কিশোরগঞ্জে বিদ্যুতের বিল প্রস্তুতকারীদের (মিটার রিডার) দায়িত্বহীনতা ও ফাঁকিবাজির কারণে বিদ্যুৎ গ্রাহকেরা ভৌতিক বিলের শিকার হচ্ছেন। গ্রাহকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাড়তি বিল। গ্রাহকদের কাছে সরবরাহকৃত বিলের সঙ্গে মিটার রিডিংয়ে কোনো সামঞ্জস্য পাওয়া যায় না। মিটারে ব্যবহূত ইউনিটের সংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি বিল করা হচ্ছে বলে গ্রাহকেরা অভিযোগ করেন। ফলে মাসের পর মাস গ্রাহকেরা হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।

স্থানীয় পিডিবি ও গ্রাহক সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ শহরের আবাসিক ও অনাবাসিক গ্রাহকের মিটারে ব্যবহূত ইউনিট নেওয়ার জন্য চারজন বিল প্রস্তুতকারী কর্মরত আছেন। পাশাপাশি বিল বিতরণের জন্য দৈনিক ভাতার ভিত্তিতে নিয়োজিত আছেন আটজন কর্মী। কিন্তু বিল প্রস্তুতকারীরা গ্রাহকদের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে না গিয়ে মিটারের ব্যবহূত ইউনিটের সংখ্যা বাসায় বসে প্রস্তুত করেন।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কিশোরগঞ্জ নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, বিক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা ভিড় করেছেন। প্রত্যেকের হাতে বাড়তি বিলের কপি। শহরের আখড়াবাজার এলাকার আবদুর রহিম নামে এক গ্রাহক জানান, ফেব্রুয়ারি মাসে যে বিলের কপি তিনি পেয়েছেন তাতে সর্বশেষ ইউনিট লেখা রয়েছে ২২ হাজার ৯৭০ ইউনিট। অথচ যেদিন বিলের কপি সরবরাহ করা হয়েছে, সেদিনই মিটারের ব্যবহূত ইউনিটের পরিমাণ পাওয়া গেছে ২২ হাজার ৫৬৩ ইউনিট। অর্থাৎ প্রকৃত ইউনিটের চেয়ে ৪০৭ ইউনিটের বিল বেশি করা হয়েছে।

আবদুর রহিম অভিযোগ করেন, তাঁদের এলাকায় বিল প্রস্তুতকারী ওয়াহিদুজ্জামান গ্রাহকদের বাসায় যান না। নিজ বাসায় বসেই তিনি বিল তৈরি করে থাকেন। শহরের বয়লা এলাকার গ্রাহক আবুল কালাম মাহবুবের বিলে দেখা গেছে,এক হাজার ১১৪ ইউনিট বেশি লেখা হয়েছে। পূর্ব তারাপাশা এলাকার গ্রাহক আজিজুননেসার ত্রুটিযুক্ত মিটারে মাসে গড় বিল করা হতো ২৫০ ইউনিট। পরে তিনি বিদ্যুৎ বিভাগের মাধ্যমে নতুন মিটার লাগিয়েছেন পাঁচ মাস আগে। নতুন মিটারে গড়ে মাসে ইউনিট ব্যবহূত হয় ১০২ ইউনিট। কিন্তু বিল প্রস্তুতকারী মিটারের কাছে না এসে বাসায় বসে সেই পুরোনো মিটারের গড় বিল ২৫০ ইউনিট করেই বিল প্রস্তুত করে থাকেন।

বিল প্রস্তুতকারী ওয়াহেদুজ্জামান জানান, সব সময় বাসায় বাসায় যাওয়া সম্ভব হয় না। কারণ প্রতি মাসে এক হাজার ২৫০টি মিটার থেকে তাঁর মিটার রিডিং নেওয়ার কথা। অথচ জনবলের অভাবে তিনি দুই থেকে আড়াই হাজার মিটারের রিডিং নেন। যে কারণে বাসায় যাওয়া সম্ভব হয় না। পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী খায়রুল কবির ভৌতিক বিলের কথা স্বীকার করে জানান, অভিযুক্ত মিটার রিডারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেসব গ্রাহক বাড়তি বিল জমা দিয়েছেন সেগুলো ফেরত দেওয়ার নিয়ম নেই। তবে পরবর্তী মাস থেকে বিল কমিয়ে প্রকৃত মিটার ইউনিট সমন্বয় করা হবে।সুত্রঃ প্রথম আলো