ক্রিকেটে জয়-পরাজয় থাকবেই। কিন্তু শুক্রবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে বাংলাদেশের হারটা দেশবাসীকে অবাক করে দিয়েছে। বাংলাদেশ কেন, অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর সামর্থ্য আছে ক্যারিবীয়দের। সে ক্ষেত্রে শুক্রবারের ফল প্রত্যাশিতই বলা যায়। টসে জিতে টাইগাররা মাত্র ৫৮ রানে অলআউট তা বাংলাদেশ তো বটেই ক্যারিবীয়রাও ভাবতে পারেননি। তাই ম্যাচ শেষে তাদের অধিনায়ক সামি বললেন, এতটা সহজভাবে জিতব তা কল্পনাও করতে পারেনি। অন্যদিকে সাকিব আল হাসান বলেছেন, বাজে খেলার ফল পেয়েছি আমরা। তবে এখনো কোয়ার্টার ফাইনালের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি। সত্যি কথা বলতে কি, শুক্রবার যদি বাংলাদেশ জিতেও যেত তারপরও সাকিবদের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত হতো না। ব্যাঙ্গালুরেতে আগের ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সব হিসাব পাল্টে দিয়েছে আইরিশরা। তিন ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের সমান দুই পয়েন্ট থাকলেও রান রেটে আইরিশরা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। বি গ্রুপে শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তারপর ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত ও ইংল্যান্ড। আইরিশদের অবস্থান পাঁচ নম্বরে। বাংলাদেশ রয়েছে নেদারল্যান্ডের উপরে। এ অবস্থায় সাকিবরা কোয়ার্টার ফাইনালে যাবে তা ভাবতেও সাহস পাচ্ছেন না কেউ। তারপরও সাকিব যা বলেছেন, ভুল বলেননি। গ্রুপে বাংলাদেশের এখনো বাকি রয়েছে ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নেদারল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচ। শক্তির বিচারে বাংলাদেশের অন্তত নেদারল্যান্ডকে হারানোর কথা। ইংল্যান্ড আর প্রোটিয়াসদের বিরুদ্ধেও জিতে যেতে পারে। যদিও শুক্রবারের ফল দেখে সবার ভেতরে ভয় ঢুকে গেছে। তারপরও দুই শক্তিশালীর বিরুদ্ধে টাইগাররা ম্যাচ জেতার সামর্থ্য রাখে। গত বিশ্বকাপে তো বাশাররা দক্ষিণ আফ্রিকাকে ধরাশায়ী করেছিল। ২০১০ সালে আবার ইংল্যান্ডের মাটিতেই ইংলিশদের নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছিল। এবারও পারলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৫৮ রানে অলআউট হয়ে পুরো জাতিই হতবাক। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না ক্রিকেটে এমন হতেই পারে। অনেক বড় বড় দলই অনেক সময় দুই অঙ্ক রান অতিক্রম করতে পারে না। বেশি দূরের কথা নয়, যে নিউজিল্যান্ডকে বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ করেছিল, তাদেরই কাছে গত বছর ভারতের মতো শক্তিশালী দল মাত্র ৮৪ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল। ১৯৯২ বিশ্বকাপে লিগ ম্যাচে ইংল্যান্ডের সামনে পাকিস্তান দাঁড়াতেই পারেনি। অথচ এই ইংল্যান্ডকে ফাইনালে হারিয়ে পাকিস্তান শিরোপা জয় করেছিল। সাকিব বলেছেন, এক ম্যাচ হারা মানেই সবশেষ হয়ে যাওয়া নয়। তার কথা যদি কেউ ফেলে দেন তাহলে ভুল করবেন। কেননা, ১৯৯৮ সালে কমনওয়েলথ গেমসে উত্তর আফ্রিকার কাছে বাংলাদেশ মাত্র ৬২ রানে অলআউট হয়ে যায়। এ নিয়ে তো সারাদেশে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। ম্যানেজারের পদ থেকে গাজী আশরাফ লিপু তাৎক্ষণিক পদত্যাগও করেন। আকরাম খানের অধিনায়কত্বও কেড়ে নেওয়া হয়। পরের বছরই ছিল বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অভিষেক। অনেকেই হতাশ হয়ে বলেছিলেন, স্বপ্নের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভরাডুবি ঘটবে। না, তা আর হয়নি। স্কটল্যান্ড ছাড়াও পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।

সুতরাং ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে দেশবাসী যতই দুঃখ পান না কেন! তা দূর হয়ে যেতে পারে পরবর্তী ম্যাচগুলোতে জ্বলে উঠে। এমন ভরাডুবির পর বিক্ষোভ হবে এটাই স্বাভাবিক। শুক্রবার তা বাড়াবাড়ির মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। দুই দলের বাসে ইট-পাটকেল নিক্ষেপতো ছিলই সাকিবের গ্রামের বাড়িতে ভাঙচুর করার চেষ্টা চালানো হয়।

এমন হারে দলের প্রতিটি খেলোয়াড় মানসিক যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। আর অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের অবস্থা কী হতে পারে তা নিশ্চয় সবার জানা। এ অবস্থায় তার বাড়িতে হামলা চালানোটা ঠিক হয়েছে কি না যারা এ জঘন্য কাজ করতে চেয়েছিলেন তারাই ভালো বলতে পারবেন। সাকিব সম্ভাবনার কথা বলছেন, এখন যদি খেলা ফেলে তাকে বাড়ির চিন্তা করতে হয়, তাহলে কী তিনি মাঠে ঠিকমতো খেলতে পারবেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে অলআউট হয়ে সাকিবরা জাতিকে অবশ্যই লজ্জা দিয়েছে। কিন্তু এটাতো ঠিক ক্রিকেটাররা জাতিকে কম দেননি। ক্রীড়াঙ্গনে সাফল্যের কথা যদি বলতে হয় বার বার তাহলে ক্রিকেটের নাম এসে পড়বে। ব্রাজিলকে অনেক দেশ চিনে ফুটবলের কারণে। ক্রিকেটাররাও বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের নাম পরিচয় করিয়েছেন দারুণভাবে। ম্যাচ হারলে ক্ষোভ-বিক্ষোভ হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তা যেন উগ্রতায় পরিণত না হয়। ধরে নিলাম বিশ্বকাপে আগামী তিন ম্যাচই বাংলাদেশ হেরে যাবে। তাহলে কী বাংলাদেশের ক্রিকেট শেষ হয়ে যাবে। নিশ্চয় না, শ্রীলঙ্কা এখন ক্রিকেটে অন্যতম শক্তিশালী দল। এক সময় তাদের কী করুণ হাল ছিল তা কী কারও অজানা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে টাইগাররা দাঁড়াতেই পারেনি। তার মানে এই নয় যে, আর দাঁড়াতেই পারবে না। ক্রিকেটাররা জাতিকে যা উপহার দিয়েছেন তাতে সবাই বিশ্বাস করে তারাই আবার জাতিকে উল্লাসে নাচিয়ে তুলবেন।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন