এই বছরের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে দেশের প্রায় সকল দৈনিক পত্রিকাতেই একটি অতি পুরনো খবর নতুন করে ছাপা হয়েছে। খবরটি সাদামাটা-পুরনো। আমি সেই আশির দশকে মাসিক নিপুণ পত্রিকায় এই খবরটি ছেপেছিলাম। এর পরে এটি অনেক পত্রিকায় অনেকবার ছাপা হয়েছে। জাতিসংঘ এই বিষয়ে একের পর এক সম্মেলন করছে। এই খবরের বিষয়বস্তু বিশ্ব উষ্ণায়ন ও সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এখন অতি স্বাভাবিক একটি ঘটনা। কারণ সেই সূত্র ধরেই আমরা জানি যে, ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠ অন্তত দুই মিটার ওপরে উঠে আসবে। আমরা এটিও শুনে আসছি যে, ভারত মহাসাগরের দেশ মালদ্বীপ ও বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ এক তৃতীয়াংশ অঞ্চল সমুদ্র গভীরে তলিয়ে যাবে। এই খবরের প্রেক্ষিতে মালদ্বীপ তাদের অধিবাসীদের জন্য নতুন ভূমি খুঁজছে।

kg-haor

বাংলাদেশ অবশ্য কোন কালেই হাতে আগুন না লাগা পর্যন্ত সেটি নেভানোর চেষ্টা করে না। ফলে পঞ্চাশ বছর পরের ঘটনা বাংলাদেশের নীতি-নির্ধারকদের কানে কোন আওয়াজ তোলেনি। বাংলাদেশের কোন কোন অঞ্চল এর ফলে তলিয়ে যাবে তার মানচিত্র বাংলাদেশেই মুদ্রিত আকারে পাওয়া গেলেও এদেশের কাউকে এইসব অঞ্চলের মানুষদের জন্য কোন সহানুভূতি দেখাতেও শুনিনি। যেসব জনপ্রতিনিধি এসব এলাকা থেকে নির্বাচিত হয়ে দিনের পর দিন সংসদে কথা বলছেন তারাও এই বিষয়ে কোন কথা বলেন না। অথচ আমাদের বর্তমান সরকারের অনেক হোমড়া-চোমড়া এই এলাকার অধিবাসী। কেউ কেউ একেবারে সেই অঞ্চলেই বাস করেন। আবার কেউ কেউ সেইসব অঞ্চলের তীরে বসবাস করেন। দেশের এক তৃতীয়াংশ যদি সমুদ্রে তলিয়ে যায় তবে তাতে অন্তত শ’ খানেক সংসদ সদস্য রয়েছেন। কিন্তু আমরা কি স্মরণ করতে পারি যে, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে বিগত দুই দশকে কোন একটি দিন এজেন্ডা করে বা বৈঠক মুলতবি করে এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে? আমরা কি স্মরণ করতে পারি যে, এই বিষয়ে কোন দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাব উঠেছে সংসদে। কোন মন্ত্রী বা অন্য কেউ কি এই বিষয়ে কোন বিবৃতি দিয়েছেন? সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই অঞ্চলে এখন যারা বাস করেন তারাও নিজেরা এ বিষয়ে মোটেই সচেতন নন।

haor_anchal

এবার যে খবরটি ছাপা হয়েছে তাতে একটু ভিন্ন মাত্রা আছে। এতোদিন বিশেষজ্ঞরা বলতেন, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়লেও বাড়তে পারে। কেউ কেউ এমনটিও বলতেন যে, এই সময়ে সমুদ্র এতোটা উপরে উঠবে না। কেউ কেউ বলতেন আসলে এমনটি হবেই না। নানা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নিয়ে এতোদিন এই খবরটি আমরা পাঠ করতাম। কিন্তু এবার বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, আগামী পঞ্চাশ বছরে সমুদ্র যে অন্তত দুই মিটার ওপরে উঠবে সেটি ফেরানোর কোন উপায় মানুষের হাতে নেই। এমনকি যে গ্রীন হাউস গ্যাস এই অভিশাপের জন্য দায়ী তাকে যদি একেবারে শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা হয় তবুও সমুদ্র পৃষ্ঠ উপরে উঠে আসার বিষয়টি প্রতিরোধ করা যাবে না।

