ত্রেতা যুগে দশরথ তনয় অযোধ্যায় যার আবাস,
বাবার ইচ্ছায় রাম ১২ বছরের জন্য যায় বনবাস।
দোসর হল ভাই লক্ষণ আর পত্নী সিতা অঙ্গনা ,
দশটি হায়ন তারা করে গুজরান ইতস্ততঃ মনা ।
ইতস্ততঃ অতিবাহনের পর এক মৃগয়া-ভূমি পায়,
পন্চবটি নামের বনানীটি সিতার মনে ধরে যায় ।
সিতার তুষ্টে পন্চবটিতে কাটছিল তাদের ভাল ,
দৈবক্রমে একদিন মহেশ্বরের অবলীলা শুরু হল।
হঠাৎ লঙ্কাপতি রাবনের বোন এখানে এসে যায়,
রাবনের বোন শুর্পনখা, রামকে দেখতে পায় ।
শুর্পনখা, যখন সুদর্শন রামকে দেখতে পায়,
মুগ্ধ হয়ে পড়ে সৌম্যদর্শন রামের প্রনয়লীলায়।
জাদুমুগ্ধ হয়ে শুর্পনখা বলে রামকে গিয়ে,
আমাকে অবশ্যই তোমার করতে হবে বিয়ে।
আমি যে বিবাহিত, রাম শুর্পনখাকে কয়,
তোমাকে শাদি করাতো আমার সম্ভব নয়।
ঘরে আমার আছে পত্নী দিওনা আমায় পীড়ন,
তোমার সাথে হতে পারেনা আমার পাণিপীড়ন।
শুর্পনখা না মানে প্রবোধন অনেক অনুনয়ে,
রাম বলে, লক্ষনের সাথে আবদ্ধ হও পরিনয়ে।
লক্ষন যখন শুর্পনখাকে শাদিতে রাজি না হয়,
সীতার ভাগ্যাকাশে তখন হয় দুঃখের উদয়।
দুঃখের খড়গ সিতার উপর নামে অকারন,
অগ্নিমূর্তি শুর্পনখা সীতাকে করে আক্রমন।
লক্ষণ ও কিন্তু শুর্পনখাকে ছাড়ার পাত্র নয়,
শুর্পনখার নাক কেটে পাঠিয়ে দেয় লংকায়।
শুর্পনখা তখন রামকে শায়েস্তা করার জন্য,
ভাই ‘খর’ কে পাঠায়, সঙ্গে ১২০০০ সৈন্য।
শক্তিশালি দুই ভাই রাম আর লক্ষনের হাতে,
‘খর’ আর ১২০০০ সৈন্যের কল্লা হল ফতে।
অবশেষে শুর্পনখা নতুন এক কুট চাল চালে,
ভাই রাবনের কাছে সীতার রূপের কথা বলে।
লংকার রাজা বিশ্রবা মুনির তনয় রাবন,
সীতার রূপের কথা শুনে বইছে মনে শ্রাবণ।
রাবন ছিল অসাধারণ বুদ্ধিমান এক বীর,
ভেবে চিন্তে কিছুক্ষণ রণকৌশল করলেন স্থির।
কৌশল হিসেবে তিনি বললেন ভাই মারীচকে ,
হরিণে বেশে ভুলিয়ে দূরে আনবে রাম-লক্ষনকে।
হরিণের বেশে রাম লক্ষনকে ভুলিয়ে নিবে দুরে,
সেই সুযোগে সীতাকে আমি নিব হরণ করে।
মারীচ কিন্তু এত বোকা নয়, ছিল যথেষ্ট ধীমান,
বলে, এসব কিছুর দরকার নেই শোন ভাই রাবন।
মারীচের কথা না শুনে,তাকে হরিণের বেশে পাঠায়
রাবন নিজে যায় ভিক্ষুকের বেশে রামের এলাকায়।
হরিণের প্রতি পূর্বে থেকেই সীতার ছিল দুর্বলতা,
ছদ্মবেশী মায়া হরিণ দেখে এটাই চেয়ে বসল সীতা।
