১৯২৯ সালের ১৫ জানুয়ারী আমেরিকার আটলান্টা ষ্টেইটের জর্জিয়া সিটিতে মার্টিন লুথার কিং জন্মগ্রহন করেন। যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর ইতিহাসে যে সব ব্যক্তিত্বরা নির্যাতিত, অত্যাচারিত নিপিড়ীত আর অধিকার বঞ্চিত মানুষদের জন্যে সংগ্রাম করে গেছেন, সেই সংগ্রামে নিজের জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দিয়েছেন মার্টিন লুথার কিং ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। মার্টিন লুথার কিং তাঁর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নির্যাতিত মানুষের জন্যে লড়াই করে গেছেন।

আটলান্টার বুকার টি ওয়াশিংটন হাইস্কুলে তার স্কুল জীবন শুরু,১৯৪৮ সালে মোরহাউজ কলেজ থেকে সমাজ বিজ্ঞান এর উপর স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে কিং বষ্টন ইউনিভার্সিটি থেকে দর্শন এর উপর পি এইচ ডি ডিগ্রী লাভ করেন।একসময় আমেরিকাতে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের সাথে চরম বৈষম্য করা হত। একটা উদহারন দিলে কিছুটা আন্দাজ করতে পারবেন বৈষম্যের পরিমাপটা কতটুকু ছিল। সাদা মানুষ বাসে উঠলে কালো মানুষদের সিট ছেড়ে দিতে হত। ১৯৫৫ সালে রোসা পার্ক নামের এক কালো মেয়েকে সাদা চামড়াওয়ালা একজনকে সিট ছেড়ে না দেয়ার অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল । সেই গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্যে মন্টোগোমারিতে বাস বয়কটের ডাক দেওয়ার মাধ্যমে মার্টিন লুথার কিং আমেরিকায় কালো মানুষদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন শুরু করেন । মার্টিন লুথার কিং ই প্রথম মানুষ যে আমেরিকায় কালো মানুষদের প্রতি বৈষম্যের জন্যে প্রতিবাদ শুরু করেন ।১৯৫৭ সালে রেফ এবারনেথি এবং অন্যান্য সিভিল রাইট নেতাদের সহযোগিতায় স্হাপন করেন সাউদার্ন লিডারশীপ কনফারেন্স ( এসসিএলসি )।

আমেরিকার সিভিল রাইট নেতা হাওয়ার্ড থমসন এবং ভারতের নন ভায়োলেন্স এর জনক গান্ধীর মতবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে কিং অত্যান্ত যোগ্যতার সাথে আমৃত্যু এই সংগঠনটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ।আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার প্রতিষ্টার পাশাপাশি তাদের নৈতিক চরিত্র গঠন নিশ্চিত করাও ছিল এই সংগঠনটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ন কাজ ।১৯৬৩ সালে ওয়াশিংটনে কৃষ্ণাঙ্গদের অর্থনৈতিক মুক্তি, চাকরির সমতা অর্জন এবং সর্বক্ষেত্রে সমান অধিকার লক্ষ্যে কিং বেয়ারড রাস্তিন এবং আরো ছয়টি সংগঠনের সহায়তায় এক বিশাল সমাবেশের আয়োজন করেন । প্রায় তিন লক্ষ মানুষের উপস্হিতিতে কিং তাঁর সেই বিখ্যাত ” আই হেভ এ ড্রিম” প্রদান করেন যা এখন ও পর্যন্ত আমেরিকার ইতিহাসে শ্রেষ্ট ভাষনগুলির মধ্যে একটা বিবিচিত হয়ে আসছে । ১৯৬৫ সালে ৭ মার্চ কিং তার এসএলসি সংগঠনের সহায়তায় সেলমা থেকে মন্টগোমারির রাজধানীতে এক বিশাল মিছিলের আয়োজন করেন ।কিন্তো পুলিশ আর সরকারী গুপ্তচরদের মিছিলের উপর অমানবিক নির্যাতনের কারনে সেই মিছিলটি শেষ পর্যন্ত ভেঙ্গে যায় । উল্লেখ্য যে আমেরিকার সিভিল রাইট মুভমেন্টের ইতিহাসে সেই দিনটি এখনো’ব্লাক সান ডে’ হিসাবে গন্য করা হয় । অন্যদিকে ভিয়েতনামের সাথে আমেরিকার যুদ্ধে জড়িত হওয়ার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ আর নিন্দা প্রকাশ করেন ।

১৯৬৭ সালের ৪ এপ্রিল নিউইয়র্কে দেওয়া এক ভাষনে তিনি এই যুদ্ধের তীব্র সমালোচনা করে বলেন ” আমেরিকানরা ভিয়েতনামকে তাদের কলোনি বানানোর যে বাসনা করেছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ঘৃণ্য আর বর্বরোচিত একটা অধ্যায় হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকবে”। এর ঠিক এক বছর পর ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল মেম্ফিসের লরিয়েন মোটলে আততায়ীর হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ।
নেওয়া হয়েছেঃআমার ব্লগ থেকে