কোন নদীর অববাহিকা হচ্ছে সেই নদীর দুই তীরবর্তী জলপ্রবাহ অঞ্চল এবং নদীর উৎসমুখ থেকে নিম্নাঞ্চল যা কিনা অন্য কোন বড় নদীতে গিয়ে পতিত হয়েছে অথবা সমুদ্রে গিয়ে মিশেছে। সেই অর্থে তুইভাই, বারাক, সুরমা, কুশিয়ারা, কালনী, ঘোড়াউত্রা সহ অন্যান্য শাখা নদী সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে মেঘনা অববাহিকা। পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য অববাহিকা-ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনাই হচ্ছে জলবিদ্যায় সর্বজন গ্রহনযোগ্য তত্ত্ব; কারণ কোন অববাহিকার উজানের সমস্ত কর্মকাণ্ডই সেই অববাহিকার নিম্নাঞ্চলে অভিঘাত তৈরী করতে সক্ষম, এবং এই জন্যই পানিবিজ্ঞানীদের মধ্যে একটি কথা প্রচলিত আছে, “আমরা সবাই অববাহিকার নিম্নাঞ্চলে বাস করি”, যার অর্থ হচ্ছে এই যে, কোন অববাহিকার উজানে ভূমি-উন্নয়ন, পরিবর্তন, কিংবা পানি ব্যবস্থাপনার যে কোন পরিকল্পনা নেওয়ার আগেই নিন্মাঞ্চলে এর সম্ভাব্য অভিঘাত নির্ণয় করা জরুরী।

অববাহিকা-ভিত্তিক পানি সম্পদ উন্নয়নের দৃষ্টিকোণ থেকে টিপাইমুখ বাঁধ এবং ফুলেরতল ব্যারাজ কিংবা অন্য যেকোন স্থাপনা নির্মাণের পুর্বেই পুরো অববাহিকার বিভিন্ন অঞ্চলে নদীর প্রবাহের পরিমাণ, নদী সমতা, ভূমিব্যবহারের ধরন, মাটি এবং শীলার প্রকৃতি ও গুণাগুন, বিদ্যমান পরিবেশ-প্রতিবেশের সমস্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে প্রস্তাবিত বাঁধের দ্বারা সৃষ্ট অভিঘাতের সম্ভাব্য পরিমাণ এবং সে অভিঘাত হ্রাস করার পদ্ধ্বতি নির্ণয় করা বাঞ্চনীয়। কিন্তু, তুইভাই-বারাক নদী ভারতে এবং সুরমা-কুশিয়ারা-কালনী-মেঘনা বাংলাদেশে অবস্থিত হওয়ার কারণে, এ পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে যৌথভাবে অববাহিকা-ভিত্তিক কোন পরিবেশ অভিঘাত নিরুপন সমীক্ষা পরিচাননা করা হয়নি, যেটা কিনা অববাহিকার উজানে পানি-সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত যেকোন প্রকল্প গ্রহনের পুর্বশর্ত হওয়া বাঞ্চনীয়। প্রস্তাবিত টিপাইমুখ বাঁধের দ্বারা সৃষ্ট পরিবেশগত অভিঘাত নির্ণয়ের নিমিত্তে ২০০৭ সালে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুৎ উন্নয়ন সংস্থা একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে। সেই সমীক্ষাতে বাংলাদেশের উপর কি পরিমাণ পরিবেশ-প্রতিবেশগত অভিঘাত হতে পারে সে বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয়নি, এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত অববাহিকা অঞ্চলের নদী কিংবা ভূমি-ব্যবহার সংক্রান্ত কোন তথ্য-উপাত্তই সংগ্রহ করা হয়নি। অনুরুপভাবে, বাংলাদেশের দুইটি সুংস্থা (বন্যা নিয়ন্ত্রন সমন্বয় সংস্থা এবং পানি সম্পদ মডেলিং ইন্সটিটিউট) ১৯৯৪ এবং ২০০৭ সালে আলাদা দুইটি সমীক্ষায় টিপাইমুখ বাঁধের ফলে সৃষ্ট বাংলাদেশের উপর সম্ভাব্য অভিঘাত নিরুপণের চেষ্টা করে। উপরোক্ত দুইটি সমীক্ষাতে মূলতঃ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সংগৃহিত নদী এবং প্লাবনভূমির তথ্য-উপাত্তই ব্যবহার করা হয়েছে। টিপাইমুখ বাঁধের পক্ষে সরকারী এবং বেসরকারী কোন কোন প্রতিষ্ঠান ১৯৯৪ সালের সমীক্ষাটিতে (যা কিনা FAP-6 সমীক্ষা হিসাবেও পরিচিত) প্রাপ্ত ফলাফলের উপর বেশ জোর দিয়ে থাকে।

