মুহম্মদ বাকের ১৯৪৭ খ্রীঃ ১৭ জানুয়ারী কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানার সরিষাপুর গ্রামের মাষ্টার বাড়ীতে জন্মগ্রহন করেন। পিতা মরহুম আলহাজ্ব সামসুদ্দিন আহমদ এবং মাতা মরহুমা জহুরা আক্তার খাতুন ।

উল্লেখ্য যে, জনাব মুহম্মদ বাকেরের পিতামহ মাহমুদ মাষ্টার ছিলেন সরিষাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা । শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন বলে তা’কে মাষ্টার বলা হতো এবং এই নামেই মাষ্টার বাড়ীর নামকরণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে বার্মায় (মায়ানমার) বিশাল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । জনাব বাকেরের মাতামহ করম নেওয়াজ উকিল ছিলেন বাজিতপুর থানার প্রথম মুসলমান বিএল পাশ উকিল । তিনি বাজিতপুর পৌরসভার চেয়ারম্যানও ছিলেন । তার নামেই তার বাড়ীটি উকিল বাড়ী নামে পরিচিতি লাভ করে । মুহাম্মদ বাকেরের পিতা আলহাজ্ব সামসুদ্দিন আহম্মদ বৃটিশ আমল থেকে শুরু করে দীর্ঘ বাইশ বছর হিলচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রেসিডেন্ট ছিলেন । তিনি জুরী বোর্ডেরও একজন সদ্যস ছিলেন ।জনহিতকর কাজের জন্য তিনি বৃটিশ সরকার কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছেন ।

শিক্ষা ও অন্যান্য প্রসঙ্গঃ  বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম এ। এছাড়া পোলান্ডের ওয়ার’শস্থ Central School of planning & Statistics থেকে উচ্চতর শিল্প ব্যবস্থাপনায় পোষ্ট গ্রেজুয়েট ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। ২০০২ সালে তিনি হজ্ব ব্রত পালন করেছেন।

সাহিত্য কর্মঃ একজন নাট্যকার হিসেবে তিনি সাহিত্য জগতে প্রবেশ করেন। ষাটের দশকে তিনি নিজ গ্রাম সরিষাপুরে ‘নাট্যগোষ্ঠী’ নামে একটি নাট্য সংস্থা গঠন করেন। তখন তিনি ছিলেন মাধ্যমিক স্কুলের নবম শ্রেনীর ছাত্র। নিজেই নাটক লিখে নাটক মঞ্চায়নের কাজ শুরু করেন। কিছু দিনের মধ্যেই এই নাটক গোষ্ঠী নাট্যমোদীদের বিশেষ আকর্ষন করে নেয় এবং ধীরে ধীরে বাজিতপুর অঞ্চলে ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি করে। বাজিতপুরে সরিষাপুর নাট্যগোষ্ঠীই সর্বপ্রথম বিভিন্ন ধরনের নিরীক্ষাধর্মী আধুনিক নাটক মঞ্চায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।এই নাট্যগোষ্ঠীর মাধ্যমে বেশ ক’জন খ্যাতিমান নাট্যব্যক্তিত্ব আত্মপ্রকাশ করেন। বাজিতপুর তথা সমগ্র পূর্ব ময়মনসিংহের প্রবাদ পুরুষ প্রয়াত নাট্য শিল্পী হরিদাস বণিক এই নাট্য সংস্থার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বর্তমান সময়ের বিশিষ্ট নাট্যকার গোলাম শফিক ও বদরুজ্জামান আলমগীর এবং বিশিষ্ট গল্পকার কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর এই সংস্থার মাধ্যমেই সংস্কৃতি জগতে প্রবেশ করেছেন।

 মঞ্চ নাটক লিখে যাত্রা শুরু করার পর সত্তরের দশকে মুহম্মদ বাকের বাংলাদেশ বেতারের সঙ্গে জড়িত হওয়ার পর অনেকগুলো বেতার (শ্রুতি) নাটক রচনা করেন। তার লেখা বেতার নাটক- ‘চম্পাবতীর মেইল ট্রেন’ ক্ষুধিত পাষান এবং’ ও ‘সরল বৃক্ষের কথা’ এবং মঞ্চনাটক- ‘চিতাবাঘের কথা’ ‘চন্দ্রধরের পালা’ সুধীমহলে বিশেষ ভাবে নন্দিত হয়েছে। আশির দশকের পর তিনি আর কোন নতুন নাটক লিখেন নি।

