মৌলভীবাজারে শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওরের বাইক্কা বিলে কাঠের তৈরি কৃত্রিম বাসায় ডিম পেড়েছে বালিহাঁস। বাচ্চা ফুটিয়েছে জঙ্গল-ময়না বা গো-শালিক।দেশি জলচর পাখি বালি-হাঁসের প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষ্যে পরীক্ষামূলকভাবে বাইক্কা বিলে কৃত্রিম বাসা স্থাপন করেছে সমন্বিত রক্ষিত এলাকা সহব্যবস্থাপনা প্রকল্প (আইপ্যাক)।

আইপ্যাক সূত্রে জানা গেছে, হাইল হাওর দেশের গুরুত্বপূর্ণ জলাশয় ও বাদাভূমি হিসেবে পরিচিত। হাইল হাওর একসময় গাছ, মাছ ও জীববৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ ছিল। কিন্তু জলজ সম্পদ মাছ,গাছ, শাপলা-শালুক, পানি শিঙাড়া (সিংড়া), মাখনা নির্বিচারে আহরণ ও পশুপাখি নিধনের ফলে হাইল হাওরের পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ে। স্থায়ীভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষা করা, হাওরের টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ইউএসএআইডির অর্থায়নে আইপ্যাক হাইল হাওরে কাজ করছে। ইতিমধ্যে হাইল হাওরকে গুরুত্বপূর্ণ পাখি এলাকা হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

জানা গেছে, ২০০৫ সালে পরীক্ষামূলকভাবে গাছের কোঠরের মতো করে ১২টি কাঠের বাসা তৈরি করে বাইক্কা বিলের বিভিন্ন জায়গায় স্থাপন করা হয়েছিল। সে সময় কোনো হাঁস তাতে বাসা বাঁধেনি। কিন্তু ২০০৭ সালে চারটি বাক্সে বালিহাঁস ডিম দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। তার পরের বছরগুলোতে আর কৃত্রিম বাসায় বাসা তৈরি বা ডিম ফোটাতে দেখা যায়নি। এ বছরের এপ্রিল মাসে বাইক্কা বিল সহব্যবস্থাপনা কমিটির (বড় গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটি) উদ্যোগে আন্তর্জাতিক পাখি বিশেষজ্ঞ পল থমসনের কারিগরি পরামর্শে দেশীয় সামগ্রী ব্যবহার করে তিন আকারের ২১টি পানিনিরোধক পাখির বাসা তৈরি করে বাইক্কা বিলসংলগ্ন হিজল ও করচ বনে স্থাপন করা হয়।

আইপ্যাক প্রকল্পের সিলেট অঞ্চলের পরিচালক মলয় সরকারের নেতৃত্বে একটি যৌথ পর্যবেক্ষক দল গত রোববার বাসাগুলোতে প্রথম পর্যায়ের জরিপ করে। এ সময় দেখা গেছে, ২১টি বাসার মধ্যে ১৪টিতে পাখি বাসা করেছে। এর মধ্যে একটিতে পাখি বাসা করে বাচ্চা ফুটিয়ে চলে গেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। চরটিতে ডিম দেওয়া শুরু করেছে। এই বাসাগুলোতে দু-তিনটি করে ডিম পাওয়া গেছে। বালিহাঁসের একটি বাসায় ২৬টি এবং একটি বাসায় ১৫টি ডিম দেখা গেছে। একটি বাসায় ডিম দিয়েছে জঙ্গল-ময়না বা গো-শালিক, একটিতে বাচ্চা ফুটিয়েছে। এ ছাড়া পাঁচটিতে কোনো না কোনো পাখির বাসা বাঁধার চিহ্ন পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এগুলেতে শালিক, ঘুঘু অথবা ফিঙে পাখি বাস করেছিল। বাকি সাতটি বাসায় কোনো পাখি বাস করেনি।

বড় গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও বাইক্কা বিলের পাহারাদার আদর মিয়া  বলেন, ‘শালিক পাখি ডিম দিয়ে বাচ্চা ফুটিয়ে নিয়ে গেছে। বালিহাঁস ডিম দিয়েছে, কিন্তু এখনো বাচ্চা ফোটেনি। এ ছাড়া বাইক্কা বিল এলাকায় এখন স্থায়ী পাখি কিছু আছে। এর মধ্যে বালিহাঁস, মাছরাঙা, ঘাসপাখি দেখা যায়।’ আদর মিয়া জানান, শিকারির হাত থেকে রক্ষা করতে বাসাগুলো তাঁরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের মধ্যে রেখেছেন।

আইপ্যাক প্রকল্পের সিলেট অঞ্চলের পরিচালক মলয় সরকার  বলেন, ‘বালিহাঁসসহ দেশি পাখি কমে যাচ্ছে। এসব পাখি যাতে হারিয়ে না যায়, সে জন্য পরীক্ষামূলক কৃত্রিম বাসা তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। বলা যায়, প্রাথমিকভাবে সাফল্য পাওয়া গেছে। তবে এ উদ্যোগের সফলতা নির্ভর করবে ডিমগুলো থেকে সফলভাবে বাচ্চা ফোটানো, প্রকৃতিতে নির্বিঘ্নে বসবাস ও পুনঃপ্রজননের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারার ওপর। এখন এগুলো রক্ষা করতে স্থানীয় জনসাধারণ, প্রশাসনসহ সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন।’

-Prothom alo