রাজনীতি কি? সেটা হয়তো রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক, শিক্ষার্থীদেরই ভালো বোধগম্য হবার কথা। রাষ্ট্রের চলমান অস্থিতিশীল ভঙ্গুর অবস্থার উত্তরণ বা সমৃদ্ধির পথগুলো তারাই হয়তো আরো ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু চলমান রাজনীতি যে নীতিহীন, পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে সেটা সাধারণ মানুষ মাত্রই অনুমেয়। প্রত্যাশাগুলোয় কেমন যেন মরিচা ধরে যাচ্ছে। ৭১’পূর্ববর্তী সহিংস ও উৎকন্ঠার দিনগুলোর অবসানের আশায় যে স্বপ্ন মানুষ বুনে ছিল, তার কতটুকু প্রতিফলন ঘটছে এখন?

সরকার হার্ডলাইনে। নাশকতা প্রতিরোধ করবে। সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করবে। আর বিরোধীদলও নাছোড়বান্দার মতো সমাধানের সুষ্ঠু কোন পথ না বের করেই লাগাতার হরতাল, অবরোধ দিয়েই যাচ্ছে। তারা রাজনৈতিক কর্মসূচীর সফল বাস্তবায়ন হিসেবে গাড়ি পোড়াচ্ছে, বোমা ফাটাচ্ছে, মিছিল করে রাজপথসহ অন্যান্য জায়গায় অবরোধ করছে।

কিন্তু এই দুইয়ের মধ্যে মাঝামাঝি অবস্থায় পড়ে বেচারা সাধারণ মাুনষ ও গণতন্ত্র নিভৃতে কাঁদে। জিম্মি হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। সরকার ও বিরোধীদল গণতন্ত্রের কথা বলে মুখে ফেনা তুলছে। যে যার মতো করে গণতন্ত্রের অপব্যাখা দিয়ে যাচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, গণতন্ত্রের সংজ্ঞা অজ্ঞাত! এদের তথাকথিত ভাষণ আর কর্মসূচির মাধ্যমে গণতন্ত্রের জন্ম হবে।

একথা অপ্রিয় হলেও সত্য, এদেশে সাধারণ মানুষের প্রকৃত শান্তি ও জীবনের কথা কোন রাজনৈতিক দলই ভাবে না। নিজেদের রাজনৈতিক এজেন্ডার বাস্তবায়নই মূল লক্ষ্য। ক্ষমতা দখলের জন্য তারা সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। সাধারণ মানুষের জীবনে বিপন্নতা এনে তারা রাজনৈতিক কর্মসূচির সফলতা বিবেচনা করে। নষ্ট রাজনীতির বলি হিসেবে স্বজন হারানো মানুষগুলোর পরিবারের দূর্বিষহ চিত্র তারা একবারও ভাবে না। ভাববার প্রয়োজনও বোধ করে না। কিন্তু এই জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস বা কেন্দ্রবিন্দু একথা সকল রাজনৈতিক দল মুখে বললেও তাদের কর্মকান্ডে এর কোন প্রতিফলনই দেখা যায় না। বছরের শুর”তেই এক অস্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থার সূচনা হয়েছে। যা কারোই কাম্য ছিল না। যার ধংসাত্মক প্রতিফলন এখনও বিদ্যমান। দিন যতই যাচ্ছে, ততই বোমা আর আগুনে পোড়া বিপন্নতার চিত্র ও সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। কিন্তু এদিকে জীবিকার তাগিদে কর্মজীবি মানুষকে প্রতিদিন এক উৎকন্ঠার মধ্য দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থলে পৌঁছতে হচ্ছে। ঘর থেকে বেড়িয়ে কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না যে, দিনশেষে সুস্থ্য ও স্বাভাবিকভাবে ঘরে পৌঁছতে পারবে। নাকি রক্তস্নাত ক্ষত-বিক্ষত নিথর দেহটা স্বজনের কাছে ফিরবে লাশ হয়ে।

কিন্তু বাংলার অভ্যুদয়ের উজ্জ্বল রাজনৈতিক ইতিহাস তো তা বলে না। নাকি এ অপরাজনীতির বলি হয়ে সাধারণ মানুষের জীবনে স্বাভাবিক মৃত্যুর চাহিদাটুকু এদেশের রাজনৈতিক কর্ণধারদের বিবেকেও জাগ্রত করতে পারবে না। যেদিন সবাই মিলে এই অপরাজনীতির অবসান চাইবে, সেদিনই হয়তো স্বার্থপর রাজনীতি ও রাজনীতিকের অপমৃত্যু হবে। নবারুন ভট্টাচার্যের কবিতার ভাষার মতো আমাদেরও প্রত্যাশা এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ  না/ এই জল্লাদের উল্লাসমঞ্চ আমার দেশ  না/ এই বিস্তীর্ণ শ্মশান আমার দেশ  না/ এই রক্তস্নাত কসাইখানা আমার দেশ না / আমি আমার দেশকে ফিরে কেড়ে নেব…।

সুমিত বণিক, উন্নয়নকর্মী
কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ।
[email protected]