সৈয়দ আনিসুল হক ১৯৪৪ সনের ৭ জানুয়ারী কিশোরগঞ্জ জেলার বৌ্লাই গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ।তাঁর পিতা মরহুম সৈয়দ হাবিবুল হক সততা এবং সমাজ সেবার জন্য বিখ্যাত ছিলেন । তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদেরও একজন মাননীয় সদস্য ছিলেন । তাছাড়া তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ওয়াকফ কমিশনার হিসেবে বেশ কিছুদিন সুনাম ও দক্ষতার সাথে কর্ম সম্পাদন করেছেন । জনাব সৈয়দ আনিসুল হক তাঁর পিতার সুযোগ্য তওবধানে ও প্রচেষ্টায় ছোটবেলা থেকেই একটি নৈ্তিকতার ভেতর বড় হয়ে ওঠেন ।
যার ফলে তাঁর মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ, নৈ্তিকতা, উৎকর্ষতা, নিয়মানুবর্তিতা, আতিথেয়তা এবং সজ্জন ব্যাক্তিত্বের গুণাবলী প্রস্ফুটিত হতে থাকে ।তিনি পারিবারিক ঐতিহ্যের এক আধারস্বরুপ ।যে সব গুণাবলী একজ়ন মানুষকে সমাজে আদর্শ মানুষ হিসেবে পরিগণিত হতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে, সৈয়দ আনিসুল হকের মধ্যে তার পূর্ণ বিকাশ দেখা যায় ।ফলে একজন আদর্শবান এবং ন্যায়-নীতির ধারক ও বাহক হিসেবে তিনি গড়ে ওঠেন ।ভদ্র ব্যবহার, আমায়িকতা, সহানুভূতি, সহমর্মিতা, উপচিকীর্ষা এবং সর্বোপরি পারিবারিক সুশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ তাঁকে একজন ব্যাক্তিরুপে গড়ে ওঠার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে, যা ভবিষ্যত জীবনে জনাব হকের চারিত্রিক অলঙ্কার রুপে বহির্প্রকাশ পায় ।
তিনি তাঁর নিজ বাড়ির বোলাই প্রি-প্রাইমারি স্কুলে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশুনা করেন পরে কিশোরগঞ্জের রামানন্দ হাই স্কুলে ছয় মাস পড়ার পর চলে আসেন ঢাকায় এবং আজিমপুরের ওয়েস্টমিনিস্টার হাই স্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে মাট্রিক পাস করেন।পরে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য চলে যান যুক্তরাষ্ট্রের বারব্যাংক ক্যালিফোরর্নিয়ায় ১৯৬৩ সনে ।পরে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগে অধ্যয়ান্তে ১৯৬৫ সনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন ।
শিক্ষা জীবন শেষে তিনি তৎকালীন হাবিব ব্যাংকে শিক্ষানবিস অফিসার হিসেবে যোগদান করেন।সনটি ছিল ১৯৬৬ ।ব্যাংকের কঠোর পরিশ্রম ও সুশৃংঙ্খল প্রশিক্ষণ তাঁকে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই ভেতরে নিহিত অপার ধীশক্তি ও মেধা বিকাশে সহায়তা করে ।তিনি মাত্র ছয় বছর ব্যাংকিং কর্মজীবনের মধ্যে তৎকালীন ঢাকার হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল শাখার ব্যবস্হাপক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন । সনটি ছিল ১৯৭২ ।
এরপর তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ।তাঁর পারঙ্গমতার ফলশ্রুতিতে তিনি ঢাকার বঙ্গবন্ধু শাখার ব্যবস্হাপক এবং পরে বৈ্দেশিক বিনিময় শাখার ব্যবস্হাপকের বিরল দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৮৩ সনে ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্হাপকের পদটি দখল করেন ।এই ধরনের সাফল্য খুব কদাচিৎই চোখে পড়ে।
ঐ বছরই জনাব হক আরও একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন ।তিনি দেশের প্রথম প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংক আরব-বাংলাদেশ ব্যাংক লিমিটেড-এ সহকারী ভাইস প্রেসিডেণ্ট হিসেবে যোগদান করেন।তাঁর অসাধারণ ধীশক্তি ও প্রখর মেধার বলে তিনি ব্যাংকের ঋণ বিভাগটি সুন্দরভাবে বিন্যস্ত করে সাজান এবং এই সৃজনশীল কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ১৯৮৫ সনে ভাইস প্রেসিডেণ্ট,১৯৮৭ সনে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেণ্ট এবং ১৯৯০ সনে ব্যাংকের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেণ্ট পদে পদোন্নিত লাভ করেন ।