মুহম্মদ আব্দুল লতিফ সাংবাদিকতা ও লেখালেখির ক্ষেত্রে মু. আ লতিফ হিসাবে সমধিক পরিচিত। তিনি ১৯৪৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারী জেলা শহরের পুরানথানা এলাকার জামিয়া রোডের ওয়াহেদ মঞ্জিলে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম মো. আব্দুল ওয়াহেদ ও মাতা মরহুমা হাবিবা আক্তার খাতুন। তিনি স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৪ সনে এস.এস.সি এবং স্থানীয় গুরুদয়াল সরকারী কলেজ থেকে ১৯৬৯ সনে বি.এ পাশ করেন। কলেজে অধ্যায়নকালে ১৯৬৭ সালে ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী হিসাবে গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র সংসদে খেলাধূলা বিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন।
কলেজ জীবন থেকেই তিনি লেখালেখির সাথে জড়িত। এসময় তিনি বিশিষ্ট কলেজ শিক্ষক ও সাহিত্যিক অধ্যাপক জিয়া উদ্দিন আহমদ প্রতিষ্ঠিত সাহিত্য মজলিশ এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ নরেন্দ্র চন্দ্র ঘোষের সাহিত্য সংসদের একজন সক্রিয় সদস্য হিসাবে কাজ করেন। পরে তিনি বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তুলেন তরুণ লেখক গোষ্ঠী। এ গোষ্ঠীর উদ্যোগে বেশ ক’টি সাহিত্য ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে সংবর্ত, ইদানিং অন্যতম। স্বাধীনতা পরবতর্ী সময়ে তিনি সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হন। মাওলানা ভাসানী প্রতিষ্ঠিত ও সৈয়দ ইরফানুল বারী সম্পাদিত ‘হক-কথা’র রিপোর্টার হিসাবে কাজ শুরু করেন। পরবতর্ীতে তিনি ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত ‘তকবীর’ এবং দৈনিক ইনসাফ – এর সাথে যুক্ত হন। পরে তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক দেশ, দৈনিক আজাদ, দৈনিক দিনকাল, বাংলাবাজার পত্রিকা, মানবজমিন – এর জেলা প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্বপালন করেন। এরমধ্যে তার সম্পাদনায় কিশোরগঞ্জ থেকে পাক্ষিক নরসুন্দা নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয় যা ১৯৯৩ সনে সাপ্তাহিক নরসুন্দা’য় উন্নীত করা হয়। এছাড়াও কিশোগঞ্জ থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক মণিহার- এর সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি, দৈনিক শতাব্দীর কণ্ঠ ও দৈনিক আজকের সারাদিন – এর উপদেষ্টা সম্পাদক হিসাবে এগুলোর প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
বর্তমানে তিনি দৈনিক নয়া দিগন্ত, বাংলাদেশ বেতার এবং স্যাটেলাইট চ্যানেল ‘আরটিভি’র জেলা প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা এবং দৈনিক মানবজমিন- এর কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি হিসাবে “সেরা দশ” সংবাদকমর্ীর সম্মাননা লাভ করেন। ইতোমধ্যে তিনি দৈনিক নয়া দিগন্ত’র জেলা প্রতিনিধি হিসাবে বিশেষ সম্মাননা এবং বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি’র পদকও অর্জন করেছেন। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বিশেষ যত্নশীল ও অবদানের জন্য কিশোরগঞ্জ রিপোর্টার্স ক্লাবও তাকে সম্মাননা ও সংবর্ধনা প্রদান করেছে।
মূলত তিনি একজন সংবাদকর্মী হলেও সাহিত্য, ইতিহাস ও গবেষণা বিষয়েও তিনি অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন। ইতোমধ্যে তার সম্পাদনায় কিশোরগঞ্জ ইতিহাস সম্মেলন ২০০৪ – এর স্মারকগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এদিকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তার সম্পাদনায় কিশোরগঞ্জের ইতিহাস গ্রন্থ প্রণয়নের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে রয়েছে। কিশোরগঞ্জ জেলা পাবলিক লাইব্রেরি থেকে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক সাহিত্য সাময়িক সৃষ্টি’র সম্পাদক অধ্যাপক জিয়াউদ্দীন আহমদ – এর ইন্তেকালের পর তিনি এর সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সাংবাদিকতা, লেখালেখি ছাড়াও তিনি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছেন। তিনি ১৯৯৭-১৯৯৯ মেয়াদকালে কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি হিসাবে প্রেসক্লাবটির উন্নয়নে যথেষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। তার সময়েই প্রেসক্লাব চত্বরে নির্মিত হয় প্রেসক্লাব মুক্তমঞ্চ।