বিষয়টি আমাকে ভাবায়, কারণ আমার পিতৃভূমি এই খড়গের নিচে রয়েছে। দুনিয়ার বিজ্ঞানীরা যে তথ্য দিয়েছেন তার মূল বিষয়বস্তু সঠিক হলে আমার দাদার বাড়ী, নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরী থানার কৃষ্ণপুর গ্রামটি পঞ্চাশ বছর পর আর থাকবে না। আমার পিতার কবর, আমার দাদা-দাদী ও রক্তসম্পর্কের স্বজন কারও কবর আমরা দেখতে পাবো না। প্রায় দুই কোটি লোকের একটি জনগোষ্ঠী কেবল বিপন্ন হবে না_ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। আমার ভবিষ্যৎ বংশধররা ওখানে বসবাস করতে পারবে না। আমাদের ফসলের মাঠ, সবুজ ঘেরা মাটি আর দিগন্তবিস্তৃত হাওর আমরা খুঁজে পাবো না। বর্তমানের মিষ্টি পানির হাওরগুলো লবণাক্ত পানিতে ভরে থাকবে।হাওর

ভাটিতে ভৈরব বাজারের সেতু এবং উজানে গারো পাহাড়, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় পঁচিশ হাজার বর্গকিলোমিটার (সূত্র: উইকিপিডিয়া) এলাকা জুড়ে অশ্বখুরাকৃতি বা বাটির মতো একটি সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল যাকে ভাটি অঞ্চল বা হাওর অঞ্চল হিসেবে চেনা হয় সেটা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এই অঞ্চলটির পাশাপাশি ভৈরবের ভাটিতে মেঘনার দুই তীরের আশেপাশে বিপুল এলাকা ও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা এমনকি বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন এই মহাপ্রলয়ের শিকার হবে। বিপর্যয় নেমে আসবে ঘরে ঘরে।

এমনকি এই বিপদের আগেই হাওর অঞ্চল ভারতের টিপাইমুখ বাঁধের ফলে আরও এক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। তবে টিপাইকে যেভাবেই আমরা দেখি না কেন, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির বিষয়টিকে এখন কোনভাবেই এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়।হাওর

অঞ্চলটি যে কতো বড় তার একটি ধারণা দেয়ার জন্য আমি উল্লেখ করতে পারি যে, এই এলাকার উত্তরে গারো ও খাসিয়া পাহাড় এবং ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরাম রাজ্য এবং পূর্বে ভারতের আসাম ও মনিপুর রাজ্য অবস্থিত। দেশের অভ্যন্তরে এর উত্তর-পশ্চিমাংশে রয়েছে নেত্রকোনা, পশ্চিমাংশে রয়েছে কিশোরগঞ্জ, দক্ষিণ দিকে আছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পূর্বদিকে আছে মৌলভীবাজার ও সিলেট এবং উত্তর-পূর্বদিকে আছে সুনামগঞ্জ জেলাসমূহের সমতল বা পাহাড়ি অঞ্চল।হাওর

এই এলাকায় মোট ৪৩৩টি হাওরের মাঝে ৪৭টি বড় হাওর রয়েছে। এই এলাকায় সর্বমোট ৬৩০০ বিলের মাঝে ৩৫০০ স্থায়ী, যাতে শুকনো মওসুমেও পানি থাকে এবং ২৮০০ অস্থায়ী বিল রয়েছে যা শুকনো মওসুমে শুকিয়ে যায়। এলাকাটি যে কেবল নিচু তা নয়, দিনে দিনে এটি আরও নিচু হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতি বছর ২০ মিলিমিটার হিসেবে এই এলাকাটি ডেবে যাচ্ছে। গত কয়েক শ’ বছরে এর কোন কোন অংশ ১০ মিটার পর্যন্ত ডেবে গেছে বলেও মনে করা হচ্ছে। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে হাওর অঞ্চলের সাধারণ উচ্চতার তিনটি স্তর আছে। সবচেয়ে নিচু এলাকাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড়ে ১০ ফুট উঁচু, পরেরটি ১৫ ফুট এবং সবচেয়ে উঁচুটি ২০ ফুট। তবে এর গভীর বিল অঞ্চলগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠের ২০-৫০ ফুট নিচে অবস্থান করে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের এলাকা ভারতের চেরাপুঞ্জি হাওর এলাকার উত্তর প্রান্ত থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বর্তমানে হাওর এলাকার সবচেয়ে সচল নদীর নাম ধনু। এটি ভৈরবের কাছে এসে মেঘনায় মিশেছে। ভারতের আহু বা বরাক নদী থেকে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীসহ শ’ খানেক নদী হয়ে হাওরে বিপুল পরিমাণ জলরাশি প্রবেশ করে। হাওরএইসব পানি ধনু-মেঘনা সাগরে বহন করে। বলা হয়ে থাকে যে, ভৈরবে রেলসেতু নির্মিত হওয়ার সময় মেঘনার মুখটিকে ছোট করে ফেলার ফলে হাওর অঞ্চলে এখন যে বর্ষা হয় তা এর আগে হতো না। তখনও এলাকাটি বন জঙ্গলে ভরা ছিল এবং জনবসতি বলতে গেলে ছিলই না। কিছু মৎস্যজীবী ও পরিশ্রমী মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে ওখানে বসবাস করতো। তাদের সিংহভাগই ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক; কৈবর্ত, জলদাস, নমশূদ্র, মুচি, চামার ইত্যাদি বর্ণের। তবে দেড়-দু’ শ’ বছর আগে ভৈরবের ভাটিতে মেঘনার দুই পাড় বর্তমান কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ হাওর এলাকায় অভিবাসন করে। এই জনগোষ্ঠী আবাদি বলে পরিচিতি। এরা ধর্মে ছিল মুসলমান। এখনও হাওর অঞ্চলের জনবসতি পুরো দেশের চাইতে অনেক কম। প্রাকৃতিক কারণে যেখানে-সেখানে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করতে না পারার জন্য নতুন করে বসতি গড়ে ওঠার গতি শ্লথ। হাওর এলাকায় পুরো বর্ষাকালে কোন কর্মসংস্থান না থাকার জন্য বিপুল সংখ্যক মানুষ এই এলাকা থেকে এখন বাইরে আসার চেষ্টা করছে। হাওর এলাকায় দেশের খাদ্য চাহিদা বা ভাতের প্রয়োজনের বিপুল অংশ উৎপাদিত হয়। হাওর অঞ্চল পুরো দেশের মিষ্টি পানির মাছের বিপুল চাহিদার বিরাট অংশ পূরণ করে। ধারণা করা হয় যে, হাওর এলাকায় প্রচুর খনিজ বা অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। দুঃখজনকভাবে এই এলাকাটি কেবল অবহেলিত নয়, এর উন্নয়নে কোন সরকার কোন ভূমিকা পালন করেনি।হাওর

