গত মার্চের মাঝামাঝি সুন্দরবনে গিয়ে প্রথম দেখা হয়ে গেল টিকেলের দামার সঙ্গে। টিকেলের দামা (Tickell’s Thrush) বাংলাদেশের বিরল পরিযায়ী পাখি। সকালের রোদের আলো যখন বনতলে ছড়িয়ে পড়ে, তার আগে থেকেই এই পাখিরা আহার করার জন্য ঘোরাঘুরি শুরু করে। বনতলে ঝরে পড়া পাকা রসাল ফল, আর্দ্র মাটিতে পতিত পাতা উল্টে ও নরম মাটি খুঁড়ে এরা খাবার খুঁজে বেড়ায়।

একই জায়গায় খাবারের প্রাপ্যতা থাকলে আসে প্রতিদিনই। আশপাশে পাকা বট ফলের গাছ থাকলে সেখানে গিয়েও শালিক, হরিয়ালদের সঙ্গে ফল খায়। সুন্দরবনের চাঁদপাইয়ে গিয়ে টিকেলের দামার এসব ক্রিয়াকলাপ পর পর তিনটি সকালে পর্যবেক্ষণ করেছি। বনতলে এই পাখি জোড়া পায়ে চড়ুই পাখির মতো করে লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটে। মানুষের উপস্থিতি টের পেলে ধীরে ধীরে পালিয়ে যায় বনঝোপে।

টিকেলের দামা দাগি বুক ও হলদে ঠোঁটের ভূচর পাখি। এ পাখি সাধারণত শীতের আবাসে একা, প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় থাকে। খাদ্যের তালিকায় আছে পোকা, লার্ভা, রসাল ফল। উষা ও গোধূলিবেলায় এরা বেশ কর্মচঞ্চল থাকে। এরা মুক্ত বন ও ফলবাগানে বিচরণ করে।

প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে পাখির পিঠের দিক ছাই-ধূসর, দেহের নিচের দিক নীল-ধূসর ও সাদা। ডানার পালকতল-ঢাকনি লালচে। মেয়ে পাখির পিঠের দিক জলপাই-বাদামি, নিচের দিকে সাদা, কালচে-বাদামি লম্বা দাগসহ বুকে ফিকে জলপাই-বাদামি ডোরা। উভয় পাখির চোখ বাদামি, চোখের বলয় হলুদ, ঠোঁট হলদে থেকে কমলা-হলুদ। পা ও পায়ের পাতা সামান্য বাদামি-হলুদ।

লিখেছেনঃ সৌরভ মাহমুদ
সুত্রঃ প্রথম আলো