কিশোরগঞ্জ জেলার যশোদল ভট্টাচার্য পাড়ার এক সম্ভ্রান্ত ও শিক্ষিত ব্রাহ্মণ পরিবারে ১৯৪১ সালের ১লা নভেম্বর ড.দূর্গাদাস ভট্টাচার্য জন্মগ্রহন করেন ।তাঁর পিতামহ স্বর্গীয় কালিদাস তর্কসিদ্ধান্ত ।সাত পুরুষ ধরে তার পরিবারের পূর্বপুরুষগণের অধিকাংশ শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন ।তার পিতা অবশ্য শিক্ষকতা ছেড়ে পরবর্তীকালে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অর্থ ও হিসাব ব্যবস্হাপনার বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন ।ধর্মীয় অঙ্গনে তার পিতা ও পিতামহের অসংখ্য অনুসারী বাংলাদেশ ও ভারতে রয়েছে । অধ্যাপক ভট্টাচার্য ১৯৬৮ সালে ১ আগস্ট বরিশাল আইন কলেজের অধ্যক্ষ স্বর্গীয় উপেন্দ্রনাথ চ্যাটার্জীর প্রথম কন্যা শ্রীমতি সাবিত্রী চ্যাটার্জীর সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ।

সাবিত্রী ভট্টাচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এম এ পাস করেন ।গ্রন্হাগার বিজ্ঞানে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা করেন এবং ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড ডিগ্রি লাভ করেন ।তিনি এডাবের গ্রন্হাগারের দায়িত্বে ছিলেন দীর্ঘদিন ।বর্তমানে মানবাধিকার ও মহিলা ক্ষমতায়নের আন্দোলনের সঙ্গে এবং একাধিক সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ।ডা.ভট্টাচার্যের পিতা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অংশগ্রহন করেছেন ।স্বীয় পারিবারিক ঐতিহ্যরক্ষনে আপোষহীনতার নীতি তার মধ্যে সবসময়ই কাজ করে ।অধ্যাপক ভট্টাচার্য প্রথম জীবন থেকে আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন পরে ১৯৫৮ সালে কৃতিত্বের সাথে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উওীর্ণ হন ।১৯৬০ সালে গুরুদয়াল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষায় উওীর্ণ হয়ে ১৯৬২ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে বাণিজ্যে স্নাতক ডিগ্রি ও ১৯৬৪ সালে ব্যবস্হাপনা বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন ।১৯৬৫ সালের শেষ দিকে তিনি জগন্নাথ কলেজে বাণিজ্যে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন ।

ইতোমধ্যে তার দুটি গবেষণামূলক গ্রন্হ প্রকাশিত হয় ।তদানিন্তন পাকিস্তানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তার গ্রন্হ পাঠ্যপুস্তক হিসাবে গৃহীত হয় ।বাংলাভাষায় এ উপমহাদেশের তিনিই প্রথম ব্যবস্হা্পনা ও পরিচালনা বিষয়ে প্রামাণ্য গ্রন্হ রচনা করেন ।১৯৬৭ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিষয়ে প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন ।প্রভাষক হিসাবে কর্তব্য সম্পাদনে্র পাশাপাশি ১৯৭০ সালে ‘The People’ দৈনিক পত্রিকায় বানিজ্য বিষয়ক পাতায় সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন ।

স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বিপ্লবী সরকার প্রদও দায়িত্ব পালন করেন ।প্রথমবারের মত ১৯৭৩ সালে তিনি গবেষণামূলক Business Review  নামক একটি জার্নাল প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহন করেন এবং ঐ জার্নালের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ।পরবর্তীকালে Dhaka University Studies, Part-C, Staff Development Review সহ দেশে ও বিদেশে গবেষণামুলক একাধিক পত্রিকার সম্পাদকীয় বোর্ডের সদস্য হিসেবে কার্য সম্পাদন করেন ।স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহন করেন ।ঐ সময় মুজিবনগর সরকারের শরণার্থী প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন প্রক্লপের প্রশাসক ও হিসাব কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন ।১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যুগ্ন সম্পাদক হিসাবে নির্বাচিত হন ।পরবর্তীকালে পরপর দু’বার  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন ।

১৯৭৪ সালে তদানিন্তন সোভিয়েত সরকারের বৃওি নিয়ে ‘লেলিনগ্র্যাড ইনস্টিটিউট অব লাইট এন্ড টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ’ এ প্রায় তিন বছর পিএইচডি অভিসন্দর্ভ প্রস্ততের কার্যে নিয়োজিত থাকেন ।১৯৭৭ সালে মস্কো টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটে তার থিসিস পরীক্ষার জন্য উপস্হাপন করেন ।

ঐ বছর মস্কো টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটে পরীক্ষক কাউন্সিলের সর্বসম্মত সুপারিশের ভিওিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাউন্সিল অব মিনিস্টার্সের অধীন সুপ্রিম এ্যাটেশটেশন কাউন্সিল তাকে পিএইচডি ডিগ্রী প্রদান করেন ।তার থিসিসের বিষয়বস্তু ‘বাংলাদেশের বস্ত্র শিল্পে শ্রম উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির কতিপয় উপায়সমূহ’ তিনি পিএইচডি সমাপ্তির জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত কোর্সগুলোর পরীক্ষায় ডিস্টিংশনসহ উওীর্ণ হন ।

এ পর্যন্ত তার দশটি গবেষণামূলক গ্রন্হ/মনোগ্রাফ প্রকাশিত হয়েছে ।যে সমস্ত দেশে তার প্রবন্ধ/গ্রন্হ প্রকাশিত হয়েছে তা হলো-ভারত,জাপান,কানাডা,ও তদানিন্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন ।তিনি অথিতি বক্তা হিসেবে বিভিন্ন দেশে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিয়েছেন ।মোট তিনটি ভাষায় বাংলা,ইংরেজি ও রুশ ভাষায় তার প্রকাশনা রয়েছে ।জাপানি ভাষায় তার শিল্প সম্পর্কে মডেল অনুদিত হয়েছে ।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্হাপনা স্টাডিজ বিভাগের প্রবীণতম অধ্যাপক এবং ইএমবিএ প্রোগ্রামের পরিচালক ।এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে তিনি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বহু প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ডের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন ।কিশোরগঞ্জ জেলা সমিতির সঙ্গেও তার নিবিড় সম্পর্ক দীর্ঘদিনের ।