রাজধানী ঢাকা আজ যানজটের নগরী। এই কথাটা প্রতিদিন প্রতিনিয়ত সংবাদে উঠে আসছে। বিভিন্ন মহল থেকে কতনা পরিকল্পনা আসছে যানজট কমানোর জন্য কিন্ত কিছুতেই কিছু হচ্ছেনা। আসলে হবে কি করে আমাদের দেখানো পথ আমাদের পছন্দ হচ্ছেনা। আমাদের বাতলে দেয়া উপায় গুলো বেশ জটিল হয়ে যাচ্ছে। খরচ ও সময় সাপেক্ষ হওয়ায় সেটা আর এগোচ্ছেনা। তাহলেকি কোন দিনই এই যানজট সমস্যার সমাধান আমরা পাবনা? অবশ্যই পাব। অতিরিক্ত রাস্তা নির্মান করতে হবেনা। অতিরিক্ত ফ্লাইওভার,আন্ডারপাস,সাব লাইন কিছুই নির্মান করতে হবেনা। খুব সহজেই যানজট কমানো যাবে। শুনে অবাস্তব মনে হতে পারে । তাহলেকি আলাদিনের আশ্চয প্রদীপ আমাদের হাতে চলে এসেছে যে দৈত্য সব ঠিক করে দেবে? আসলে তেমন কিছুই নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল তরুন গবেষণা করে বের করেছেন এর সহ সমাধান। সেগুলো নিম্নরুপ:

১। দামি স্কুল গুলোতে ধনীদের ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা করে এবং প্রায় প্রত্যেক ছাত্র ছাত্রীর রয়েছে আলাদা আলাদা গাড়ি। ধরা যাক রাজধানীতে ২০ টি নামি দামি স্কুল আছে এবং সেখানে মোট ২০০০০ ছাত্র ছাত্রী পড়াশোনা করছে। এখন এই ২০ হাজার ছাত্র ছাত্রীর মধ্যে প্রতি পরিবারের দুজন ধরা হলে তারা এক সাথে স্কুলে আসে ১০ হাজার জন। এখন এই দশ হাজার ছাত্র ছাত্রীর মধ্যে আনুমানিক ৬ হাজার ছাত্র ছাত্রী আলাদা আলাদা প্রাইভেট কারে স্কুলে আসে। বাকিরা স্কুল বাসে বা পাবলিক বাসে আছে। এই ৬ হাজার ছাত্রছাত্রী অন্তত ৬ হাজার প্রাইভেট কার ব্যাবহার করে। তিনটা প্রাইভেট কার একটা বাসের সমান যায়গা নেই। একটা বাসে অন্তত ৪০ জন যাত্রী বসতে পারে। যতটুকু যায়গা ব্যবহার করে ৪০ জন ছাত্র ছাত্রী স্কুলে আসতে পারছে সেই ৪০ জন ছাত্রছাত্রী নিজেদের গাড়িতে আসার কারণে যায়গা নিচ্ছে ১৩ গুন বেশি যায়গা। এভাবে পুরো রাস্তা থেকে ওই সব প্রাইভেট কার উঠিয়ে যদি স্কুল গুলোতে বাস সাভির্চ চালু করা যায় তাহলে রাস্তা অনেকটাই ফাকা থাকবে। তখন আর যানজট হবেনা। একটা গাড়ি এক ভাবে চলে কিন্ত চল্লিশটা গাড়ী ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি চালায় বলে গাড়ী গুলি যত্রতত্র হয়ে রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে এতে যানজট তৈরি হয়। ( প্রকৃত হিসেবে দেখা যাবে এর চেয়ে বহু গুন বেশি প্রাইভেট কার রাস্তায় চলে)

২। কোন কোন পরিবার বাস করে ধানমন্ডিতে আর তাদের বাচ্চা পড়ে ভিকারুননিসার বেইলি রোড শাখায়। আবার একই ভাবে কোন কোন পরিবার থাকে বেইলি রোডের আশে পাশে তাদের বাচ্চা ও ভিকারুননিসাতে পড়ে তবে ধানমন্ডি বা আজিমপুর শাখায়। এতে করে ভিন্ন ভিন্ন দুই স্থানের দুজনকে দুইদিকে যেতে হচ্ছে। যেহেতু ওরা ওভাবেই চান্স পেয়েছে তাই স্কুল ওভাবেই নির্ধারিত। তবে যদি এমন করা যেত যে একই স্কুল যেহেতু তাই নিজ নিজ এলাকার শাখাতে স্থানান্তরিত করলে তাদের আর গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামতে হতোনা। এতে রাস্তায় অন্তত কিছু গাড়ি কমে যেত।