এই সমীক্ষার ইন্টারনেট সংস্করনটি নিম্নের লিঙ্ক থেকে পাওয়া যাবেঃ
http://bicn.com/wei/resources/nerp/iee/10-ch8-FWO-impacts.htm

টিপাইমুখ বাঁধের পক্ষে সুপারিশকারীদের অনেকেই উপরোক্ত সমীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলের উপর ভিত্তি করে মতামত প্রকাশ করে থাকেন। উদাহরন স্বরুপ উল্লেখ করা যায় যে, গত ২৯ ডিসেম্বর, ২০১১ মহিউদ্দিন আহমদ নামের এক ব্যক্তি প্রথম আলোতে টিপাইমুখ বাঁধটি কেন বাংলাদেশের জন্য জরুরী তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এখানে উল্লেখ্য যে, উক্ত লেখাটিতে যদিও তিনি নিজেকে সমীক্ষার সাথে জড়িত একজন বলে দাবী করেছেন, সমীক্ষাটির কোথাও তাঁর নাম পাওয়া যায়না। সমস্ত লেখাটি জুড়েই অসংখ্য ভূল তথ্য-উপাত্ত হাজির করেছেন। উপরোক্ত সমীক্ষাটি থেকে সরাসরি উদ্বৃতি দিয়েই নীচের কয়েকটি প্যারাগ্রাফে টিপাইমুখ বাঁধের ফলে সৃষ্ট বাংলাদেশের অভ্যন্তরে, বিশেষ করে বৃহত্তর সিলেট ও ময়মনসিংহের হাওর অঞ্চলে সম্ভাব্য ঋনাত্ত্বক অভিঘাত নির্ণয় করা হবে।

সমীক্ষাটির হাইড্রোলজি সেকশনে উল্লেখ করা হয়েছে, “উক্ত সমীক্ষায় বিদ্যমান ভূমিউচ্চতা, জলবায়ূ, নদী নালার হাইড্রোলজিক উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে যা কিনা BADB, SWMC, BWDB, MPO সংস্থা কতৃক মাঠ পর্যায়ে সংগ্রহ করা হয়েছে”। অর্থাৎ, স্পষ্টতই সমস্থ তথ্য-উপাত্তই বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই সংগ্রহ করা হয়েছে, যা কিনা উজানের তুইভাই-বারাক নদী অববাহিকা থেকে নেওয়া হয়নি। উজানের অঞ্চলের তথ্য-উপাত্ত ব্যতিরেকে কোন অববাহিকা অঞ্চলের পুর্নাংগ চিত্র পাওয়া কখনই সম্ভব নয়।

