কিশোরগঞ্জের তুলনাই নিকলী, বাজিতপুর, হোসেনপুর জঙ্গলবাড়ীর প্রাচীন আমেজ অনেক বেশী। জেমস রেনেল অংকিত মানচিত্র বাংলার প্রাচীন মানচিত্র। বাংলাদেশে তা এখন দুষ্প্রাপ্য। মুক্তাগাছার জমিদার জগৎকিশোর আচার্য চৌধুরী সংগৃহীত এবং বাংলা একাডেমী গ্রন্থাগারে যত্নের সাথে সংরক্ষিত “Rennells Bengals Atlas1783” থেকে তৎকালীন কিশোরগঞ্জ এলাকার দিকে দৃষ্টি দিলে কিশোরগঞ্জ নামে কোনো জনপদ বা স্থানের নাম পাওয়া যায় না।

এমনকি যে জেলা নিয়ে এত আলোচনা, সেই ময়মনসিংহ নামেও কোন স্থানের পরিচয় পাওয়া যায় না,বরং বেগুনবাড়ী ও বোকাইনগর প্রসিদ্ধ স্থান দেখানো হয়েছে। তখন ব্রহ্মপুত্র নদ ছিল সত্যিকার অর্থে বিশাল, চওড়ায় ১০-১২ মাইল,আজকের ক্ষপুত্রের অবস্থা দেখলে তা ভাবতেও কষ্ট হয়। রেনেলের মান চিত্রে কিশোরগঞ্জের নাম না থাকলেও বর্তমানের কিশোরগঞ্জ জেলার যে সীমানা সে সীমানার মধ্যে যে ৩ টি প্রধান স্থান বা জনপদের নাম পাওয়া যায়, তা হল জঙ্গলবাড়ী (Junglebary), হোসেনপুর (Ofunpour), ও বাজিতপুর (Bajetpur)। হোসেনপুর পূর্বে হুসুনপুর উচ্চারন করা হত বলে জানা যায়।

সে হিসেবে উচ্চারন পার্থক্যে বিদেশীদের কাছে হোসেনপুর Ofunpour (অফুনপুর) লেখা হয়েছে বলে মনে হয়। ঐ তিনটি স্থান প্রাচীন কিশোরগঞ্জের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জনপদ হিসেবে উক্ত মানচিত্রে দেখানো হয়েছে। তাছাড়া আর যে সকল স্থানের নাম দেওয়া হয়েছে,তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হয়বৎ নগর, দগদ্গা, গুজাদিয়া, ধুলদিয়া, নিকলী, দামপাড়া, বনগাওঁ, কটিয়াদী, গুড়ই, এগারসিন্দুর, দিলালপুর ঘাট, ফরিদপুর, বড়বাড়ী, ডুবি, মিঠামইন, সিংপুর, অষ্টগ্রাম/আটগাওঁ, কমলা, ঢাকী, চারিগ্রাম, পাচকাহনিয়া, জয়সিদ্দি, ইটনা, কুরশা, বাদলা, বর্ণি, জাফরাবাদ প্রভৃতি।

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে এসেও কিশোরগঞ্জ কোন উল্লেখযোগ্য স্থান হতে পারেনি। এক ই সাথে উল্লেখ্য আজকের জমজমাট ভৈরব বাজারের তখনো জন্ম হয়নি।উক্ত মান চিত্রে কেবল কুলিয়াচর থানার ফরিদপুরের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তাঁর পরেই ব্রহ্মপুত্রের বিশাল স্রোতধারা প্রবাহমান দেখা যায়।