‘মোরা এইডারেই লেচু কই। দ্যাহেন না কী সুন্দর লেচুর নাহান দেখতে। খাইতেও মজা।’ কাঠলিচু হিসেবে পরিচিত আঁশফল খেতে খেতে কথাগুলো বলছিল ১০-১২ বছরের ছোলায়মান, রাহাত, সাব্বির। বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপাশা ইউনিয়নের পাটকাঠি গ্রামে কথা হয় ওদের সঙ্গে। ওরা মনের আনন্দে কখনো গাছে চড়ে, আবার কখনো ঢিল ছুড়ে আঁশফল পাড়ছিল। জিজ্ঞেস করতেই রাহাত বলে, ‘লিচু পাড়ি, লিচু খাই।’

দাম বেশি হওয়ায় গ্রামের গরিব মানুষের অনেকের পক্ষেই লিচু কিনে খাওয়া সম্ভব হয় না। তারা লিচুর স্বাদ মেটায় আঁশফল খেয়ে। বাণিজ্যিকভাবে চাষ না হলেও গ্রামের হাটবাজারে এ সময় আঁশফল বিক্রি হতে দেখা যায়। আমিষগুণে ভরা এই ফলের কদর থাকলেও পরিচিতি কম। শহরাঞ্চলেও আঁশফলগাছ দেখা যায়। তবে শহরের অনেকেই জানে না, এই ফল খাওয়া যায়। বরিশাল নগরের কালীবাড়ি সড়কে সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা সৈয়দ এনায়েত হোসাইনের বাড়িতে রয়েছে একটি আঁশফলের গাছ। ফলের ভারে নুয়ে পড়েছে গাছটি। এ ছাড়া নগরের ব্রাউন কম্পাউন্ড, আমানতগঞ্জ, নার্সিং সেন্টার, কাউনিয়াসহ অনেক স্থানেই আঁশফলগাছ দেখা গেছে।

এনায়েত হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গাছটি আমি রোপণ করিনি। তবে প্রতিবছর প্রচুর ফল ধরে। আমরা কাঠলিচু বলেই জানি। ফল পাকলে একদম লিচুর মতোই লাগে। লিচুর আঁশ মোটা, কিন্তু এটির আঁশ পাতলা।’তাঁর পুত্রবধূ সুরভী বললেন, ‘ইটের ভয়ে ছাদে যেতে পারি না। সারা দিন ছেলে-ছোকরারা ইট মেরে ফল পেড়ে নেয়।’

পরিচিতি: প্রচলিত নাম স্থানভেদে কাঠলিচু, ছোট লিচু। আভিধানিক নাম আঁশফল। ফলবিহীন গাছ দেখলে মনে হবে লিচুগাছ। ফল দেখতে অনেকটা লিচুর মতো, গোলাকার। তবে আকারে ছোট এবং এর রসাল অংশ খুবই কম। এর বৈজ্ঞানিক নাম Nephelium Longana।

আঁশফলের জন্মস্থান দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতে বলে মনে করা হলেও বাংলাদেশে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক স্থানেই এ গাছ দেখা যায়। গাছ ১০ থেকে ১২ মিটার পর্যন্ত লম্বা।

গরমও ঠান্ডা দুটোই সহ্য করতে পারে। চাষের জন্য বিশেষ কোনো মাটির প্রয়োজন হয় না। সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে বীজ সংগ্রহ করতে হয় বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি কাঠলিচু বা ছোট লিচুগাছ নয়। এটার নাম আঁশফল।

এ ফল লিচুর মতো সুস্বাদু নয়। তবে লিচুর চেয়ে আমিষের পরিমাণ বেশি। এটি সাধারণত ছায়াবৃক্ষ হিসেবে বেশি পরিচিত।’

-Prothom Alo