বাঁকানো ও লম্বা সুচ-ঠোঁটের ছোট এই পাখির দেখা সারা দেশেই মেলে। দ্রুতগামী, বলা যায় তীরের ফলার মতো গতি। বন-বাগান তথা ঘন নারকেল-সুপারি বাগানের ভেতর দিয়েও দ্রুত গতিতে ওড়ে। ওড়ার ধরনটা শৈল্পিক। রংধনুর বাঁকের মতো অনেকটা। যে পথ ধরে উড়ে যাবে, সেই পথটাতে যদি একটা কাল্পনিক রেখা টানা যায়, তাহলে সেটা হবে অসংখ্য রংধনুর বাঁকের মতো। ডানা মেলে এক ধাক্কায় সামনে এগোবে ২০-৩০ ফুট, তারপর ডানা থাকবে বোজানো, তাই নিচের দিকে নেমে আসবে অনেকটাই, আবারও ডানা মেলে সামনের দিকে এক ধাক্কা, এভাবেই উড়বে। জোরালো ধাতব শব্দের মতো কণ্ঠ। ডাকটা প্রায় ‘টেক টেক’ ধরনের। ওড়ার পথে থেমে থেমে ডাকবে। বন-বাগানের মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গেলেও ডাক শুনে শনাক্ত করা যাবে। এত যে দ্রুত গতি, তবু থমকে যেতে পারে অবিশ্বাস্য দ্রুততায়, নামতে পারে অভীষ্ট লক্ষ্যে। সমভূমি অঞ্চলে এদের অভীষ্ট মূলত কলার মোচা তথা কলাফুলের মধু। সমতলে এরা বলতে গেলে পুরোপুরি কলাগাছনির্ভর। কলাফুলের মধুরেণু এদের এক নম্বর খাবার। বাসা করে কলাপাতার ছাতার তলায়।
রাতের আশ্রয়টাও নেয় প্রায় সময়েই কলার মোচার খোলা বা ছাতার তলায়। শিলাপাত হলে, জোর বৃষ্টি নামলে অথবা শীতের শিশির থেকে বাঁচার জন্য কলার মোচার ছাতার তলাটাই বেশি পছন্দ এদের। বৃষ্টি বা শিশিরে ভিজতে হয় না। কলার কাঁদির ফাঁকে বা ওপরেও আশ্রয় নেয় এরা। কলার পাতার ওপরে বসতে এরা খুবই ভালোবাসে। পাশাপাশি কলা বেশি পেকে গেলে অথবা অন্য ফলখেকো পাখিরা কলা খেতে শুরু করলে এরাও লম্বা সুচ-ঠোঁট কলার ভেতর ঢুকিয়ে দিয়ে পাকা কলার রস টেনে পান করে। আর মোচায় উল্টো হয়ে ঝুলে, কী নান্দনিক ভঙ্গিতে যে নলাকৃতি কলাফুল থেকে রস পান করে! সব কটি নল চাখা হয়ে গেলে দেয় উড়াল।
মূল খাদ্য এদের কলাগাছের ফুলের মধু। বিশাল একটা এলাকার কলাফুলের সন্ধান জানা থাকে এদের। এ ছাড়া মাকড়সাসহ ছোট পোকামাকড়ও খায়। তাল-খেজুরের রস অতি প্রিয় পানীয়। বাসার কাছে শত্রু গেলে বা বিপদ বুঝলে অথবা বুকে আনন্দ জাগলে এরা এক জায়গায় বসে দুই ডানা কাঁপিয়ে কাঁপিয়ে চরাচর জুড়ে দ্রুতলয়ে ডাকে। ঝড়ে কলার পাতা ছিঁড়ে গিয়ে বাসা-ডিম নষ্ট হলে শোকে কাঁদে এরা। কান্নার ভাষাটা আবার অন্য রকম। পরাগায়নে এরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। মোচাটুনির ইংরেজি নাম Little spider hunter। বৈজ্ঞানিক নাম Arachnothera Longirostra। শরীরের মাপ ১৬ সেন্টিমিটার।
সুত্রঃ শরিফ খান, প্রথম আলোতে প্রকাশিত