এককালে সুলভ ছিল, এখন দুর্লভ। এখন শুধু দেখা মেলে বড় বড় চর, হাওর ও নির্জন মোহনীয় স্থানে। শান্ত স্বভাবের নিরীহ পাখি এই কাঁচিচোরা। কালো ঠোঁটটা দেখতে প্রায় ধানকাটা কাঁচির মতোই। নাম তাই কাঁচিচোরা। পুরো শরীর সাদা। মাথা ও ঠোঁট কালো। ঘাড়-মাথা অবশ্য পালকহীন। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির গাদির তলটা অবশ্য সাদা থাকে; মুখের পাশটাও সাদা। তাই ফকিরহাট-বাগেরহাটে এদের বলা হয় ধলবদনীও। জল-বাদার ভেতরে ঠোঁট-ঘাড়-মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে জল-কাদা চষতে চষতে সামনের দিকে এগোয় যখন খাদ্য খুঁজতে খুঁজতে, তখন দেখলে আশ্চর্য হতেই হয়। এ জন্য ফকিরহাটে এদের আরেক নাম চরখুঁচি। চেহারায় রাজা-রাজা ভাবটা তেমন না থাকলেও স্বভাব এদের রাজকীয়। যেখানেই চরুক না কেন, আশপাশে দেহরক্ষীর মতো দু-চারটা বক-পানকৌড়ি-কাদাখোঁচা হট্টিটি বা অন্য পাখি ঘুরঘুর করে। এটা করে এই জন্য, চরখুঁচির জল-কাদা ঘাঁটার কারণে পোকা কিংবা মাছ লাফিয়ে উঠলেই যেন গাপুস করা যায়। ছবির পাখিটির চারপাশে চারটি সাদা বককে দেখে কি দেহরক্ষী বলে মনে হচ্ছে না?
কাঁচিচোরাদের খাদ্যতালিকায় আছে জলজ পোকামাকড়, কুচো চিংড়িসহ ছোট মাছ, কেঁচো, ব্যাঙ ইত্যাদি।
ডিমপাড়া মৌসুম তথা প্রেমের মৌসুমে এদের গলা-ঘাড়ে ঝোলে-দোলে সাদাটে রঙের সুতোপালক। বাসা করে বক-পানকৌড়ির সঙ্গে মিলেমিশে; এখানেও দেহরক্ষী তথা ডিম-ছানার পাহারাদার বক-পানকৌড়িরাই। তবে শিকারি পাখিদের লোভ কাঁচিচোরার ছানাদের প্রতিই বেশি থাকে। অতএব, ছানা তুলে নেয় শিকারি পাখিরা। এদের ডিম হয় দু-চারটি। রং মেটে সাদা। ২৩ থেকে ২৫ দিনে ডিম ফোটে।
উপকারী ও নিরীহ এই পাখির ইংরেজি নাম Black-headed ibis। বৈজ্ঞানিক নাম threkiornis melanocephalus। মাপ ৭৫ সেন্টিমিটার।
You must log in to post a comment.