বাংলাদেশের সর্বত্র কলাগাছ দেখা যায়। গরিবের জীর্ণ কুটিরে আর কিছু না থাক কলা গাছ আছে। কারণ কলা গাছ যে কোনো মাটিতে হয় সহজেই, পরিচর্যা ছাড়াই। পরিচর্যা করলে ভালো বা উন্নতমানের কলা হয়। কলার ব্যবহার দু’ভাবে। কাঁচা রান্না করে এবং পাকা কলা খাওয়া হয়। বহু প্রকারে কলা রয়েছে। রান্না করে খাওয়া যায় যে কলা তাকে কাঁচা কলা বা কাঁচকলা বা আনাজে কলা বলে। বাকি সব কলা পাকলে খাওয়া হয়। যেসব কলা পাকা খাওয়া হয়, সেগুলো হচ্ছে সাগর কলা, সবরি কলা, চম্পা কলা, বিচি কলা বা দয়া কলা, ঠটে কলা বা পূজার কলা, অগ্নিস্বর কলা, বানেস্বর কলা ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে সাগর কলা, সবরি কলা ও চম্পা কলা জনপ্রিয় ও সহজলভ্য। আশির দশক থেকে আমাদের দেশে নেপাল থেকে এক প্রকার কলা এনে চাষ করা হচ্ছে। সবাই এটাকে নেপালি কলা বলে। এগুলো বেশ বড় বড় বড়।
গুণাগুণের দিক থেকে কাঁচা কলা ও পাকা কলার ভিন্ন ভিন্ন গুণ। বাঙালি মাত্রই কাঁচা কলা ব্যবহারের কথা জানেন। ভর্তা, ঝোল, ভাজা, ডালনা, কোপতা, বড়া, চপ নানা প্রকারে কাঁচা কলা খায় বাঙালিরা। কাঁচাকলার খোসা পর্যন্ত ভেজে খায়। আয়ুর্বেদি মতে, কাঁচাকলা শরীর ঠাণ্ডা রাখে। বল বৃদ্ধি করে। রোগীকে কাঁচাকলার ঝোল খেতে দেয়া হয়।
এছাড়াও কাঁচাকলা কফ নাশক, অম্লপিত্ত দাহ, ক্ষয় ও বায়ুনাশক। কাঁচাকলায় আয়রন বেশি থাকায় শরীরে রক্ত বাড়ায়। শক্তি বৃদ্ধি করে। যাদের পেটের অসুখ তারা কাঁচাকলা ভর্তা বা ঝোল খেতে পারে। যাদের পাকস্থলী বা অগ্ন্যাশয়ে আলসার আছে, তারা কাঁচাকলা সেদ্ধ বা ভর্তা খেতে পারেন। কাঁচাকলা সেদ্ধ টক দইয়ের সাথে চটকে খেলে আমাশয় ও রক্ত আমাশয় ভালো হয়। এই কলা মেয়েদের অ্যানিমিয়া দ্রুত পূরণ করতে পারে।
কলার মোচা ও ভেতরের থোড়ও উপকারী। আয়ুর্বেদ মতে, কলার মোচা সেদ্ধ করে কাশ, পেঁয়াজ, লবণ ও সরষে তেল দিয়ে ভর্তা করে খেলে শরীর ঠাণ্ডা থাকে। এটা মধুর, কষায়, হজমে গুরুপাক, ডায়াবেটিস, বায়ু, পিত্ততেও কলার মোচা খুবই উপকারী। যাদের নাক দিয়ে রক্ত পড়ে, তারা কলার মোচা ভর্তা বা ডালনা খেলে উপকার পাবে। কলা গাছ ছুলে ফেললে ভেতরে মোটা গোলাকার দণ্ড পাওয়া যায়। একে বলে থোড়। শহুরে লোকেরা থোড় খেতে জানে খুব কম। গাঁয়ের লোকেরা কলার কাঁদি কাটার সময় গাছ কেটে ফেলে খোসা ফেলে থোড় বের করে বাড়িতে নিয়ে আসে। তারপর রান্না করে খায়। চিকন চিকন করে কেটে তেলে ভেজে ভাতের সাথে খায়। এই থোড় রুচি বাড়ায়, ক্ষুধা বৃদ্ধি করে, বীর্য বাড়ায়, ডায়াবেটিস কমায়। মেয়েদের শ্বেত ও রক্তপ্রদর রোগ ভালো হয়। হেকিম ও কবিরাজদের পরামর্শ মোতাবেক থোড় শুকিয়ে গুঁড়ো করে এবং থোড় বেটে রস করে চিনি ও মধু মিশিয়ে খেলে নানাবিধ রোগ মুক্ত হওয়া যায়। কলাগাছের মূল ও শেকড়ও উপকারী। হেকিম ও বৈদ্যদের পরামর্শ মতে খেলে বহু রোগ সারে।
লেখক: ডা. শাহজাদা সেলিম
চিকিৎসক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ
বারডেম হাসপাতাল, শাহবাগ, ঢাকা
সুত্রঃ unmochon.com