শিউলি ফুলের গাছ লম্বায় ৪-৫ মিটার বড় হয়। বড় টবে বা ড্রামে রোপণ করা যায়।গাছ দেখতে তেমন সুদৃশ্য না হলেও তারকাকৃতি সাদা এবং কমলা বর্ণের কেন্দ্র ও বোঁটা বিশিষ্ট পাপড়িযুক্ত ফুল সবার মন আকর্ষণ করে। মালা গাঁথায় এই ফুল অদ্বিতীয়। শরতকালে ফুল ফোটে। এই ফুল রাতে ফোটে। যার মৃদুগন্ধে চারদিক স্বর্গীয় হয়ে উঠে।ভোরে ফুল ঝরে পড়ে। বীজ হতে চারা জন্মে এবং বর্ষাকালে টবে লাগাতে হয়। শিউলী গাছের টব শোবার ঘর বা ড্রয়িং রুমের কাছে রোদ পায় এমন স্থানে রাখতে হয়।ফুল ফোটা শেষ হলে গাছ ছেঁটে দিতে হয়।
(বৈজ্ঞানিক নাম: Nyctanthes arbor-tristis) হচ্ছে নিক্টান্থেস (Nyctanthes) প্রজাতির একটি ফুল। এটি দক্ষিণ এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব থাইল্যান্ড থেকে পশ্চিমে বাংলাদেশ, ভারত, উত্তরে নেপাল, ও পূর্বে পাকিস্তান পর্যন্ত এলাকা জুড়ে দেখতে পাওয়া যায়। এটি শেফালী নামেও পরিচিত। এই ফুল পশ্চিমবঙ্গের ও থাইল্যান্ডের কাঞ্চনাবুরি প্রদেশের রাষ্ট্রীয় ফুল। শিউলি গাছ নরম ধূসর ছাল বা বাকল বিশিষ্ট হয় এবং ১০ মিটারের মত লম্বা হয়। গাছের পাতা গুলো ৬-৭ সেন্টিমিটার লম্বা ও সমান্তরাল প্রান্তের বিপরীতমুখী থাকে। সুগন্ধি জাতীয় এই ফুলে রয়েছে পাঁচ থেকে সাতটি সাদা বৃতি ও মাঝে লালচে-কমলা টিউবের মত বৃন্ত। এর ফল চ্যাপ্টা ও বাদামী হৃদপিণ্ডাকৃতির। ফলের ব্যাস ২ সেন্টিমিটার এবং এটি দুই ভাগে বিভক্ত। প্রতিটি ভাগে একটি করে বীজ থাকে।এই ফুল শরৎকালে ফোটে। এর ফুলগুলি রাতে ফোটে এবং সকালে ঝরে যায়। শরৎ ও হেমন্ত কালের শিশির ভেজা সকালে ঝরে থাকা শিউলি অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য তৈরি করে।
এই ফুলের আবার অনেক গুলো নাম রয়েছেঃ
# কোরাল জেসমিন # পারিজাত # শেফালিকা # পারিজাতা # পারিজাতাকা # রাগাপুস্পি # খারাপাত্রাকা # প্রজক্তা
শিউলির আরেক নাম পারিজাত! হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীতে অনেক বার এসেছে শিউলি ফুল বা পারিজাত এর কথা।
কৃষ্ণের দুই স্ত্রী- সত্যভামা ও রুক্মিণীর খুব ইচ্ছে তাদের বাগানও পারিজাতের ঘ্রাণে আমোদিত হোক। কিন্তু পারিজাত তো স্বর্গের শোভা! কৃষ্ণ স্ত্রীদের খুশি করতে চান। তাই লুকিয়ে স্বর্গের পারিজাত বৃক্ষ থেকে একটি ডাল ভেঙ্গে এনে সত্যভামার বাগানে রোপণ করেন, যার ফুল রুক্মিণীর বাগানেও ঝরে পরে সুগন্ধ ছড়ায়। এদিকে স্বর্গের রাজা ইন্দ্র তো ঘটনাটা জেনে খুব রেগে যান! তিনি বিষ্ণু অবতারের উপর গোপনে ক্রুদ্ধ ছিলেন। এই কারনে তিনি কৃষ্ণকে শাপ দেন কৃষ্ণের বাগানের পারিজাত বৃক্ষ ফুল দেবে ঠিকই কিন্তু ফল কোনদিন আসবে না, তার বীজে কখনও নতুন প্রাণের সঞ্চার হবে না।
পূজোয় শিউলিই এমন ফুল যেটি মাটিতে ঝড়ে পরলেও তাকে দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদন করা হয়ে থাকে।
পারিজাতিকা নামে এক রাজকন্যা সূর্যের প্রেমে পরে তাকে কামনা করেন। কিন্তু শত চেষ্টা করেও পান না। তাই তিনি আত্মহত্যা করেন। তার দেহের ভস্ম পারিজাতবৃক্ষ রূপে ফুটে ওঠে। যে কিনা নিরব ব্যর্থ প্রেমের প্রতীক! সূর্যের স্পর্শ মাত্র যে ঝরে পরে অশ্রুবিন্দুর মত। পৃথিবীর বুকে তুমি তার দুঃখের চিহ্ন দেখবে শত শত অশ্রুবিন্দুর মত সে সুগন্ধি ছড়িয়ে থাকে চারদিকে, আমরা এখন তাকে শিউলি রূপে দেখি তার শুভ্র দেহে গৈরিক বসনে।
সুত্রঃ উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ব্লগ