সুলভ দর্শন,স্থানীয় প্রজাতির পাখি। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, মালয়েশিয়া ও চীন পর্যন্ত এদের বিস্তৃতি রয়েছে। দেখা মেলে দেশের সর্বত্রই। বিশেষ করে রাস্তার পাশে বিদ্যুতের তারে দল বেঁধে বসে থাকে। রাতও কাটায় দল বেঁধে। গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে নেড়া বৃক্ষের ডালে বসে রাতযাপন করে। স্বভাবে সঙ্ঘচারী পাখি। শূন্যে উড়ে উড়ে পতঙ্গ শিকার করে। বৃত্তাকারে উড়তে পারদর্শী এরা। এদের শিকারের উপযুক্ত সময় ভোরবেলা এবং গোধূলীলগ্নে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে সারাদিন উড়তে থাকে, আর কর্কশ কণ্ঠে ডাকাডাকি করে। সুর শ্রুতিমধুর নয়। ডাকে ‘চেক-চেক-চেক’ শব্দে।
ফসলের জন্য ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে যথেষ্ট উপকার করে বিধায় কৃষকের বন্ধু হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এরা। উপকারী এ বন্ধুরা দিন দিন অসুলভ হয়ে পড়ছে নানা কারণে। এর মধ্যে প্রধান কারণটি হচ্ছে প্রজননে বিঘ্ন ঘটা। ওদের প্রজননের ক্ষেত্রে উপযুক্ত বৃক্ষের অভাব দেখা দিয়েছে। যেমনি কমে গেছে পুরনো কোটরওয়ালা গাছ তেমনি কমে গেছে বড় বড় তাল গাছের সংখ্যাও। ফলে প্রজাতির সংখ্যা স্থিতিশীল রয়েছে। এক যুগ আগেও অমনটি ছিল না। দেখেছি যেখানে সেখানে। প্রজাতিটির সঙ্গে বহুবার সাক্ষাৎ ঘটেছে আমার। তবে খুব বেশি কিছু জানার সুযোগ হয়নি বিধায় লেখার আগ্রহ সৃষ্টি হয়নি এতদিন। পরিশেষে যৎসামান্য তথ্যাদি সংগ্রহ করেছি নেত্রকোনা জেলার এক পাঠক বন্ধুর অনুরোধে। তিনি এ প্রজাতি সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
এ পাখির বাংলা নাম: ‘ধূসর আবাবিল’, ইংরেজি Ashy Wood Swallow। এরা ‘মেটে বনাবাবিল’ বা ‘অঞ্জন পাখি’ নামেও পরিচিত। এরা লম্বায় ১৯-২১ সেন্টিমিটার। দেহের অধিকাংশ পালকই ধূসর। কেবল বুক থেকে নিচের দিকটা গোলাপি-ধূসর। লেজের ডগা সাদা। নিতম্বের ওপর রয়েছে অর্ধচন্দ্রাকার সাদা বলয়। ঠোঁট রূপালি, ত্রিকোণাকৃতির। চোখের কোণে কাজল কালির টান। পা কালচে। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম।
প্রধান খাবার উড়ন্ত পোকামাকড়, ফড়িং, প্রজাপতি ইত্যাদি। প্রজনন সময় মার্চ থেকে জুন। বাসা বাঁধে গাছের কোটরে কিংবা তাল গাছের ডালের গোড়াতে। বাসা বানাতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে নরম ঘাস, চিকন লতা কিংবা গাছের শিকড় দিয়ে। ডিম পাড়ে ২-৩টি।
তথ্য সুত্রঃ আলম শাইন, ছবি – জি, এম ফ্রেজার