ভোমরা ছোটন খাটো লেজের অতি খুদে তৃণচারী পাখি। দেহের দৈর্ঘ্য ১০ সেমি, ওজন ৭ গ্রাম। প্রধানত একাকী ও জোড়ায় চলে। তবে প্রজননের সময় কয়েক জোড়া পাখি একই সঙ্গে দেখা গেছে। এ বৈশিষ্ট্য মুন্সিগঞ্জের কাছে পদ্মার লৌহজং চরে পাখি দেখতে গিয়ে কয়েকবারই চোখে পড়েছে। খুদে এ পাখিটি খুব সামান্য দূরত্বে উড়ে বেড়ায় ঘাসবন থেকে নলবনে এবং কিছুক্ষণ পরপরই ‘যিট…যিট…যিট’ সুরে ডাকে। এরা বেড়ে ওঠে নদীতীরের নলবন, ঘাসবন ও ধানখেতে। খুব সকালেই এ পাখি তার দৈনন্দিন কাজ শুরু করে। শণ ও ঘাসের ডগায় ডগায় উড়ে বেড়ায় এবং শুকনো ধানখেতে নামে খাবারের সন্ধানে।
দেশের সব বিভাগের আর্দ্র আবাদি জমিতে পাখিটি দেখা যায়। ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চল, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চল, মালদ্বীপ ছাড়া উপগ্রীষ্মমণ্ডলীয় এশিয়াতে পাখিটির বিস্তৃতি রয়েছে। এর ইংরেজি নাম Zitting Cisticola। বৈজ্ঞানিক নাম Cisticola juncidis।
প্রাপ্তবয়স্ক ছোটন পাখির পিঠের পালক কালচে বাদামি দাগসমেত হালকা পীত বর্ণের। মাথার চাঁদি ধূসর-বাদামি। লেজ ফিকে। ছেলে ও মেয়ে উভয় পাখির চোখ পিঙ্গল বাদামি, জলপাই বাদামি বা খড় বর্ণের। পা ও পায়ের পাতা মেটে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথায় মোটা লম্বা দাগ থাকে এবং দেহতল হলদে।
ফড়িং, পিঁপড়া, মাকড়সা, শুঁয়োপোকা, গুবরেপোকা ও ফলের বীজ আছে এদের প্রধান খাবার তালিকায়। শুকনো ঘাস ও পাতা-নল দিয়ে মার্চ-জুলাই মাসে নল বা শণের ডগায় ডিম্বাকৃতির বা মোচাকার বাসা বানায়। চার-পাঁচটি ডিম দেয়। ডিম ফিকে নীল। ডিম থেকে ১০ দিনেই ছানা ফোটে। মা-বাবা উভয়ে মিলেই সংসারের বাকি কাজ চালিয়ে যায়। দেশে পাখিটির সংখ্যা ভালোই আছে।
-লেখকঃ সৌরভ মাহমুদ
You must log in to post a comment.