 নব্বই এর দশক থেকে তিনি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের উপর লেখালেখি শুরু করেন।ইতিহাস ও ঐতিহ্যের উপর ইতিমধ্যে তার কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। আরো দুটো বই প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন প্ত্র পত্রিকায় তার বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ২০০৪ খ্রীঃ কিশোরগঞ্জ ইতিহাস পরিষদ তাকে বিশেষ সন্মাননা প্রদান করেছেন। কিশোরগঞ্জ ছড়া উৎসব পরিষদ ২০০৭ সালে গবেষনা কর্মের জন্য তাকে সুকুমার রায় সাহিত্য পদক প্রদান করেছেন। মুহম্মদ বাকের বাংলাদেশ বেতারের একজন তালিকাভুক্ত গীতিকার ও ছড়াকার।

 তার লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ সমুহ হলঃ

 নাটকঃ

(ক) মঞ্চনাটকঃ অগ্নিশিখা, মহাবিদ্রোহ (স্পার্টাকাস অবলম্বনে), পিতৃঘাতী পাষন্ড (ইডিপাস অবুলম্বনে), পলাশীর কান্না, ভগ্ন সত্তা, চিতা বাঘের কথা, কুয়াতে বাহার হালুয়া।

(খ) বেতার নাটকঃ যখন ফুলে বন্যা এলো, ক্ষুধিত পাষান এবং, ফিরোজা বেগমের দিনগুলো, তমা আমার তমা, সরল বৃক্ষের কথা, ছায়া ছায়া মেঘ রোদ্দুর, চন্দ্রধরের পালা, হেমলক কিংবা গরুর দুধ, কুসুম রঙ, উত্থাল পদ্মায় হরিপদ কেরানী, একদিন রোববারে, চম্পাবতীর মেইল ট্রেন নাটক দুটো মঞ্চনাটক হিসেবে রুপান্তর করা হয়েছে।

 (গ) গল্প থেকে নাটকঃ শাস্তি (মূল- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর), পোষ্ট মাষ্টার ((মূল- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর),নসর পেয়াদা (মূল-প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ), রানুর প্রথম ভাগ (মূল- বিভূতিভূষন মুখোপাধ্যায়), ফরমায়েসী গল্প (মূল- প্রমথ চৌধুরী), প্রাগৈতিহাসিক (মূল- মানিক বন্দোপাধ্যায়), আমাকে একটি ফুল দাও (মূল- আলাউদ্দীন আল আজাদ)।

 (ঘ) শিশু কিশোর নাটকঃ মিথ্যা বলার অনেক জ্বালা, দর্জি পাড়ার নতুন দা (শরৎ চন্দ্রের শ্রীকান্ত থেকে)।

উল্লেখ্য যে, ঢাকা থেকে প্রকাশিত বদরুজ্জামান আলমগীর সম্পাদিত নাট্য সাময়িকী ‘নাট্যপত্র’ ১৯৯২ খ্রীঃ এপ্রিল সংখ্যাটি বাকের সংখ্যা হিসেবে বের করা হয়। এতে মুহম্মদ বাকেরের পাঁচটি নাটক প্রকাশ করা হয়।

 ইতিহাসঃ Glimpse of Cox’s Bazar, প্রকাশকাল- ১৯৯৫, প্রকাশনায় কক্সবাজার ফাউন্ডেশন, বাজিতপুরের কথা, প্রকাশকাল-১৯৯৫, প্রকাশনায় তানভীর আহমেদ, টাঙ্গাইল জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য, প্রকাশকাল ১৯৯৭, প্রকাশনায়- টাঙ্গাইল জেলা পরিষদ, লৌহিত্যে প্রতিরোধ, প্রকাশকাল- ১৯৯৭, প্রকাশনায়-শিল্পতরু প্রকাশনী, আরব ইতিহাসের মর্মান্তিক অধ্যায়, প্রকাশকাল-২০০৩, প্রকাশক- মাম্মী প্রকাশনী, মুক্তিযুদ্ধে বাজিতপুর, প্রকাশকাল- ২০০৭, প্রকাশনায়- ধমনী প্রকাশনী। এছাড়া প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে ‘কিশোরগঞ্জ জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’ ও মোঘল সাম্রাজ্যে পারিবারিক বিপর্যয়। কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন থেকে নবরুপে প্রকাশিতব্য কিশোরগঞ্জ জেলার ইতিহাস গ্রন্থের সম্পাদক পরিষদের তিনি একজন সদস্য।বিভিন্ন সাময়িক পত্রে তাঁর অসংখ্য লেখা প্রকাশিত হয়েছে।

বিভিন্ন সংস্থার সাথে সংশ্লিষ্টতাঃ আজীবন সদস্য-বাংলা একাডেমী, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন, কিশোরগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরী ও বিসি এস মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ সমিতি।

প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিঃ বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতি কক্সবাজার, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতি চট্টগ্রাম এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। 

সদস্যঃ এশিয়াটিক সোসাইটি।এছাড়া, ঢাকাস্থ বাজিতপুর সমিতি, স্বজনভুবনসহ আরো কিছু সামাজিক সংস্থার সঙ্গে জড়িত।