জলখেনি বা পানিখেনির মতো এরাও প্রয়োজনে পেঙ্গুইন পাখির মতো সোজা হয়ে টানটান দাঁড়াতে পারে, লম্বাটে ঠোঁট থাকে আকাশমুখী। ভয় পেলে বা রেগে গেলে এ রকমটি করে, প্রয়োজনে দুই পাখা মেলে ধীরে ধীরে নাড়ে। দ্রুত হাঁটে, প্রয়োজনে দৌড়ায়। কানিবকের মতো ঠোঁট চালিয়ে শিকার ধরে। নিয়মিত গোসল করে দুপুরবেলায়। নিঃশব্দে চলতে পারে, সাঁতরাতেও পারে ভালো। দেশের বন-বাগানের কিনারার ঝোপঝাড়সহ হাওর-বাঁওড়ের ঝোপঝাড় এদের প্রিয় চারণক্ষেত্র।

প্রিয় খাদ্য ছোট চিংড়ি, ছোট কাঁকড়া, জলপোকা, ঘাসের বীজসহ অন্যান্য পোকামাকড়। সাদা ল্যাদাপোকা ও কচড়া পোকা অতি লোভনীয় খাদ্য এদের। খাদ্য নিয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে ঝামেলা পাকায় অনেক সময়। না পারতে ওড়ে না, তবে উড়তে ভালোই পারে। এদের চলাচলেও আছে গেরিলা স্বভাব। এই দেখলাম, এই হাওয়া। একনজরে বাদামি-কালচে পাখি। লম্বা পা, লম্বা ঠোঁট। পা জলপাই-ছাই। ঠোঁট কালচে-লালচে। গলা সাদাটে। পিঠে চমৎকার চিত্র-বিচিত্র সাদা সাদা ফুটকি ও টান। বুক-চিবুক-শ্লেটি নীলচে। পেটের দুই পাশ ও লেজের তলায় একধরনের সাদা সাদা চমৎকার রেখা টানা। অপ্রয়োজনে ডাকে না। কণ্ঠস্বর অনেকটা ঢেরর ঢেরর ঢেরর ধরনের।উত্তরের হাওরে যথেষ্টই দেখা যায় শীতে। নানা রকম জালফাঁদে ধরে পেশাদার পাখি শিকারিরা। বিক্রিও করে শত শত পাখি। শুধু এই পাখি নয়, খেনিজাতীয় সব পাখিই ধরা হয়, বেচা হয়।

এদেরও খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ আমি পেয়েছি। নলখাগড়া বনই এদের সবচেয়ে প্রিয়। বাসাও করে এই প্রিয় জায়গায়। ডিম পাড়ে পাঁচ-সাতটি। দুজনে তা দেয়। ডিম ফোটে ১৯-২২ দিনে। এদের ইংরেজি নাম Slaty-Breasted Rail. বৈজ্ঞানিক নাম Gallera llus striatus. মাপ ২৭ সেন্টিমিটার। ওজন ৮০-১২০ গ্রাম। ভালো সাঁতার জানে এরা। সুন্দরবনসংলগ্ন জেলাগুলোসহ খোদ সুন্দরবনেও দেখা মেলে এদের। রাতে টর্চের আলো ফেলেও বন-ঝোপ থেকে ধরা যায় এদের।সুন্দর চঞ্চল এই পাখি ভালোই থাকবে আমাদের দেশে—যদি কিনা পেশাদার-নেশাদার শিকারি ও ভোজনবিলাসী মানুষকে নিবৃত্ত করা যায়।

শরীফ খান