বুলবুল ঢাকা শহরসহ সারা দেশেই সন্তোষজনক সংখ্যায় আছে। ঢাকা শহরেও প্রতি মৌসুমে এরা বাসা করে, ডিম পাড়ে, ছানা তোলে। মহাব্যস্ত মতিঝিলের কাঠবাদাম গাছেও এদের বাসা করতে দেখা যায়। এটি আমাদের অতি পরিচিত এক পাখি। গায়ক পাখি। সুন্দর পাখি। মাথায় আছে চূড়ার মতো চমৎকার পালক। লেজের গোড়ায় যেন একচিমটি সিঁদুর মেখে দেওয়া। ঘাড়-মাথা-গলা-বুক কালো। বুকের নিচ থেকে পেট ও পেটের দুই পাশে সুবিন্যস্ত কালচে বাদামি ছোপ আছে, মনে হয় মলা মাছের আঁশের মতো। চোখ কালো। চোখ, পা ও ঠোঁটও কালো। লেজের তলদেশ চকচকে কালো, আগাটা সাদা। একনজরে কালো ও গাঢ় বাদামি রঙের এক সুন্দর পাখি বুলবুল। কানের পাশটাতে যেন এক ছোপ গাঢ় বাদামি রং লাগানো।

ছবিতে যে বুলবুলটি দেখা যাচ্ছে, সেটির রং কিন্তু সাদা। কানের পাশটাও সাদা। লেজের তলদেশের গোড়ার রংটা অবশ্য লালই আছে। কিন্তু চোখের রং চকলেটের মতো। মাথার ঝুঁটি বাদামি, গলার রংটাও বাদামি। ঠোঁটটা আবার গাঢ় বাদামি। এটিও কিন্তু বুলবুল—বলা হয় অ্যালবিনো বুলবুল। সাদা বুলবুল। প্রকৃতির এ এক গূঢ় রহস্য, আশ্চর্য চমক। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, জিনগত ত্রুটির কারণেই এ রকম হয়। তাই স্বাভাবিক রং পায় না এই বুলবুলরা। এটা কোনো অসুখ নয়; বলা যায়, অস্বাভাবিকতা। পাখির জগতে ক্বচিৎ অ্যালবিনোদের দেখা মেলে। আমি আমার গ্রামেই এ রকম একটি ছাতারে (jungle Babler) এই ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে দেখেছি। গত ৫০ বছরের ভেতরে আমি ছোট সরালি হাঁস, কাক, হাঁড়িচাঁচা, ভাতশালিকসহ আঙুলে গোনা বেশ কয়েক প্রজাতির পাখি দেখেছি, যারা সাদা বা আংশিক সাদা ছিল।

আমার পর্যবেক্ষণ এই বলে, অ্যালবিনো পাখিরা একটু নরম স্বভাবের হয়, হয় কম চঞ্চল। তবে স্বাভাবিক জীবনই তারা যাপন করে। আমাদের নিত্য প্রতিবেশী এই বুলবুলটির ইংরেজি নাম Red-vented Bulbul. বৈজ্ঞানিক নাম Pycnotus cafer। শরীরের মাপ ২০ সেন্টিমিটার। ফাল্গুন-জ্যৈষ্ঠ মাসে গাছের ডালে বাটির মতো বাসা বানায় দুজনে মিলে। ডিম পাড়ে দু-তিনটি। দুজনেই পালা করে তা দেয় ডিমে। এদের খাদ্য ফল ও পোকা-মাকড়। এই রাজধানী শহরে ওরা আমাদের নিত্য প্রতিবেশী। তবে সাদা বুলবুল দেখতে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

লিখেছেনঃ শরীফ খান,  ছবিঃ মোঃ হানিফ