৩। অফিসের অনেক কর্মচারি কর্মকর্তা নিজ নিজ গাড়ি ব্যবহার করেন। কোন কোন অফিসের অফিসার ২০ জন তার ১৫ জনই আলাদা আলাদা গাড়িতে অফিসে আসেন। অথচ অফিসারদের জন্য কোম্পানী থেকে বিশেষ মাইক্রোবাস ( যেমন ট্যুরিষ্টদের জন্য রাখা হয়) চালু থাকলে অন্তত ১৫ জনের জন্য দুটি মাইক্রোবাসই যথেষ্ট হতো। এতে করে বাকি ১৩টি প্রাইভেট কারকে রাস্তায় যানজট সৃষ্টি করতে হতোনা।

৪। দেখা যায় আমাদের ট্রেন লাইন প্রায় ফাকাই থাকে। গাজীপুর থেকে যারা ঢাকাতে অফিস করেন তাদের জন্য নির্দিষ্ট টাইমে ছোট আকারের অপেক্ষাকৃত গতি সম্পন্ন ট্রেন সার্ভিস চালু করলে ওই সব চাকুরেজীবীরা সহজেই অফিসে আসতে পারতেন এবং তারা যদি মোট সংখ্যায় ১০ হাজার ও হয় তাহলে বাসে আসলে তাদের জন্য অন্তত ২০০ বাস লাগতো। এই সংখ্যক বাসের আর রাস্তায় যানজট বাধানোর সুযোগ থাকবেনা।

৫। নামে মাত্র নদী পথে স্টিমার বা এরকম কিছু একটা চালু হয়েছিল এখন সেটা মনে হয় ইদুরের গর্তে লুকিয়ে পড়েছে। শুধু নামে নয় সত্যিকার অর্থে নদী পথে অন্তত ৪০ কিলোমিটার গতি সম্পন্ন নৌ যান চালু করলে তা দিয়ে যদি ২ হাজার যাত্রীও চলাচল করে তবে স্থল পথে তাদের বহন করতে যে ৩৫ টা বাস লাগতো সেটা আর রাস্তায় দরকার হবেনা।

৬। সরকারী পদস্থ কর্তারা যাওয়ার সময় রাস্তা ব্লক করা হয়। কেবল মাত্র প্রধান মন্ত্রী,রাষ্ট্রপ্রতি এবং বিদেশী কূটনৈতিক গন ব্যতীত আর কারো জন্য এরকম রাস্তা ব্লক না করলে রাস্তায় হঠাৎ অনেক গাড়ি জমা হয়ে পড়বেনা। এতে যানজট কমবে।

৭। ফুটপাত এখন দখলে চলে গেছে। ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায় অনেক বাস স্টপেজে মানুষ প্রধান রাস্তায় নেমে আসে। এতে করে রাস্তার ওই স্থানে কিছুটা সময় বাস বা অন্য পরিবহন পার হতে সময় নেয়। ফুটপাত দখলমুক্ত করলে মানুষ ফুটপাত দিয়ে চলাচল করবে। এতে করে বাস স্টপেজ গুলোর যান চলাচল সুগম হবে।

৮। আইনের কোন শিথিলতা রাখা যাবেনা। পুরোনো গাড়ি রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। ( পুরোনো বলতে ফিটনেস বিহীন)। নতুন গাড়ী কেনার আগে সরকারী অনুমতি নিতে হবে। এবং তদন্ত করে দেখা হবে তার আসলেই গাড়ীটা কেনা খুব বেশি জরুরী কিনা। খুব জরুরী হলে অনুমতি দেয়া হবে আর যদি দেখা যায় তার আরো একটা দুটো গাড়ি আছে তবে তাকে অনুমতি দেয়া হবেনা। তার ছেলে মেয়েরা স্কুল বাসে যাতায়াত করবে আর সে নিজেও প্রয়োজনে অফিসের গাড়ী ব্যবহার করবে। এভাবে এসব সাধারন অথচ দারুন কিছু সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে সত্যিকার অর্থে খুব কম অর্থ ব্যায় করে খুব অল্প সময়ে ঢাকার রাস্তার যানজট অনেক অনেক কমানো যাবে এটা নিশ্চিত।

জাজাফী # এস এম হল # ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়