এ ধরনের কৃতিত্ব এক বিরল ঘটনা। তাই ১৯৮৯ সনে তিনি আরব-বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রবর্তিত ‘ব্যাংকার অব দি ইয়ার’ এই বিরল সম্মানে ভূষিত হন । সৈয়দ আনিসুল হকের সুনাম, খ্যাতি ও যশ ফুলের সৌ্রভের ন্যায় চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে ।বাংলাদেশে তিনিই একমাত্র সৌভাগ্যবান ব্যাংকিং ব্যাক্তিত্ব যিনি নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেণ্টের পদ থেকে সরাসরি দ্বিতীয় প্রজম্মের সাউথ ইস্ট ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্হাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্তি হয়ে এক দুর্লভ সম্মান লাভ করেন ।তাঁর খ্যাতি ও যশের স্বীকৃতিস্বরুপ তিনি ব্যাংক এশিয়া লিঃ-এর সি,ই,ও পদটি গ্রহণের আমন্ত্রণ পান ।তৃতীয় প্রজম্মের এই ব্যাংকটির আমন্ত্রণপত্র তিনি সানন্দে গ্রহণ করেন এবং ২০০০ সনের জুন মাসে ব্যাংটির প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্হাপনা পরিচালকের গুরুদায়িত্ব গ্রহন করেন ।সেই অবধি আজ পর্যন্ত তিনি ব্যাংকটিতে উক্ত পদে সমাসীন আছেন ।
এখানে তাঁর অনন্য অবদান হলো বাংলাদেশে স্হাপিত কানাডার ব্যাংক অব নোভাস্কশিয়া ও পাকিস্তানের মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংকের অধিগ্রহণ করা,তাঁর এই অবদান ব্যাংকিং ইতিহাসে এক মাইলফলক হয়ে আছে ।জনাব সৈয়দ আনিসুল হক বিশ্বব্যাপী স্বীকৃ্তি ‘ব্র্যাকেন অ্যাওয়ার্ড’ কর্তৃক ২০০৭ সনের ব্যাংক অব দি ইয়ার পুরষ্কার গ্রহন করেন ‘দি ব্যাংকার ম্যাগাজিন’-এর সম্পাদক ব্রায়ান কাপলান-এর নিকট থেকে ।লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে উক্ত পুরষ্কার-প্রদান অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে প্রাক্তন বি.বি.সি. করেসপন্ডেট মাইকেল বুয়ার্ক উপস্হিত ছিলেন ।
বিশ্বের ১৪৩ দেশের ৪৫৭টি ব্যাংকের মধ্য থেকে ১৫৫টি ব্যাংকে পদও এই পুরষ্কার বিজয়ীগণকে বিশ্বের ব্যাংকিং কমিউনিটির সেরা এবং সবচেয়ে বেশি সাফল্য অর্জনকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয় ।জনাব সৈয়দ আনিসুল হক একজন বিশ্ব পরিভ্রমণকারী ।তিনি পেশা জীবনে নিজের জ্ঞনকে সমৃদ্ধ করার জন্য দেশ ও বিদেশে বহু প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন ।তাঁর মধ্যে ১৯৯৮ সনে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইনস্টিটিঊট অব ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট,বোস্টন ও পশ্চিম জার্মানিতে ১৯৯০ সনে আলাবামায় ঋণ ব্যবস্হাপনার উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ লাভের বিষয়টি সবিশেষ উল্লেখযোগ্য ।তিনি টেবিল টেনিস ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ও ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন (বাংলাদেশ)-এর সহ-সভাপতি ছিলেন ।
তিনি তাঁর নিজের গ্রাম বৌ্লাইয়ের একজন মহান ব্যাক্তিত্ব বর্তমানে তিনি তাঁর নিজের গ্রামকে আলোকিত করে দিয়েছেন করে দিয়েছেন একটি স্কুল যার নাম সৈয়দ হাবিবুল হক উচ্চ বিদ্যালয় এবং সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অনেক দরিদ্র মেধাবি ছাত্র/ছাত্রীদের মাঝে এমনকি গ্রামের মানুষদেরও বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে থাকেন এবং মসজিদ মাদ্রাসায়ও তিনি সাহায্য করে থাকেন। তিনি কিশোরগঞ্জের একজন কৃতি সন্তান ।
আমাদের কিশোরগঞ্জের সোনার ছেলে। মন্ত্রী/এম,পি মহোদয় দের মেয়াদ তো বেশী হলে পাচ বছর, – সোনার ছেলেদের মেয়াদ? আজীবন। তাই, – “তোরা যে যাই বলিস ভাই, মোদের কিশোরগঞ্জে আরও সোনার ছেলে চাই”।
তথ্য বহুল সুন্দর লেখার জন্য, অভিবাদন।