প্রচলিত অর্থে আমরা বলে থাকি নিরামিষাশী। এটি এমন একটি খাদ্যতালিকা, যেখানে মাংস নেই। (কোনো পশুর কাটা মাংসের যেকোনো অংশ বা তা থেকে তৈরি যেকোনো খাদ্য, মাছ—সামুদ্রিক বা পোলট্রিজাত সবকিছু বর্জন)। তবে এতে আবার কয়েক গ্রুপ পাওয়া যায়, কেউ কেউ ডিম এমনকি প্রাণিজ খাবার, যেমন—ডেইরি প্রোডাক্টস, মধু—এসবও বাদ দিয়ে থাকে। বিভিন্ন মতের নিরামিষাশী পাওয়া যায়—

ক) ভেগানিজম—সব প্রাণিজ খাবার বাদ। এটা যেকোনো প্রাণীকে ব্যবহার না করার বৃহত্তর অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়।
খ) ওবো ভেজিটেরিয়ানিজম—ডিম চলে, তবে ডেইরি প্রোডাক্টস নয়।
গ) ল্যাকটো ভেজিটেরিয়ানিজম—ডিম ও ডেইরি প্রোডাক্টস খাদ্যতালিকায় যুক্ত আছে।

নিরামিষ-আহারির প্রকারভেদ

এদের বলা হয় উদ্ভিদাশ্রিত খাবারের ওপর নির্ভরশীল মানবগোষ্ঠী। তাদের কেউ কেউ শুধু ফলমূলে নির্ভর করে থাকে (ফল, শস্যদানা), তবে উদ্ভিদের কোনো ক্ষতি না করে। কেউ বা শুধু কাঁচা ফলমূল খায়। কেউ খেয়ে থাকে ম্যাক্রোবায়োটিক ডায়েট (শস্যদানা, মাঝেমধ্যে মাছ)। কেউ বা সব ধরনের পশুর মাংস বর্জন ছাড়াও পেঁয়াজ, রসুন এসব খাদ্যতালিকায় রাখে না।

স্বাস্থ্যসুবিধা

আমেরিকা ও কানাডার ডায়েটেটিক অ্যাসোসিয়েশনের মতে, নিয়মমাফিক নিরামিষ-জাতীয় খাদ্যতালিকা জীবনের সব বয়সে, সব পুষ্টিমাত্রা বজায় রাখতে সমর্থ। এতে ক্যানসার ও হূদেরাগের ঝুঁকি কম থাকে। আমিষ গ্রহণকারী ব্যক্তির তুলনায় অনেক সুফল এরূপ খাদ্যাভ্যাস থেকে মেলে—

ক) রক্ত কোলেস্টেরলের মাত্রা কম থাকে;
খ) শারীরিক স্থূলতা—বিএমআই নিয়ন্ত্রণে থাকে;
গ) রক্তচাপ থাকে নিয়ন্ত্রিত;
ঘ) ভিটামিন ‘সি’ ও ‘ই’ উচ্চমাত্রায় মেলে। কোষ বিনষ্টকারী শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। আঁশ, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও ফলেইট—এসব পুষ্টিমান বজায় থাকে।

নিরামিষাশীর জন্য যেসব খাদ্যপ্রাণ ও খনিজ বেশি জোগান দিতে হয়—

আয়রন: আয়রন-ঘাটতিজনিত সমস্যায় শিশু ও নারীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।

ভিটামিন বি১২: উদ্ভিজ খাবার সচরাচরভাবে বি১২-এর ভালো উৎস নয়; যদিও ডিম বা ডেইরি প্রোডাক্টসে তা বেশ পাওয়া যায়।

ক) ফ্যাটি অ্যাসিডস-ঘাটতি ঝুঁকি।
খ) ক্যালসিয়াম—যদি না প্রচুর পরিমাণ সবুজ পাতা বা সবজি খায়, তবে ঘাটতিতে পড়ে।
গ) জিংক—উদ্ভিজ খাবারের ফাইটেট ও আঁশ শরীরে জিংক শোষণে কিছু বাধা দেয়। ফলে এরূপ খাদ্যাভাসে যারা অভ্যস্ত, তারা জিংক-ঘাটতির ঝুঁকিতে থাকে।

-শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল