ক্যাটরিনার কাইফের ক্যারিয়ারে সাফল্যের আরেকটি সোনালি পালক যোগ করলো সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া সুপারহিট ছবি রাজনীতি। মুম্বাইয়ের বিগ ডিরেক্টর প্রকাশ ঝার এই ছবিতে অজয় দেবগান, নানা পাটেকর, নাসিরুদ্দিন শাহ, রণবীর কাপুর আর মনোজ বাজপেয়ির মতো ব্লগব্লাস্টার অভিনেতাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন ক্যাটরিনা। প্রমাণ করেছেন শুধু রূপেই নয়, অভিনয় গুণেও তিনি অনন্যা। নিজের রোমান্টিক ইমেজ ভেঙে দিয়ে একদম ভিন্ন আমেজে নিজেকে মেলে ধরেছেন। নিজের মধ্যে ফুটিয়ে তুলেছেন সোনিয়া গান্ধীর ছায়া। রাজনীতি দেখতে আসা মানুষের ভিড় বলিউড নায়িকাদের ইদুঁরদৌড়ে ক্যাটরিনা কাইফের শীর্ষ অবস্থানকে আরো জোরালো করলো।
প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের যুগল রূপমাধুরীর আমেজ আছে ক্যাটরিনার মাঝে। থাকবে নাই-বা কেন? তার বাবা মোহাম্মদ কাইফ ভারতীয় কাশ্মিরি, মা সুজানা ব্রিটিশ নাগরিক। বাবা-মার একমাত্র সন্তান ক্যাটরিনার জন্ম ১৯৮৪ সালের ১৬ জুলাই হংকংয়ে। অনন্য-রূপসী ক্যাটরিনা কাইফের ছোটবেলা কেটেছে আমেরিকার দ্বীপনগরী হাওয়াইতে। লন্ডনে কেটেছে কৈশোর। পড়াশোনা বড় হয়ে ওঠা সব লন্ডনে। ২০০৩ সালে তিনি শোবিজে প্রথম পা রাখেন। তবে মুম্বাইতে নয়, লন্ডনেই। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ব্রিটিশ এজেন্সি মডেল ওয়ানের প্রতিনিধি হয়ে লন্ডন ফ্যাশন উইক ২০০৩-এ র্যাম্পে অংশ নেন। নজর কাড়েন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ফিল্ম মেকার কাইজাড গুস্তাদের। ক্যাটরিনাকে তিনি কাস্ট করেন বুম ছবিতে।
২০০৪ সালে ক্যাটরিনা কাইফ মুম্বাই আসেন। শুরুতেই কয়েকটি কনজ্যুমার প্রডাক্টের মডেল হয়ে ঝড় তোলেন। ২০০৫ সালে বলিউডের সরকার ছবিতে অভিনয় করেন অভিষেক বচ্চনের বিপরীতে। একই বছর মেইনে পেয়ার কিউ কিয়া ছবিতে তাকে দেখা যায় সুপারস্টার সালমান খানের পাশে। প্রথম দুটো ছবির বাণিজ্যিক সাফল্য ক্যাটরিনা কাইফকে দাঁড় করায় লাইমলাইটে। পেয়ার কিউ কিয়া ছবিতে আকর্ষণীয় পারফরমেন্সের জন্য পেয়ে যান স্টারডাস্ট ব্রেকথ্রু পারফরমেন্স অ্যাওয়ার্ড। ক্যাটরিনার পিছু নেয় সাফল্যের প্রজাপতি। বিদেশী গল্পনির্ভর বলিউডের ছবিতে তিনি হয়ে ওঠেন পরিচালকদের নির্ভরতা। নমস্তে লন্ডন , হামকে দিওয়ানা কারগিয়া, সিং ইজ কিং, পার্টনার, আপনে, রেস, আব্বাস মাস্তান, ওয়েলকাম, নিউইয়র্ক, আজব প্রেম কি গজব কাহানি, ব্লু, দে দানা দান ইত্যাদি ছবির বাণিজ্যিক সাফল্য ক্যাটরিনা কাইফকে করে তোলে বলিউড ফিল্মডোমের ভ্যালুয়েবল স্টার। চলতি বছর বেস্ট একট্রেস ক্যাটাগরিতে স্টারডাস্ট ও স্টার স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড জিতে নেন তিনি। লাক্সের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হওয়ায় তার মর্যাদা আরো বেড়ে যায়। টানা সাফল্যের রেকর্ডে ঐশ্বরিয়া রাই, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, ক্যারিনা কাপুরকে ছাড়িয়ে ক্যাটরিনা কাইফ পৌঁছে গেছেন শীর্ষস্থানে।
রাজনীতি ছবিতে ক্যাটরিনা কাইফ নিজের অভিনয়ে যোগ করেছেন নতুন মাত্রা। তার সাবলীল অভিনয়ে মুগ্ধ পরিচালক প্রকাশ ঝা। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ক্যাটরিনাকে কাস্ট করার পর তাকে নিয়ে আমার মধ্যেও কিছু দ্বিধা ছিল। কারণ চটুল চরিত্রে নিজেকে সে প্রমাণ করেছে। কিন্তু এ ছবিতে তার চরিত্রটি খুব সিরিয়াস এবং গাম্ভীর্যপূর্ণ। শুটিং শেষে আমি বুঝতে পারি, সে চরিত্রটিকে নিয়েছিল চ্যালেঞ্জ হিসেবে এবং সে জয়ী হয়েছে। ক্যাটরিনাকে নির্মাতারা এখন সব ধরনের চরিত্রের জন্যই ভাবতে পারেন। রাজনীতি ছবিটি সাফল্য পাবে, এই ছিল মুম্বাই বক্স অফিসের ধারণা। কিন্তু সেই সাফল্যের সীমা যে এতোদূর গড়াবে তা আশা করেননি পরিচালক নিজেও। সাদামাটা রাজনীতির পাশে ম্লান হয়ে গেছে অভিষেক-ঐশ্বরিয়ার ঝকমারি ছবি রাভন।
এ বছর ক্যাটরিনা কাইফ অভিনীত আরো তিনটি ছবি রিলিজ পাচ্ছে। ছবি তিনটি হলো তেজ মার খান, রানিং উইথ দ্য বুলস ও দোস্তানা ২। এই ছবিগুলোতে তাকে দেখা যাবে ভিন্ন ভিন্ন আমেজে।