ghashforingসবুজ ঘাসের পৃষ্ঠ ছুঁয়ে ঘাসফড়িং রাধিকার দেশে, স্বপ্নের বুনট চলে সময়ের ডেকোরেসনে; নীরবতার  ক্যানভাসে নতুনের প্রচ্ছদপদ স্বর্গপানে-নতুনের বার্তা নিয়ে, নতুনত্ব নিয়ে।

পরিচিত সেই ঘাসফড়িং
ঘাসফড়িংয়ের উষ্ণ আবেদনে কিংকর্তব্যবিমূঢ় জোনাকি, সভ্যতার সব ভালবাসা গুমোট অন্ধকারে, কখনের পর কথন… সপ্তাশ্চর্যের সব রং ছুঁয়ে একাকার, হিমালয়ের ন্যায় বিশালতা আর বিজলীর মতই ক্ষণপ্রভা; একটুকরো প্রেম সমস্ত স্পন্দন ছুঁয়েও থাকে বোধের বাইরে। অন্ধকারের গহীন অরণ্যে রূপকথার সেই ঘাসফড়িং প্রকৃতির খুব কাছাকাছি, রংধনুর সব রং নিয়ে ভালবাসায় পূর্ণ; চোরাগুপ্তা বিষ্ময়ী আঁধার মানসকোঠরের গভীরে সময়ের ভাঁজ খুলে অন্তর্লীণ, ঘাসফড়িংয়ের হাসিতে মুক্তা ঝরে না, কিন্তু জগৎবিখ্যাত মোনালিসাও ম্লান কথনের রোমান্টকিতায় ট্রয় নগরীরর হেলেনেরও ঊর্ধ্বে; পরিচিত সেই ঘাসফড়িং – খুব কাছে তবুও যেন কত দূর!

ঘাসফড়িংয়ের অনুচ্চ নিন্দাবাদ !
ঘাসফড়িংয়ের সন্তানেরা আজব কিছু নয় তবু আজব কিছুই করে, চোখে জল নেই তবু কাঁদে, রাষ্ট্রীয় বৈরি হাওয়ায় শংকিত, দ্বিধাগ্রস্থ; প্রত্যহ খুন আর গুমের ঘটনায় ওদের অনুচ্চ নিন্দাবাদ শালুক তলায়, … এ যেন শামসুর রাহমানের “উদ্ভট উটের পিছনে চলেছে স্বদেশ”।

ঘাসফড়িংরা কখনোই কাছে আসে না
ঘাসফড়িংরা কখনোই কাছে আসে না, তবে পাশাপাশি থাকে । কাল থেকে কালান্তরে ওরা জন্ম নেয় পৃথিবীর গর্ভে এঁদো নির্জনতায়। শতাব্দীর কোল জুড়ে চলে তাদের ভাঙ্গা-গড়ার খেলা; দৈহিক কিংবা মানবিক সব স¤পর্কই আপেক্ষিক, প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধ ছুঁয়ে ওরা বেঁচে থাকে জীবন্মৃত শাপলা শালুকের মত! অস্তিত্বের ছায়া ঢাকা ক্যানভাসে পরিবর্তনের রঙ ঘোলাটে তবুও প্রজননের কালিক রেখায় ঘাসফড়িংয়ের গুচ্ছ গুচ্ছ প্রেম ধূসর।

আজ ঘাস ফড়িংয়ের গায়ে হলুদ
নির্জনতার গহীনে স্বপ্ন ডাঙার মৃদু উল্লাস, অন্ধকারের সমস্ত অনুভূতি জুড়ে সহস্র বছরের সঞ্চিত নিবেদনের পরিসমাপ্তি, নায়াগ্রা জলপ্রপাতের সমস্ত সৌন্দর্য আজ ঘাসফড়িংয়ের হৃদয় ক্যানভাসে, ইনকা সভ্যতার ‘মাচু পিচুর’ পরিকল্পনার প্রচ্ছদপট চেতনার রর্ন্ধ্রে রন্ধ্রে, জগৎবিখ্যত হিমালয়, আল্পস, মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতায় হৃদয় মন্দির – কাস্পিয়ান,  ভিক্টোরিয়া, রাশিয়ার বৈকাল হ্রদের শীতলতায় ভরপুর; কুরিল দ্বীপের নিটোল নির্জনতা ঘাসফড়িংয়ের স্বপ্নের পৃষ্ঠ জুড়ে, আমাজানের বিশালতা মনের ভাঁড়ারে গোপন দহলিজে, রূপসী বাংলার সমগ্র সবুজের আল্পনায় রাঙা ঘাসফড়িংয়ের ডানা, আন্তঃকোঠর জুড়ে প্রশান্ত মহাসাগরের গভীর শীতলতা – মুগ্ধতার পুনঃপুনঃ উল্লাস, কারণ আজ ঘাস ফড়িংয়ের গায়ে হলুদ।

