imageবিশ্বজুড়েই যেন পাশবিকতার উন্মাদ নৃত্য চলছে। মানবিকতার ছোঁয়াও যেন অনেক ক্ষেত্রে অধরা। তাই কোন ইতিহাস নিয়ে পর্যালোচনা করতে চাই না। কোন কট্টর সমালোচনাও না। কোন ভেদাভেদও করতে চাই না। চাই একটি সহাবস্থান। মানুষ তার সৃষ্টির জন্য তাঁর বিশ্বাস অনুসারে সাধারণত একজন প্রতিপালকের আনুগত্য মেনে নেয়। আর এ আনুগত্য প্রকাশে কিছু শাস্ত্রীয় মাঙ্গলিক ক্রিয়া-কর্মাদিরও প্রচলন আছে। প্রত্যেক ধর্মেরই কিছু ধর্মীয় রীতি ও সংস্কার আছে। যে রীতি ও সংস্কারের মূলে রয়েছে একটি ঐকান্তিক বিশ্বাস। আর সকল বিশ্বাসের মূলেই বিজ্ঞান নিস্ক্রিয়। কিছু রীতির সমালোচনা থাকলেgও অধিকাংশ রীতির ও সংস্কারের উদ্দেশ্যই হলো বিশ্ব-ব্রহ্মান্ডের সকল মানুষ ও প্রাণীর মঙ্গল কামনা ও বিধান। আর সর্বজনীন মঙ্গল কামনার কোন সংস্কারে অহিংসার স্থান নেই। বরং আছে মানবতার বিকাশ, নীতি-নৈতিকতা আর ভাতৃত্ববোধের পরম শিক্ষা। কিন্তু মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই ভালোর চেয়ে মন্দটাকেই বেছে নেয়।

ধর্মীয় আচার ও সংস্কৃতির এ ধারাবাহিকতায় সনাতনধর্মালম্বীরা প্রতি বছরই দেবী দুর্গার পূজা পালন করে আসছে। শারদীয় দূর্গোৎসব রূপ নিয়েছে সনাতন হিন্দু ধর্মালম্বীদের প্রাণের উৎসবে। তবে এই উৎসবে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই অংশগ্রহণ করে বলে এটা শুধুমাত্র ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। হয়ে উঠেছে সর্বজনীন উৎসবে। যেহেতু বাঙালি উৎসব প্রিয় জাতি। সেহেতু এই দেশের অধিকাংশ অসাম্প্রদায়িক মানুষের সহাবস্থানের কারণেই অনেক বছর ধরেই এই উৎসবে মিলন ঘটে অসংখ্য আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে দুর্গাপূজাকে উপলক্ষ্য করে হাটে-মাঠে মেলা বসে। যে মেলার স্মৃতি অনেকের শৈশবের স্মৃতিতেই হয়ে আছে অমলিন ।

সাধারণত মাটির মূর্ত্তিতে দেবীর আবাহন হলেও পূজা হয় হৃদ-মন্দিরে। দেহ-বীণার তন্ত্রীতে বাজবে মঙ্গলঘণ্টা। মঙ্গল দীপের আলোতে আলোকিত হবে মন-প্রাণ। ভজন, পূজন আর আরাধনার আয়োজনে ব্যস্ত হবে ভক্ত প্রাণ। মায়ের পূজা-অর্চণা আর ঢাকের শব্দে মুখরিত হবে চারপাশ। মাঙ্গলিক মন্ত্র উচ্চারণের মধ্য দিয়ে কামনা করা হবে বিশ্ব শান্তির অমিয় বাণী।

মায়ের এই আগমন আমাদের মাঝে মানবিকতার বিকাশ ঘটাক। শারদীয় শুভ্রতা জড়া-দুঃখ-শোক আর বেদনার্ত হৃদয়ে বয়ে আনুক আনন্দের বারতা। বিবেকের আসুরিক মনোবৃত্তির অবসান ঘটুক। সুখী-বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়ার প্রেরণা হোক এ বারের শারদীয় উৎসবের মূল চেতনা।

সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা