ঢাকার ফলের দোকানগুলোতে কদাচিৎ পাকা আলুবোখারার দেখা মেলে। ফলটি আসে ভারত কিংবা পাকিস্তান থেকে। তবে শুকনো ফল সারা বছরই বাজারে পাওয়া যায়। ছেলেবেলায় জ্বর হলে মুখে রুচির জন্য আমলকীর পাশাপাশি এই ফলটিও আমাদের খাওয়ানো হতো। এসব ছাড়াও এই ফলের ব্যবহার বহুমাত্রিক।

এই ফলগাছটি প্রথম দেখি ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারে। এটি রোজেসি পরিবারের গাছ, চেরি ফুলের নিকটাত্মীয়। প্রাক-বসন্তে নিষ্পত্র গাছে সাদা রঙের অসংখ্য ফুল ফোটে। আয়তাকার পাঁচ পাপড়ির ফুলগুলোর মাঝখানে থাকে এক থোকা পরাগকেশর। পরিপূর্ণ প্রস্ফুটিত গাছের এই সৌন্দর্যও মনোহর। কিন্তু যেহেতু গাছটি ফলের, সেহেতু ফুলের এই সৌন্দর্য আমাদের খুব একটা আগ্রহী করে না। আমরা বরং অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি, কখন আসবে সেই কাঙ্ক্ষিত ফল। জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই ফল (Prunu domestica) পাকতে শুরু করে।

উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের গুল্ম বা ছোট আকৃতির গাছ। কাণ্ড ও ডালপালা ধূসর রঙের। ডালপালার বিন্যাস অনেকটা বিক্ষিপ্ত ধরনের। পাতা ঘনবদ্ধ, ডিম্বাকৃতির; কিনারা করাতের দাঁতের মতো অমসৃণ। সরু ডালপালার গায়ে ঝুলে থাকা ফলগুলো অনেক সময় পাতার আড়ালে অদৃশ্য থাকে। ফল আয়তাকার বা ক্ষেত্রবিশেষে লম্ব-আয়তাকার। পাকা ফলের রং কালচে লাল, ওপরে একধরনের সাদা আবরণ তৈরি হয়; টক-মিষ্টি স্বাদের। ভেতরের শক্ত বীজ থেকে চারা হয়। বিশেষ করে, পোলাওয়ের সঙ্গে মুখরোচক হিসেবে ব্যবহার্য; ঔষধি গুণেও অনন্য। আদি আবাস ইউরোপ।

ঢাকা শহরে আলুবোখারার চারা রোপণ করে সফল হয়েছেন প্রবীণ কৃষিবিজ্ঞানী খায়রুল আলম বিল্লাহ। অনেকটা শখের বশেই ২০০৩ সালের দিকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে আলুবোখারার একটি চারা এনে লাগান বনানীর আই-ব্লকের ৫ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাড়িতে। আর দশটি গাছের মতো স্বাভাবিকভাবেই পরিচর্যা করেছেন গাছটির। ভাবেননি, এত দ্রুত ফল পাবেন। কিন্তু তাঁকে অবাক করে দিয়ে ২০০৫ সাল থেকেই ফল দিতে শুরু করে গাছটি।

নয় বছর পর ২০১১ সালে এটির উচ্চতা এখন চার মিটারের মতো, আর এ বছর মোট উৎপাদন প্রায় ৩০ কেজি। এমন একটি গাছ পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজনের চাহিদাও মেটাতে সক্ষম। খায়রুল আলমও তা-ই করেছেন। প্রতিবছর পরিচিত, স্বজনদের পাঠিয়েছেন তাঁর এই শখের ফলটি। তিনি জানালেন, শুধু ফলই নয়, ২৫ থেকে ৩০টির মতো চারাও তৈরি করে বিলিয়েছেন স্বজন আর বন্ধুদের। সেসব গাছেও আবার কয়েক বছর ধরে ফল ধরছে। দেশি ফলের পাশাপাশি এই ফল চাষ করলে আমদানি-নির্ভরতা অনেকটাই কমবে।

-প্রথম আলো