হানিমুন কবে জানা নেই
মন্ত্রিবর্গ নেই, নেই আমলা কিংবা কামলা! নেই উকিল কিংবা মুক্তার, ব্যারিস্টার কিংবা ডাক্তার! আন্দামানের ক্রমাগত ঢেউয়ের মতই স্মৃতির রোমন্থন, সময়ের কাঠগড়ায় ঘাসফড়িং ভাবনাহীন উন্মত্ততায় চিৎপটাং- যন্ত্রনাক্লিষ্ট নীরব সময়ে কেবল বয়ে চলে কীর্তনখোলার দমকা হাওয়া, পুরনো সেই প্রেমিকেরাও আজ ব্যস্ত, প্রেমের উদ্যানে মৃত দূর্বাঘাস; দিগভ্রান্ত জীবনের মধ্যভাগের উপর কর্কটক্রান্তি রেখা – কেবল কেন্দ্র নেই; পুরনো সমন্ধগুলো আজ মৃত নদীর মত, … স¤পর্কের পঁচনে ভ্যাঁপাসে গন্ধ, ক্রমাগতই নতুনের সন্ধানে ঘাসফড়িং; পাংশুটে মেঘের জালের মতই সিদ্ধান্তের দোলাচলে ঘাসফড়িং, … হানিমুন কবে জানা নেই।

আজ ঘাস ফড়িংয়ের বিয়ে
আজ ঘাস ফড়িংয়ের বিয়ে; শুভক্ষণ জেনেও বাহ্যিক কোন পরিপাটি নেই, নেই উত্তরের ভেনিসের ন্যায় ব্যতিব্যস্ততা; হৃদয়ে শান্ত সকাল-যেন তরঙ্গহীন সমুদ্রের বধূ! বিশ্বজ্ঞানের রাজ্যে ঐতিহ্যের সিঁড়ি বেয়ে জোনাকি শতাব্দীর প্রাচীন আদিমতায় মুচকি হাসে, বিনয়াবত ঘাস ফড়িংয়ের দিকে বাঁকা চোখে তাকায়, সেন্টমার্টিনের প্রবল উন্মত্ততার ন্যায় দৃষ্টিতে তার রোমান্টিকতার ভরা জোয়ার- লজ্জা জলাঞ্জলি দিয়ে দুবাহুতে টেনে নেয়, আলিঙ্গনে উষ্ণ হয়ে ওঠে পৃথিবী, চৈনিক সভ্যতার উৎকর্ষতা আজ তাদের হৃদয় ক্যানভাসে, অতঃপর চুমুতে সিক্ত- জটিল দেহের পঠন-পাঠন; চুমুতে চিনি নেই কিন্তু তা চিনির চেয়েও মিষ্টি। উপলব্ধি ও বাস্তবতা ছুঁয়ে পূর্ণতার পথে ঘাসফড়িং দম্পত্তি।

ঘাসফড়িংয়ের মৃত্যু!

শূন্য উদ্যানে জোনাকির বিলাপ; কি ব্যাপার? খবর নিয়ে জানা গেল ঘাসফড়িংয়ের মৃত্যু হয়েছে! আত্মপ্রতারণা আর দ্রৌপদীর শাড়ির মত ব্যতিব্যস্ততার চাপে হৃদরোগে মৃত্যু ঘটেছে; হৃদয় থেকে বিলাপের গন্ধ মুছতে মুছতে জোনাকি বলে- যাহ ! ব্যাপার না; নতুন ঘাসফড়িংয়ের সন্ধানে জোনাকি।


লিখেছেনঃ  মুনশি আলিম
বি এ অনার্স (বাংলা), এম এ (বাংলা) জাবি, এমফিল শাবিপ্রবি
জাফলং, গোয়াইনঘাট, সিলেট
সার্বিক যোগাযোগ: ০১৭৪১৪৩৬৮৫১