হাওর অঞ্চলে বসবাসকারী প্রায় সত্তুর লাখ ও হাওরের ওপর নির্ভরশীল বা হাওর পাড়ে বসবাসকারী আরও প্রায় দেড় কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা এখন নিদারুণভাবে সংকটাপন্ন ও বিপন্ন। অন্যদিকে উপযুক্ত নীতিমালার অভাবে এবং সুষ্ঠু, সমন্বিত, বাস্তবসম্মত ও কার্যকর কর্ম পরিকল্পনা নাথাকার ফলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এই অঞ্চলের সম্পদ ও সম্ভাবনাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করা হচ্ছেনা।

হাওর অঞ্চলটি দেশের অন্য অঞ্চলের চাইতে কেবলমাত্র ভূপ্রাকৃতিক দিক থেকেই আলাদা নয়, বরং এর সংকট-সম্ভাবনা ও মানুষের জীবন-জীবিকার ধরনও অন্যদের চাইতে পুরোপুরি আলাদা। এই হাওর-জনপদ ধান ও মৎস্যসহ বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদের উৎস্য এবং অনন্য সম্ভাবনাময় হলেও বাস্তবে এই অঞ্চলটি খুবই পশ্চাদপদ, অনগ্রসর এবং ভীষণভাবে অবহেলিত। হাওর অঞ্চলের উন্নয়নের প্রতি এখনই দৃষ্টি পড়েনি। বরং অনেক আগেই এই এলাকার উন্নয়নের কথা ভাবা হয়। সেই ভাবনা থেকেই এই এলাকার উন্নয়নের জন্য ১৯৭৭ সালে হাওর উন্নয়ন বোর্ড গঠন করা হয় (অধ্যাদেশ ৯-১৯৭৭)। এর সদর দপ্তর স্থাপন করা হয় কিশোরগঞ্জে। কিন্তু ১৯৮২ সালে সেটি বিলুপ্ত করা হয়। পরে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সূত্র নং পাসম-উঃ৫/বিবিধ-১৯/২০০০/৩৮৩ তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০০০ (২৭ ভাদ্র ১৪০৭) অনুসারে ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০০ সালের গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আবার সেটি হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ড নামে গঠিত হয়। তবে এই বোর্ড দুই পর্বের কোন পর্যায়েই এই এলাকার উন্নয়নে কোন কার্যকর ভূমিকা পালন করেনি। স্মরণযোগ্য যে, উভয় সময়েই প্রধানমন্ত্রী এই বোর্ডের প্রধান ছিলেন। এই বোর্ডের গঠন সম্পর্কে এপ্রিল ৭, ২০০১ তারিখের বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় বলা হয়, এর চেয়ার পারসন থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। অন্য সদস্যরা হলেন, মন্ত্রীবর্গ; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়; পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়। এছাড়াও বোর্ডে আছেন প্রতিমন্ত্রী-পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এবং সরকার কর্তৃক মনোনীত সংশ্লিষ্ট এলাকার ৩ জন সংসদ সদস্য। গেজেট অনুসারে এই বোর্ডের সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব।হাওর