এই সমীক্ষার আঞ্চলিক অভিঘাত সেকশনে বলা হয়েছে, “তথ্য-উপাত্তের ব্যাপারে অনেক গুলো সীমাবদ্ধ্বতার কথা অবশ্যই মনে রাখা দরকার। আঞ্চলিক পানি-প্রক্রিয়া এবং মডেল অনেক বেশী জঠিল। টিপাইমুখ বাঁধের এবং কাচার সেচ প্রকল্পের সম্ভাব্য অভিঘাতের বিষয়টি শুধুই ঈঙ্গিতবহ, এটাকে কোনভাবে নির্ভূল সত্য হিসাবে ব্যবহার করা ঠিক হবেনা”। সমীক্ষাটির প্রণেতারা তাঁদের রিপোর্টের সীমাবদ্ধতার কথা স্পষ্ট করে উল্লেখ করলেও, টিপাইমুখ বাঁধের পক্ষে উকালতকারীরা অতি সহজেই সেই সাবধান বাণীটি বেমালুম ভুলে যান এবং এই সমীক্ষাটিতে একটি বেদ বাক্যজ্ঞানে ব্যবহার করেন। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, সীমিত উপাত্ত এবং সাধারণীকৃত আন্দাজের উপর ভিত্তি করে যে মডেলিং করা হয়েছে তাকে ভিত্তি ধরে কোন ধরণের পানি ব্যবস্থাপনার প্রকল্পই বাস্তবায়ন করা ঠিক হবেনা। এখানে আরও একটি কথা বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত সমীক্ষাটি অন্যান্য বিজ্ঞানীদের দ্বারা যাচাই বাচাইকৃত প্রকাশিত বিজ্ঞান বিষয়ক কোন গভেষনাপত্র নয়। পুরো সমীক্ষাটিতে ব্যবহৃত উপাত্ত এবং গ্রহনকৃত অনুমান গুলির উল্লেখ করেননি যাতে করে অন্যান্য বিজ্ঞানীদের দ্বারা সেগুলোর গ্রহনযোগ্যতা যাচাই বাচাই করা সম্ভব হবে।

টিপাইমুখ বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার ফলশ্রুতিতে সৃষ্ট সম্ভাব্য ক্ষতির ব্যাপারে এই সমীক্ষায় বলা হয়েছে,

“কোন বাঁধ কি প্রক্রিয়ায় ভাংবে এবং কত সময় ধরে সেই ভাঙ্গন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে তা জানা থাকলে এবং ব্যবহৃত মডেলটি আগে থেকে অন্যান্য অঞ্চলের উপাত্ত দিয়ে যাচাই বাচাই করা থাকলে (calibrated) সম্ভাব্য ক্ষতির হিসাব করা সম্ভব হয়; কিন্তু আমাদের ব্যবহৃত মডেলটি মোটেও সেইভাবে তৈরী নয়”।

কিন্তু তা সত্যেও টিপাইমুখ বাঁধের পক্ষে সাফাইকারীদের কেউ কেউ (Sufian Khandakar, 2009) তাদের উপস্থাপনায় উল্লেখ করেন যে যদি টিপাইমুখ বাঁধ ভেঙ্গেও যায়, তার প্রভাব বাংলাদেশে সামান্যই হবে, কারন বাঁধটি অমলশিদ থেকে ২০০ কিঃমিঃ দূরে এবং বাঁধ ভাংতে ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা সময় লাগবে বলেও ধরে নেয়। কিন্তু, টিপাইমুখ বাঁধ অঞ্চলটি অধিক মাত্রার ভূমিকম্পন প্রবন এলাকা হওয়ায় যদি বাঁধটি সত্যি সত্যি ধ্বসে পড়ে তাহলে ৪৮ ঘন্টার অনেক কম সময় লাগবে।

বৃষ্টিপাত এবং বন্যার ব্যাপারে সমীক্ষাটিতে বলা হয়েছে,
“১৯০১ থেকে ১৯৯০ সময়কালের উপাত্ত থেকে যদিও দেখা যায় যে, বৃষ্টিপাতের ধরন মোটামুটিভাবে স্থির ছিল, কিন্তু বার্ষিক বৃষ্টির পরিমাণ এবং ধরন যথাক্রমে ১০ এবং ৫০% বেড়েছে। তাছাড়াও ১৯৬৪-১৯৮৯ সময়কালে একদিনের সর্বোচ্চ বৃষ্টির পরিমাণ ৭০% বেড়েছে”। এখানে উল্লেখ্য যে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে গ্রীষ্মকালে বৃষ্টির পরিমাণ অনেক বাড়বে, যার ফলশ্রুতিতে টিপাইমুখ বাঁধের উপর হয়তো বাড়তি চাপ পড়বে এবং বাঁধ রক্ষার নিমিত্তে অপ্রত্যাশিতভাবে পানি ছেড়ে দিতে হতে পারে।

