খ্যাতির মাপকাঠিতে এই ফুল তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু নয়, কিন্তু আমাদের সুবোধ বিচারে সে অনন্য। আকরকাঁটা নামটি অনেকের কাছেই আনকোরা মনে হতে পারে। অবশ্য এর কারণও আছে। ফুলটি স্বল্পকালীন এবং নগর উদ্যানে অনেকটাই উপেক্ষিত।এই গাছের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, স্বভাবে এরা কষ্টসহিষ্ণু। যেখানে-সেখানেই জন্মাতে পারে। সাভারের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে পরিত্যক্ত গাছগাছালির ভেতরেও এই গাছ দেখেছি। সেখানে নিশ্চয় প্রাকৃতিকভাবেই জন্মেছে গাছটি। অথচ এমন স্বাচ্ছন্দ্যে বেড়ে ওঠা গাছটির জন্মস্থান নাকি আমাদের দেশ নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গ্রন্থাগারের পেছন লাগোয়া পথের ধারে, আণবিক শক্তি কমিশনের সামনে ও নাজিমউদ্দিন রোডে কয়েকটি গাছ চোখে পড়ে। তা ছাড়া বিক্ষিপ্তভাবে অন্যত্রও দেখা যায়। শীতের শেষে নিষ্পত্র আকরকাঁটাগাছে পুষ্প-প্লাবন সবারই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই শুভ্র প্রস্ফুটনের এমন একটি সুষমা আছে, যা অন্যত্র দুষপ্রাপ্য। প্রস্ফুটন স্বল্পস্থায়ী হলেও ক্ষণিকের এই চমকটুকু আমাদের স্মৃতিতে সারা বছরই উজ্জ্বল থাকে।

আকরকাঁটার (Alangium salvifolium) অধিকাংশ গাছই ছোটখাটো ও এলোমেলো শাখা-প্রশাখায় ঝোপঝাড়েরই সমতুল্য। তবে কোনো কোনোটি আবার মাঝারি উচ্চতারও হতে পারে। কাণ্ড ম্লান-ধূসর, বাকল আঁশযুক্ত, স্থূল এবং শাখা-প্রশাখা পত্রাচ্ছন্ন। এর পাতা ঘন সবুজ। এই গাছ ছায়া-সুনিবিড়, তাই পথতরু হিসেবেও আদর্শ শ্রেণীর। শীতে সব পাতা ঝরে পড়ে। বসন্তের শুরুতেই নিষ্পত্র ডালপালায় পুষ্প-প্লাবন নামে। অসংখ্য সরু পাপড়িতে ফুলের গড়ন নান্দনিক। ফলের আকার পেয়ারার মতো, কিন্তু আকারে অনেক ছোট। মৃদু-মধুর নরম শাঁস সুস্বাদু, কিন্তু উগ্র গন্ধ অপ্রীতিকর।

কাঠ দীর্ঘস্থায়ী, রেখাচিত্রিত ও সুগন্ধি। উৎকৃষ্ট জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার্য। আয়ত সীমিত বিধায় এই কাঠে চাষের যন্ত্রপাতি, গরুর গাড়ি এবং আরও টুকিটাকি তৈরি করা যায়। বাদ্যযন্ত্রের জন্যও এই কাঠ উপযোগী। সুগন্ধি শিকড় কৃমিনাশক, চর্মরোগের প্রতিষেধক। ফলও ভক্ষ্য; জ্বর ও রক্তদোষে ব্যবহার্য। পাতার নির্যাস বাতের ব্যথায় ও বিষফোড়ায় উপকারী। এই গাছের আরেক নাম আঙ্কুরা।

মোকারম হোসেন