বোর্ডের ব্যবস্থাপনা গতিশীল করার জন্য এর একটি কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। এর আহ্বায়ক হলেন পানি সম্পদমন্ত্রী। এতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। অন্য যারা সদস্য আছেন তারা হলেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট সদস্য।

হাওর উন্নয়ন বোর্ডের বর্তমান মহাপরিচালক জনাব গোলাম কিবরিয়া গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০০৯ রাতে আমাকে ফোনে জানিয়েছেন যে, আগস্ট ২০০৯-এ হাওর ও জলাশয় উন্নয়ন বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তিনি আরও জানান যে, সেই বোর্ডে নেত্রকোণার সংসদ সদস্য (নেত্রকোণা-৪, মদন মোহনগঞ্জ খালিয়াজুরী) রেবেকা মমিন, সুনামগঞ্জের সংসদ সদস্য জনাব আবদুল মান্নান এবং বাগেরহাটের সংসদ সদস্য শেখ হেলালকে সদস্য করা হয়েছে। বোর্ডের অন্য সদস্যরা পদাধিকার বলেই সদস্য হয়ে থাকেন।

গেজেট বিজ্ঞপ্তি অনুসারে বোর্ডের কাজ হলো:

ক) হাওর ও জলাভূমির সার্বিক উন্নয়নের জন্য মন্ত্রণালয়/সংস্থা ও স্থানীয় সরকারের মাঝে সমন্বয় ওসহযোগিতা করা। তারা একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা আছে।

খ) বোর্ড স্থানীয় চাহিদা অনুসারে প্রকল্প প্রণয়ন করবে এবং স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করবে_ তাদের কাজের মাঝে এটিও আছে। গ) এছাড়া আছে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প পরিবীক্ষণ করার কাজ।

বিজ্ঞপ্তিতে বোর্ডকে ১৪টি অধিক্ষেত্রও চিহ্নিত করে দেয়া হয়েছে। ক্ষেত্রগুলো হলো:

১) অধিক ফলনশীল ধান ও অন্যান্য শস্য আবাদ সম্প্রসারণ। ২) মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন ৩) হাঁস-মুরগি ও উন্নত জাতের গবাদি পশু পালনে উৎসাহ প্রদান। ৪) হাওর জলাভূমির উপযোগী বনায়ন সৃষ্টি/সংরক্ষণ। ৫) পানিতে জন্মায় এমন ফলমূল চাষাবাদ বৃদ্ধিকরণ ৬) ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প স্থাপন ও বিদ্যুতায়ন ৭) হাওরের গাছপালা, পশুপাখী ও প্রাণী সংরক্ষণ ৮) যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ৯) পানির পরিকল্পিত ও সুষ্ঠূ ব্যবহার ১০) বন্যার ক্ষয়ক্ষতি রোধ ১১) সমবায় প্রকল্প গ্রহণে উৎসাহ দান ১২) অবকাঠামো উন্নয়ন ১৩) শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন ১৪) জলাবদ্ধতা ও ঢেউজনিত ভূমিক্ষয় রোধ।

কিন্তু কোনভাবেই এই বোর্ড কার্যকর কোন ভূমিকা পালন করেনি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর নয় মাস অতিক্রান্ত হলেও এই বোর্ডের কোন সভা হয়নি। এমনকি কার্যনির্বাহী কমিটিরও কোন সভা হয়নি। এইসব সভা হবারও কোন সম্ভাবনা নেই। বর্তমান অর্থমন্ত্রী জনাব এএমএ মুহিত সাহেবের নেতৃত্বে একটি হাওর ঘোষণা তৈরি হয়েছিল ২০০৮ সালে। একই বছর তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি হাওর কমিটির মাধ্যমে সেই ঘোষণাটিকে সরকারিভাবে স্বীকৃতিও দিয়েছিল। সেটি হাওরের জাতীয় কর্মপরিকল্পনা নামে পরিচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ হাওরের সমস্যাগুলোর প্রতি সরকার এখনও কোন দৃষ্টি দেয়নি। যদি এভাবে চলতে থাকে তবে পঞ্চাশ বছর পর আমাকে বলতে হবে যে, এক সময়ে হাওর এলাকায় আমার একটি দাদার বাড়ি ছিল; এক সময়ে সেখানে মানুষ বাস করতো তবে এখন তাতে হাঙ্গররা বসবাস করে। কামনা করি, তেমন দুর্ভাগ্য যেন না হয়!

zabberমোস্তাফা জব্বার ,
ঢাকা, ০৪ অক্টোবর ২০০৯
[লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কি-বোর্ড ও সফটওয়্যার এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ-এর প্রণেতা ]