ভাই লক্ষনকে রেখে রাম, সীতার পাহারায়,
সীতার পছন্দের মায়া হরিণ শিকার করতে যায়।
হরিন বেশী মারীচ মারা যায় রামের ছোড়া তীরে,
মারা যাবার আগে ‘হা লক্ষন’ বলে চিৎকার করে।
এই চিৎকারের শব্দ শুনে লক্ষণকে বলে সীতা,
তারাতারি যাও রামকে গিয়ে কর সহযোগিতা।
সীতাকে অরক্ষিত রেখে লক্ষণ যেতে নাহি চায়,
সীতার বারবার অনুরোধের পর লক্ষণ রাজি হয়।
তবে যাবার বেলায় লক্ষণ সিতাকে সতর্ক করে।
এইযে ‘লক্ষনরেখা’ দিলাম, যাইওনা এর বাইরে।
এই সুযোগে রাবন এসে ভিক্ষার ছলনা করে,
রাবন ভিক্ষা প্রার্থনা করে এসে সীতার কুটিরে।
সীতা তখন লক্ষন রেখার বাইরে নাহি আসতে চায়,
তখন ছদ্মবেশী ভিক্ষুক রাবন গভীর ক্রোধ দেখায়।
বাধ্য হয়ে সীতা যখন লক্ষন রেখার বাইরে পা দেয়,
রাবন তখন সিতাকে নিয়ে লঙ্কায় রওয়ানা দেয়।
পথিমধ্যে রামের বাবা দশরথের বন্ধু গরুরের তনয়,
জটায়ু নামক বিশাল পাখি সীতা হরণে বাধা দেয়।
তবে যুদ্ধে হেরে গিয়ে সে আঘাতপ্রাপ্ত হবার ফলে,
সুযোগ বুঝে রাবন সীতাকে নিয়ে লঙ্কায় যায় চলে।
সিতাকে উদ্ধার করতে রাম, লক্ষণ , হনুমান ,
আরও বিশাল বাহিনী নিয়ে লংকা করে আক্রমণ।
লঙ্কাকে ধ্বংস করে তারা সিতাকে করে উদ্ধার,
মহেশ্বরের লীলা এখানেও বুঝি শুরু হল এবার।
অযোধ্যা রাজ্যের প্রজারা সীতাকে করতে অবলা,
সীতার গলায় পরিয়ে দেয় অসতীত্বের মালা।
সীতার প্রতি কেমন করে বিধি হইল বাম,
সবার সাথে সীতাকে অবিশ্বাস করে রাম।
সীতার কলঙ্কে ছিল তুলসীর ভূমিকা উল্লেখ্য,
রামের কাছে দিয়েছিল তুলসী মিথ্যা সাক্ষ্য।
বিধাতার কাছে সীতা দেবী করে প্রার্থনা,
মিথ্যা কলঙ্কের জ্বালা বিধি আরতো সহেনা।
এই গাঁজনার বিচার বিধি, কইরো তুমি তার,
সারা জীবন গ্লানি পায় যেন ব্রহ্মাণ্ডের উপর।
তৎক্ষণাৎ সীতার আর্জি মহেশ্বর করে স্বীকৃতিদান।
এত গুনের পরেও তুলশী, ভূ’তে আজো হয় অপমান।
সীতার জন্য রাম করে পরীক্ষার আয়োজন,
অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে সতীত্ব করতে হবে প্রমাণ।
সতীত্ব প্রমাণ করতে সীতা, শিখার ভিতর যায়,
অগ্নিদেবের নির্দেশে অগ্নি সীতাকে নাহি ছুঁয়।
অগ্নিপরীক্ষায় সীতার সতীত্ব প্রমাণ হয়ে যায়,
খাঁটি সোনা সীতা এবার পতি রামের ঘরে যায়।
সীতার চরিত্র নিয়ে পুনঃ প্রজাদের নিন্দা শুরু হলে,
দুঃখ ও মান-অভিমানে সীতা পাতালে যায় চলে।