জেলা বিভক্তি করনের বিপক্ষে, দ্বিতীয়ত আমি হাওর উপজেলার বাসিন্দা, কিশোরগঞ্জ জেলার গুরুত্বপুর্ন অধিক ধান উৎপন্নকারী এবং সর্বোচ্চ রাজস্ব প্রদানকারী উপজেলা গুলো হাওরে অবস্থিত, এবং হাওর উপজেলা গুলোর জীবন বৈচিত্রতা,সংস্কৃতি কিশোরগঞ্জ জেলার অন্যান্য উপজেলা গুলো থেকে সম্পুর্ন ভাবে ভিন্ন। অতএব কিশোরগঞ্জ জেলায় যদি আরেকটি জেলার প্রয়োজন হয়, তবে গভীর হাওর উপজেলার একটিকে হাওর জেলা হিসাবে উন্নীত করা যেতে পারে। যাক, সেটা সরকারের নীতিনির্ধারকদের ব্যাপার।
আমার জানামতে বর্তমান সরকার কোন নুতন জেলার সরকারি ঘোষনা এখনোব্দি দেননি, তা হলে কি করে ভৈরব স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগার উপর দিয়ে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে, ভৈরব উপজেলার প্রবেশ দ্বারে, সরকারি সাইনবোর্ডের বিকৃতি করে- কিশোরগঞ্জের নাম মুছে ফেলা যায়? এ দৃশ্যখানি যখন ভ্রমনরত অন্য জেলার যাত্রী দের চোখে পরে তখন এ লজ্জার দ্বায়ভার সমগ্র কিশোরগঞ্জ জেলা বাসীর উপর বর্তায়। অনেক বাসযাত্রী ভৈরব উপজেলা অতিক্রম করার সময় এ সাইন বোর্ড দেখে মুখ টিপে রাজনৈতিক টিপ্পনি কাটেন।
জানতাম সরকারি সম্পত্তির বা এর কোন অংশের বিকৃ্ত করন আইনগত অপরাধ, তাহলে ভৈরবের নির্বাহী কর্মকর্তা না হয় ভয়ে দেখেও না দেখার ভান করেছেন, তাই বলে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কি করার কিছুই ছিল না? নাকি ভৈরব এর নির্বাহী কর্মকর্তাও ভৈরব উপজেলার সরকারি সাইন বোর্ডের মত নিজের খেয়াল খুশীমত নিজের পদবী “উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (officer)” বদল করে “জেলা প্রশাসক” পদমর্যাদায় নিজকে উন্নীত করেছেন?
কিশোরগঞ্জ জেলার সচেতন,সুধীসমাজ এ ব্যাপারে যথেস্ট উদ্বীগ্ন। এ বিষয়ে সংশ্লীষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষন কামনা করে, নতুবা খুব শীঘ্রই অন্যান্য উপজেলার জনগনও তাদের ইচ্ছামাফিক তাদের জেলার নাম মুছে ফেলে তাদের উপজেলা গুলোকে নিজ ইচ্ছার খেয়াল খুশীর বশবর্ত্তী হয়ে জেলায় উন্নীত করতে থাকবে।
এ, জেড আসিফ ইকবাল (কাকন)
একজন সংস্কৃতিক কর্মী
ভূত পূর্ব কম্পিউটার সিস্টেম এনালিষ্ট (যুক্তরাষ্ট্র)
জেলা প্রশাসক এর উচিত ব্যাপারটি শীঘ্রই দেখা ।
আমরা এমন একটা দেশে বাস করি যেখানে মাঝে মাঝে মনে হয় কতৃপক্ষ বলে কিছু নেই । কারো কোনো মাথা ব্যাথা নেই সমাজের অসংগতি নিয়ে । চলছে তো চলছেই । কোন দায় বদ্ধতা নেই । এভাবেই অসংগতির সাথে পাল্লা দিয়ে অন্যায় বেড়ে যাচ্ছে । এ যেন এক ঊন্মাদ প্রতিযোগিতা । আমরা সবাই দারুন ভাবে উপভোগ করছি । সত্যি উপভোগ্য আমাদের নৈতিকতা ।
ভৈরবকে জেলা ঘোষণার হঠকারী দাবির প্রতি আমরা ধিক্কার জানাই।
কিশোরগঞ্জ সদর সমিতির ঢাকাস্থ ইফতার পার্টিতে আগত প্রায় ২৫০ জনকে এই লেখাটির ছবি সহ লিফলেট আকারে এ ব্যাপারে সচেতন করা হয় পরবর্তিতে ব্যাপারটি নিয়ে ডি, সি সাহেবের সাথে কিশোরগঞ্জ ডট কমের কথা হয়েছে শুধু তাই নয় ডিসি সাহেব আমাদের প্রতিনিধির সামনেই ভৈরবের ইঊ, এন, ও কে নির্দেশ দিয়েছেন যেন সমস্যাটি ঈদের পূর্বেই যেন সমাধান হয় ।
কমেন্টস লিখার পূর্ব পর্যন্ত স্পটে গিয়ে পুনরায় যাচায় করা সম্ভব হয়নি।
bhairab should be a district,because bhairab is better than kishore gonj for comunication and buisness.bhairab city is bigger than kishore gonj city. otherwise it should be part of narsingdi district.