আগের দিনে বিল-বাঁওড়ের ধারে কিংবা পুকুর পাড়ে মাছরাঙা পাখির মাছ ধরার আকর্ষণীয় দৃশ্য নজরে পড়তো। শিকারের পর গাছের ডালে বসে মাছরাঙা শিকার করা মাছ খেত। এখন মাছ রাঙার সংখ্যা কমে গেছে। সচারাচর মাছরাঙার আর মাছ শিকার চোখে পড়ে না।

এরা Coraciiformes বর্গের Alcedinidae, Halcyonidae ও Cerylidae গোত্রভুক্ত খাটো পুচ্ছ, বড় মাথা, সুচালো ঠোটের আটোসাটো গড়নের একটি পাখি। শিকার ধরার জন্য পানির দিকে মাথা নিচু করে ছোঁ মারে, প্রায়শ পানির ভিতরে ঢুকে যায়, শিকারকে গাছের ডালে নিয়ে ফিরে আসে এরপর কয়েকবার আছাড় মারে তারপর শূন্যে ছুড়ে দিয়ে মাথার দিক থেকে গিলে ফেলে।

পৃথিবী ব্যাপি ৯৪ প্রজাতির মাছরাঙা রয়েছে, বাংলাদেশে ১২ প্রজাতির মাছরাঙা আছে। তবে আমাদের দেশে সচারচর যে মাছরাঙা বেশী দেখা যায় তার নাম Blyth’s Kingfisher (Alcedo hercules); এরা দৃশ্যত আকারে বেশ বড় মিশ্র হরিৎ বনান্চলে দেখা যায়। আরও কিছু মাছরাঙার নাম ও ছবি দেয়া হল।

 

 

ছোট নীল মাছরাঙাঃ নীল মাছরাঙা লম্বায় প্রায় ১৮ সে.মি.। স্ত্রী-পুরুষ দুজনে দেখতে একই রকম। গায়ের উপরের পালক উজ্জ্বল নীল, শরীরের কিনারে ও ডানায় সবুজের ছোঁয়া আছে। মাথায় কালচে নীল রঙের টানাটানা দাগ। পায়ের রঙ লাল।এরা সোজাসুজি এবং বেশ দ্রুত ওড়ে। নিজের এলাকার রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধানে খুব সতর্ক। মার্চ থেকে জুন মাস হচ্ছে এদের প্রজননকাল। কোন জলাশয়ের পাশের খাড়া ঢালে গর্ত করে বাসা বানায়। ৫- ৭টি ডিম পাড়ে। বাংলাদেশের সবখানেই মাছরাঙা আছে। এদেরকে ইংরেজীতে বলে Common Blue Kingfisher আর বৈজ্ঞানিক নাম Alcedo atthis

সাদা বুক মাছরাঙাঃ সাদাবুক মাছরাংগা লম্বায় ২৮ সে.মি। মাথা, ঘাড় ও পেট গাঢ় বাদামী রঙের। চিবুক, গলা ও বুকের উপর সবুজের আভা আছে। একটা কালচে পট্টি ডানার পাশে। ওড়ার পালক কালো, গোড়ার দিকে উপর সাদা ছোট। লম্বা ভারী সূচালো চঞ্চু, রং গাঢ় নিষ্প্রভ লাল। পায়ের রঙ রাল, নখর ধূসর। খাদ্য: ঘাসফড়িং, ঝিঝি পোকা, গঙ্গা ফড়িং, পিঁপড়ে, উই ইত্যাদি কীটপতঙ্গ, কাঁকড়া-বিছে, তেঁতুলে বিছে, কেন্নে, কাঁকড়া, ব্যাঙ, টিকটিকি, গিরগিটি, ইঁদুর এবং ছোটখাটো অসুস্থ ও দুর্বল ও ছানা পাখি। মাছ প্রদান খাদ্য তালিকায় পড়েনা। তবুও এর নাম মাছরাঙা। বাংলাদেশ ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইন্দোচীন, ফরমোজা ও ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা ও আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত এই মাছরাঙ্গাকে দেখা যায়। বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে চারটি উপজাতি আছে। প্রত্যেকটা মাছরাঙা পাখির নিজস্ব এলাকা আছে। এই জায়গাটিতে অন্য কোন মাছরাঙার প্রবেশাধিকার নেই। কাছে এলেই তাড়িয়ে দেবে। জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসে ডিম পাড়ে। নদী বা খালের খাড়া পাড়ে গর্ত করে। চার থেকে সাতটি ডিম পাড়ে। বাচ্চা পালন সহ সংসারের সব কাজ স্ত্রী-পুরুষ দুজনে সমানভাবে করে। এদেরকে ইংরেজীতে বলে White breasted kingfisher, White-throated Kingfisher বা Smyrna Kingfisher আর বৈজ্ঞানিক নাম Haleyn smyrensis

ছিট/পারকা মাছরাঙাঃ এর ইংরেজী নাম Pied Kingfisher আর বৈজ্ঞানিক নাম Ceryle rudis। সাদা আর কালো পালকে মেশানো থাকে শরীর যার আকার প্রায় ১৭ সেমি।

মেঘ হও মাছরাঙাঃ এরা ৩৫ সেমি দম লম্বা, গাছে বসে থাকে আর শিকার পেলেই ঝাপিয়ে পড়ে।এর ইংরেজী নাম Stork Billed Kingfisher আর বৈজ্ঞানিক নাম Halcyon Capensis।

লাল মাছরাঙাঃ এরা আকারে ২৫ সেমি এর মত হয়। পাগুলো তুলনা মূলক বড় ও বেশ শক্তিশালী। বাংলাদেশ ছাড়াও South Korea, Japan, China, India তে এদের দেখা মেলে। এর ইংরেজী নাম Ruddy Kingfisher আর বৈজ্ঞানিক নাম Halcyon coromanda।

সবুজ মাছরাঙাঃ
এরা Halcyonidae পরিবারের গেছো মাছরাঙা ।এরা ইংরেজীতে Collared Kingfisher, White-collared Kingfisher বা Mangrove Kingfisher নামে পরিচিত। আর বৈজ্ঞানিক নাম Todiramphus chloris।

বাদামী মাছরাঙাঃ
বিশাল লাল ঠৌঁট। মাথা, গলা, পেটের দিক বাদামী হলুদ, পুচ্ছ ঘন বাদামী, পিঠ ও পাছা উজ্জল ফ্যাকাশে নীল। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে বিস্তৃত।বাদামী ডানা মাছরাঙা’র ইংরেজী নাম Brown-winged Kingfisher আর বৈজ্ঞানিক নাম Pelargopsis amauroptera

কালো মাছরাঙাঃ এদেরকে প্রধাণত সেন্টমার্টিন ও উপকূলীয় অঞ্চলে দেখা যায়।এর ইংরেজী নাম Black-capped Kingfisher আর বৈজ্ঞানিক নাম Halcyon pileata ।

বুনো মাছরাঙাঃ এর উপরের পালক ঘন ণীল বা হালকা বেগুণী আর নিচের দিকের পালক কমলা হলুদ। ঠোটেঁর রং প্রবাল লাল আর পায়ে তিনটি আঙ্গুল। এর ইংরেজী নাম Oriental Dwarf Kingfisher আর বৈজ্ঞানিক নাম Ceyx erithacus।