এই সমীক্ষাতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে,

“এইটা স্পষ্ট যে টিপাইমুখ বাঁধ এবং কাছার সেচ প্রকল্পের ফলে ব্যাপক অভিঘাত সৃষ্টি হবে। গড়মাত্রার প্রবাহের বছরে, নিম্নোক্ত পরিবর্তন হবেঃ বর্ষাকালে বারাক নদীতে বন্যা প্রবাহের পরিমাণ কমবে, অমলশিদে সর্বোচ্চ প্রবাহ ২০% এবং বন্যা প্রবাহ ২৫% কমবে, নদীর সমতা কমবে ১.৬ মিটার (৫.২ ফুট)”।

এখানে উল্লেখ্য যে মহিউদ্দিন আহমদ তার লেখায় উল্লেখ করেছেন যে জুলাই মাসে পানি প্রবাহ এবং নদী সমতা কমবে যথাক্রমে ৪০% এবং ২.৬ মিটার, সমিক্ষা মতে যার কোনটিই সঠিক নয়। হাওর অঞ্চলের জীবন-জীবিকা এবং পরিবেশ-প্রতিবেশের সংগে যারা পরিচিত তারা জানেন যে, স্বাভাবিক মাত্রার বর্ষাকালে পানির উচ্চতা ৫.২ ফুট কমে যাওয়া মোটেই কোন শুভ ব্যাপার নয়, কারন প্লাবনভূমিতে মাছ ধরতে হলে সেখানে ৫ থেকে ৬ ফুট পানি থাকা দরকার, এবং পাট জাঁক দেওয়ার জন্যও একই পরিমাণ পানি বিদ্যমান থাকা আবশ্যক। নৌকা বাইচ হাওর অঞ্চলের কৃষ্টির এক অচ্ছেদ্য অংশ, যাও কিনা প্লাবনভূমিতেই সংগঠিত হয়। স্বাভাবিক বন্যার প্লাবনেই বাংলাদেশের সমস্থ প্লাবনভূমি এবং ব-দ্বীপ অঞ্চলটি গড়ে উঠেছে, তাই ভূপ্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে ব্যহত করে ভালো কিছু আশা করা যায়না।

সমীক্ষাতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে,

“শুকনো মৌসুমে বারাক নদীর পানি প্রবাহ ৪.২ গুণ বেড়ে গিয়ে ফেব্রুয়ারীতে অমলশিদে নদী সমতা বাড়বে ১.৭ মিটার, যা কিনা সব মিলিয়ে শুকনো মৌসুমের স্বাভাবিক প্রবাহের পরিমাণের চেয়ে ৬০% বেশী। শুকনো মৌসুমের পানি প্রবাহ সুরমা-কুশিয়ারাতেও বাড়বে, যার ফলে নদীর নাব্যতা, সেচ, এবং মৎস উৎপাদনে সাহায্য করবে। কিন্তু, কোন কোন জায়গায় পানি নিষ্কাশনের সমস্যাও হতে পারে”।