মুক্তমঞ্চের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন তৎকালীন এলজিআরডি মন্ত্রী, বর্তমানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আলহাজ্ব মো. জিল্লুর রহমান। এ সময়ে সাংবাদিকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি এবং উন্নয়নে তিনি পিআইবি’র সহযোগিতায় সংবাদ প্রশিক্ষণসহ নানামূখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তার এই অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রেসক্লাব তাকে “সম্মানসূচক” সদস্যপদ প্রদান করে। বর্তমানে তিনি কিশোরগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি’র দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও সৃষ্টি সাহিত্য সংগঠন, কিশোরগঞ্জ ইতিহাস পরিষদ, কবি মনির উদ্দিন ইউসূফ স্মৃতি পরিষদ, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরাম কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা, জেলা স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন কমিটি’র সভাপতি এবং কিশোগঞ্জ জেলা বেসরকারি গ্রন্থাগার ফেডারেশনের আহ্বায়কসহ নানা সামজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃত্ব পালন করছেন। তিনি একাধিকবার কিশোগঞ্জ রোটারী ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জেলা শিল্পকলা একাডেমী, কিশোরগঞ্জ রাইফেলস ক্লাব এবং কিশোরগঞ্জ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কার্যকরি কমিটির সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান জেলা পাবলিক লাইব্রেরি’র সাধারণ সম্পাদক হিসাবে লাইব্রেরির উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকার কারণে তিনি সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। বিশেষ করে লাইব্রেরি ভবনের ত্রিতল নির্মাণে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তরুণ ও যুবকদের পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে এবং তাদেরকে লাইব্রেরিমুখী করে তুলতে তিনি নানা উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এজন্য আবৃত্তি, বিতর্ক, চিত্রাংকন ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজনের মাধ্যমে তরুণ ও যুবকদের উজ্জ্বীবিত ও উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াস নেন। তার সময়ে জেলা পাবলিক লাইব্রেরি আরো গতিময় ও আর্কষণীয় হয়ে উঠেছে। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও অনুভূতির প্রতিও শ্রদ্ধাশীল।
তিনি আল-জামিয়াতুল ইমদাদিয়া ও ঐতিহাসিক শহীদি মসজিদের কার্যকরি কমিটির একজন সদস্য। তিনি লেখালেখি, সমাজকর্ম ও সাংবাদিকতার পাশাপাশি খেলাধূলা পছন্দ করেন। ফুটবল তার প্রিয় খেলা, তার ক্রীড়াঙ্গনের অন্যান্য বিষয়ও তিনি বেশ উপভোগ করেন। তার স্ত্রী বেগম রোকেয়া একজন গৃহিনী । তিনি এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। একজন স্বজ্জন ব্যক্তি হিসাবে তিনি সকলের নিকট সমাদৃত।
লিখছেনঃ আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ।
০১৭১৪-৩৫৪৯৫০
জনাব মু,আ লতিফ কে নিয়ে, তথ্যনির্ভর লিখাটির জন্য- অভিবাদন জানবেন। ধন্যবাদ।
একজন ভালো সাংবাদিকের জীবনবৃত্তান্ত তুলে ধরায় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ।