বছর তিনেক আগের ঘটনা। মাধবীলতার খোঁজে রমনা পার্কে গিয়েছিলাম। মাধবীলতা পেলাম। ছবি তুলে চলে আসব, ঠিক তখনই চোখ পড়ে মাধবীলতার গাছটি জড়িয়ে বেড়ে ওঠা একটি লতানো উদ্ভিদের দিকে। চমৎকার দৃষ্টিনন্দন দুধসাদা রঙের ফুল থোকায় থোকায় ঝুলে আছে গাছটিতে। এই ফুল এর আগে কখনো দেখিনি।
ছবি তুলে একটি ফুল নিয়ে এগিয়ে যেতেই দেখা হয় একজন আলোকচিত্রী বন্ধুর সঙ্গে। তিনি সেদিন তরুপল্লব সংগঠনের গাছ দেখা কর্মসূচিতে অংশ নিতে রমনার বটমূলে যাচ্ছিলেন। আমিও তাঁর সঙ্গী হলাম। অনুষ্ঠানস্থলে উদ্ভিদবিদ্যার শিক্ষক দ্বিজেন শর্মার সঙ্গে দেখা। তাঁর সঙ্গে কথা হয় হাতের ফুলটি নিয়ে। তাৎক্ষণিকভাবে ফুলটি সম্পর্কে বেশি কিছু না বলে বললেন, বাসায় গিয়ে খোঁজ-খবর করে এর সম্পর্কে জানাবেন।
আমিও আর খোঁজ নিইনি। এর মধ্যে অনেক দিন পার হয়েছে, রমনায় আবার ফুল ফুটেছে। এবার আমি খোঁজখবর করতে উঠে-পড়ে লাগলাম। পেয়েও গেলাম ফুলটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। পেলে তো হবে না! সব নিয়ে চলে গেলাম নিসর্গী দ্বিজেন শর্মার বাড়ি। তাঁর সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেল ফুলটির নাম—বিউমন্টিয়া। কেউ কেউ বলেন বামনসিয়া।
বিউমন্টিয়ার উদ্ভিদবিজ্ঞানীয় নাম Beaumontia grandiflora। এরা Apocynaceae পরিবারের সদস্য। বিশাল ও ঘনসন্নিবিষ্ট পাতাযুক্ত বৃহৎ চিরসবুজ লতাগাছ। এর কচি ডাল অনেকটা গোলাপি ও রোমশ। পাতা দেখতে গন্ধরাজ বা চালতার মতো। ওপরে উজ্জ্বল সবুজ, নিচে ফ্যাকাশে। শীতের শেষে ও বসন্তকালে গাছের ডগায় থোকা থোকা দুধসাদা ফুল ফোটে। ফানেল আকারের এই ফুলে কোনো গন্ধ নেই।
দেয়াল কিংবা জাফরিতে দেওয়ার উপযোগী বিউমন্টিয়ার আরেক নাম নেপাল ট্রাম্পিট ভাইন। ইস্টার লিলি, হার্ডলেস ট্রাম্পিট, নেপালি সওয়ারিসহ বিভিন্ন নামেও ডাকা হয় তাকে। বিউমন্টিয়ার আদি নিবাস ভারতে।
-Prothom alo