মহিউদ্দিন আহমদ অবশ্য উল্লেখ করেছেন যে পানি সমতা বাড়বে ৩.৬ মিটার যা কিনা ১.৭ মিটারের চেয়ে অনেক বেশী। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে শুকনো মৌসুমে পানি প্রবাহ বাড়বে ৯ ঘন কিঃমিঃ, যার সামান্যতম ভিত্তিও নাই, কারন টিপাইমুখ বাঁধের ধারণ ক্ষমতাই যেখানে ১৫ ঘন কিঃমিঃ, সেখানে ৯ ঘন কিঃমিঃ পানি শুকনো মৌসুমে জমা করাই সম্ভব হবেনা। যদিও প্রায় সমস্ত বিষেশজ্ঞদের মতেই ফুলেরতলে ব্যারাজ তৈরী করে সেচের জন্য পানি সরিয়ে নিলে বাংলাদেশের জন্য ব্যাপক ক্ষতির কারণ হবে বলে ধারনা করছেন এবং এই ধারনা যে অমুলক নয় তা বিবেচনায় নিয়ে ভারত সরকারও পানি সরিয়ে নেওয়া হবেনা বলে বার বার বাংলাদেশের সরকারকে আশ্বস্ত করেছে, সেখানে মহিউদ্দিন আহমদ তার লেখায় উল্লেখ করেন যে, ফুলেরতলে পানি সরিয়ে নিলেও শুকনো মৌসুমে অমলশীদে পানি সমতা বাড়বে ২.১ মিটার যা কিনা ৪.৯১ ঘন কিঃমিঃ (যদিও তিনি ভুলভাবে লিখেছেন বর্গ কিঃমিঃ) এর পরিমান! এখন কথা হচ্ছে, টিপাইমুখ বাঁধ থেকে কখন কি পরিমাণ পানি ছাড়া হবে তার সঠিক তফসিল ছাড়া কারো পক্ষেই কখনো সঠিকভাবে হিসাব করা সম্ভব না যে অমলশীদে কত পরিমাণ পানি আসবে এবং নদী সমতা কত হবে।

টিপাইমুখের পানি তফসিল বাংলাদেশের কারো জানা আছে বলে কেউ দাবী করেনা, এমনকি এই তফসিলটা ভারতের কতৃপক্ষের কারো কাছেও আছে বলে মনে হয়না, কারণ, এটা অংশতঃ নির্ভর করবে ভবিষ্যত বৃষ্টি এবং পানি প্রবাহের উপর। সুতরাং, বাংলাদেশের কোন মডেলারের পক্ষেই সঠিক পানি প্রবাহের চিত্রটা দেওয়া সম্ভব নয়। এখানে, আরও উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, স্বাভাবিক শুকনো মৌসুমে পানির সমতা এবং পরিমাণ বেড়ে গেলে হাওর অঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে, যার সম্ভবনা সমীক্ষাতেই উল্লেখ আছে, কৃষকদের পক্ষে বোর ধান রোপন করা সম্ভব নাও হতে পারে, কারণ বোর ধানের জমি প্রস্তুতি পর্বে জমিতে মাত্র কয়েক ইঞ্চি পানি থাকা আবশ্যক, জমি পানিতে তলিয়ে থাকলে কৃষকের সর্বনাশেরই কারন হবে। শীতের মৌসুমে অতিথি পাখীদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠে হাওর অঞ্চল, সেখানে অনেক বেশী পানি থাকলে পাখীদের জন্য প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে কিনা তাও তলিয়ে দেখা দরকার। মোট কথা, প্রাকৃতিক পানি সমতা এবং প্রবাহের উপর ভিত্তি করে যেখানে হাজার হাজার বছর ধরে প্রকৃতি-মানুষ-পরিবেশের একটা স্থিতিস্থাপকতা তৈরী হয়েছে, সেটাকে ব্যাপকভাবে বিজ্ঞান্সম্মত উপায়ে পর্যবেক্ষেন না করেই কিভাবে বলে দেওয়া সম্ভ যে টিপাইমুখ বাঁধ বাংলাদেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে? তার চেয়েও বড় কথা, যেখানে টিপাইমুখের পুরো নিয়ন্ত্রনই থাকবে অন্য একটি রাষ্টের হাতে সেখানে ভাটির অঞ্চলের মানুষদের কিসে মঙ্গল সেটা অন্য দেশের মানুষেরা কেন ঠিক করে দিবে?

——————————————
লেখক লক হ্যাভেন ইউনিভার্সিটির ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ এনভায়রন্মেন্ট নেটওয়ার্ক (বেন) এর সদস্য।