ভূমিকা: বাংলাদেশের পাখির তালিকায় [ Megalaima ] গণে বাংলাদেশে রয়েছে এর ৫টি প্রজাতি এবং পৃথিবীতে ২৪টি প্রজাতি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতিগুলো হচ্ছে ১. নীলগলা বসন্ত, ২. নীলকান বসন্ত, ৩. সেকরা বসন্ত, ৪. দাগি বসন্ত ও ৫. বড় বসন্ত। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম হচ্ছেদাগি বসন্ত।

দ্বিপদ নাম: Megalaima lineata(Vieillot, 1816)
সমনাম: Bucco lineatusVieillot, 1816
বাংলা নাম: দাগি বসন্ত
ইংরেজি নাম: Lineated Barbet

বর্ণনা: দাগি বসন্ত সবুজ রঙের মাঝারি আকারের বৃক্ষচারী পাখি (দৈর্ঘ্য ২৮ সেমি, ওজন ১৫৫ গ্রাম, ডানা ১৩ সেমি, ঠোঁট ৩.২ সেমি, পা ৩ সেমি, লেজ ১৮.৫ সেমি)। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহের পুরোটাই ঘাস-সবুজ; মাথা ও বুকের পালকে ফ্যাকাসে ডোরা রয়েছে; মাথা ও কাঁধ-ঢাকনিতে পীতাভ সাদাটে ডোরা; থুতনি ও গলা সাদাটে; এবং বুকে পীতাভ সাদা ডোরা আছে। ঠোঁট ফিকে হলুদ; চোখ বাদামি, চোখের পাতা গাঢ় হলুদ; পা ও পায়ের পাতা মেটে হলুদ থেকে কমলা-হলুদ।ছেলে ও মেয়েপাখির চেহারা অভিন্ন। ২টি উপ-প্রজাতির মধ্যে M. l. hodgsoni ] বাংলাদেশে পাওয়া যায়।

স্বভাব: দাগি বসন্ত সব ধরনের বন, খোলা বনভূমি, উদ্যান ও গ্রামে বিচরণ করে;সাধারণত একা, জোড়ায় বা বিচ্ছিন্ন দলে দেখা যায়। ফলদ গাছ ও ঝোপে খাদ্য খায়;খাদ্যতালিকায় রয়েছে ফল, ফুলের মধু, উইপোকা, লার্ভা, টিকটিকি ও গেছো ব্যাঙ।গ্রীষ্মকালে এরা অবিরাম ডাকাডাকি করে; জোর গলায় বন কাঁপিয়ে ডাকে: কুরক… এবং পুক্রো… পুক্রো…। মার্চ-জুন মাসের প্রজনন ঋতুতে ভূমি থেকে ৩-১২ মিটার উঁচুতে গাছের ডালে গর্ত খুঁড়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা; সংখ্যায় ২-৪টি ; মাপ ৩.২×২.৩ সেমি। বাসার যাবতীয় কাজ ছেলে ও মেয়ে মিলে করে। ১৪-১৫ দিনে ডিম ফোটে।
বিস্তৃতি: দাগি বসন্ত বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি; সকল বিভাগের সববনভূমিতে বসবাস করে। ভারতের হিমালয়ের পাদদেশ থেকে নেপাল ও ভুটান থেকেমিয়ানমারের পূর্বভাগ, থাইল্যান্ড, ইন্দোচীন, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।
অবস্থা: দাগি বসন্ত বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবিধ: দাগি বসন্ত পাখির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ দাগি গলাবাজ (গ্রীক: [ Megalos] = বড়,[ laimos] = গলা; ল্যাটিন: [ lineatus] = রেখা)।

লেখকঃ মো: আনোয়ারুল ইসলাম ও এম. কামরুজ্জামান।