জীবন ফিরে পাচ্ছে মৃতপ্রায় নরসুন্দা। দখলদারদের আগ্রাসনসহ নানা কারণে হারিয়ে যেতে বসেছিল একসময়ের প্রমত্তা নদীটি। ছিল না কর্তৃপক্ষীয় কোনো উদ্যোগও। অবশেষে প্রশাসনের দৃষ্টি পড়েছে। উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে নদীটি খননের। আশা করা হচ্ছে, শিগগিরই নরসুন্দার বুকজুড়ে বইবে জলধারা। পাল তুলে না হোক, ইঞ্জিনচালিত নৌকা ছুটবে নানা গন্তব্যে।নরসুন্দা নদীকে ঘিরে ‘লেকসিটি’ গড়ে তুলতে কোটি কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে কিশোরগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। ‘মহাপরিকল্পনা’ নিয়ে ঢেলে সাজানো হচ্ছে শহরকে। এর সুবাদে শহরের বুক চিরে বয়ে চলা নরসুন্দা আবার ফিরে পাচ্ছে নিজেকে। শুরু হচ্ছে খননকাজ। আগামী মাসের ৮ তারিখে আলোচিত ‘নরসুন্দা নদী পুনঃখনন ও তৎসংলগ্ন এলাকার উন্নয়ন’ প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে।জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী নরসুন্দা হোসেনপুর উপজেলার কাউনা এলাকা থেকে শুরু হয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের মধ্য দিয়ে পূর্ব দিকে ইটনার চৌগঙ্গায় ধনু নদীতে গিয়ে মিশেছে। কর্তৃপক্ষীয় অবহেলায় উৎসমুখ বন্ধ হয়ে নদীটি বিভিন্ন স্থানে বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে।

এ সুযোগে নরসুন্দায় বেপরোয়া দখলবাজি চলেছে এক দশক ধরে। কিশোরগঞ্জ সদরেই নদীর ৩০ একর জমি বেদখল হয়ে গেছে। এ ছাড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র গৌরাঙ্গ বাজারে জ্ঞানদাসুন্দরী ব্রিজ, স্টেশন সড়ক, ঈশাখাঁ সড়ক, বড়বাজার, বত্রিশ, মনিপুরী ঘাট, একরামপুর, বয়লা, পাগলা মসজিদ, গুরুদয়াল কলেজ, আখড়া বাজার ও শোলাকিয়া এলাকায় দুই তীরের বাসিন্দারা মাটি ভরাট করে নদীটি ক্রমে দখল করে নেয়। এসব কারণে শহর ঘিরে বড় কাজে হাত দিতে পারছিল না পৌর কর্তৃপক্ষ।বত্রিশ এলাকার বাসিন্দা জহিরুল আলম ও মনিপুর এলাকার ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, নরসুন্দা নদী দখলমুক্ত করে খননের দাবি দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে পৌরবাসী অনেক আন্দোলন-সংগ্রামও করেছে। অবশেষে পৌর কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিয়েছে। এ উদ্যোগ সফল হলে তা হবে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী গৌতম প্রসাদ চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নরসুন্দা প্রকল্প অনুমোদনের পর এর জরিপকাজ শেষ হয়েছে। নদী পুনঃখননের ডিজাইন ড্রইংয়ের কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডাব্লিউএম)। পানিপ্রবাহ ঠিক রাখতে ৩২ কিলোমিটার নদী খনন করা হবে। আর পৌর এলাকার তিন কিলোমিটার নদীর দুই পাড় বাঁধাই, ফুটপাত, রাস্তা, পার্ক, দৃষ্টিনন্দন বেশ কয়েকটি সেতু ও ঘাট নির্মাণের ভৌত কাজের ডিজাইন করছে আরেকটি প্রতিষ্ঠান। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এগুলো আমাদের হাতে চলে আসবে।

আশা করছি ৮ মে কাজের দরপত্র আহ্বান করা যাবে। কাজটি বাস্তবায়ন করবে এলজিইডি। ‘পৌরসভার মেয়র মাজহারুল ইসলাম ভুঁইয়া জানান, নরসুন্দা প্রকল্প অনুমোদনের পর একটি মহাপরিকল্পনা করে শহরের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। বর্তমানে প্রায় ৫০ কোটি টাকার কাজ চলছে। এর আগেও কিছু কাজ হয়েছে। নদী খননের পর আরো বড় কয়েকটি কাজ হাতে নেওয়া হবে। তিনি আরো জানান, নরসুন্দা প্রকল্পটি একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। যারা নদী দখল করে রেখেছে, তাদের নদী থেকে স্থাপনা সরিয়ে নিতে হবে। এ তিক্ত কাজটি সহজ হবে না। সুত্রঃ কালের কন্ঠ