পাকড়া ধনেশ । অনেকে ‘বাগমা’ বা ‘কাউ ধনেশ’ বলেও ডাকে। এ দেশের দুর্লভ ও বিপন্ন আবাসিক পাখি এরা। এরা বড় আকারের পাখি। লম্বায় প্রায় ৯০ সেমি। সাদা-কালো পাকড়া ধনেশের হলদে লম্বা ঠোঁটজোড়া নিচের দিকে বাঁকানো। ওপরের ঠোঁটের বর্ধিত অংশকে Casque বা বর্ম বলে। আকার ও রঙে স্ত্রী-পুরুষে কিছুটা পার্থক্য থাকে। পুরুষের দেহের ওপরের অংশ চকচকে কালো। বর্মের সামনের অংশে খানিকটা কালোর ছোঁয়া। গলার পালকবিহীন অংশে নীলাভ চামড়ার পট্টি। চোখের পেছনের চামড়া নীলচে সাদা। বুক, পেট ও ডানার কিনারা সাদা। লেজ লম্বা ও কালো; আগা সাদা। চোখ লালচে। পা ও পায়ের পাতা সবুজাভ ধূসর। স্ত্রী আকারে ছোট। চোখ বাদামি। ঠোঁট ও বর্মে কালোর প্রাধান্য; বর্ম ছোট।

পাকড়া ধনেশ বড় পাতাওয়ালা চিরসবুজ ও পাতাঝরা বনের পাখি। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের বনাঞ্চলে দেখা যায়। ছোট দলে বাস করে। প্রধানত ফলখেকো হলেও পাখির ডিম-বাচ্চা, টিকটিকি, সাপ, ব্যাঙ, ইঁদুর বা উইপোকাতেও অরুচি নেই। গলার স্বর কর্কশ।মার্চ-জুন প্রজননকাল। মাটি থেকে বেশ উঁচুতে পুরোনো গাছের কোটরে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ার আগেই স্ত্রী নিজের মল ও পুরুষের আনা ভেজা মাটি দিয়ে নিজেকে বাসায় বন্দী করে ফেলে। শুধু একটি ছোট ফুটো রাখে পুরুষ থেকে খাবার গ্রহণের জন্য। এরপর সে দু-তিনটি সাদা ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে প্রায় ৩০ দিনে। বাচ্চারা বড় না হওয়া পর্যন্ত মা বাসায় বন্দী থাকে। এ সময় পুরুষ ধনেশ বউ-বাচ্চাকে খাওয়ায়।

বন ধ্বংস, চোরা শিকারি, তথাকথিত কবিরাজদের দৌরাত্ম্য, বাসা বানানোর পুরোনো ও বড় গাছের অভাব এদের বর্তমানে এ দেশের বিপন্ন পাখির তালিকায় স্থান করে দিয়েছে। কাজেই, দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে একদিন হয়তো বইয়ের পাতা ছাড়া আর কোথাও এদের দেখা মিলবে না।

-আ ন ম আমিনুর রহমান