সকল রাজনৈতিক দলেই জেলা শহর কিশোরগঞ্জে “উজান-ভাটির” অন্তঃর্দ্বন্দ আছে। নতুন কিছু নয়। দেখেছি এবং মুরুব্বীদের কাছে শুনেছি। ।
কিশোরগঞ্জ জেলা স্বর্নগর্ভা, বিশেষ করে রাজনিতী, সাহিত্য/সংস্কৃতআঙ্গনে। এ কারনেই সম্ভবতঃ কিশোরগঞ্জের আঙ্গিনায় রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের পদচারনা গুরুত্ব আর চ্যালেঞ্জ নেয়া অনেক রাজনীতিকেরই বাসনা। যদিও ভাটির রাজনৈতিক নেত্রিবৃন্দ বার বার জেলা রাজনিতীর হাল ধরেছেন, তথাপি ভাটির লোকজন কিশোরগঞ্জের সদরে নেত্রিত্ব দেয়ার বিষয়টি কোনদিনও কুসুমাস্তৃন ছিলো না, কারন মূলতঃ একটা, রাজনিতী অঙ্গনের “উজান-ভাটি” প্রার্থীদের সমর্থন, ভাজন, বিরাগভাজনতা।
যারা সরাসরি রাজনিতীতে সম্পৃক্ত উনারা ব্যাপারটা ভালো জানবেন। ভাটির মানুষ শুধু জেলা রাজনিতী’তে নয়, জাতীয় রাজনীতিতে বিভিন্ন সময়ে সাফল্যের, স্বাক্ষর রেখেছেন তা আজ আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। লক্ষনীয় যে, উজান রাজনীতিবিদ দের সংখ্যা ভাটী রাজনিতীবিদ দের চেয়ে বেশি, এবং জেলা শহরে স্থায়ী বসবাস বিধায় “কোরামে” ভালো, এবং রাজনৈতিক দল কর্মকান্ড ছাড়াও সদরের অনেক জি ও/ এন, জি ও দের সাথে সংশ্লীষ্টতায় উনাদের মধ্যে পারস্পারিক সমঝোতাটাও বেশ সহায়ক।
পক্ষান্তরে, ভাটি রাজনীতিবিদ দের বেলায় বেপারটা একটু কঠিন এবং ভিন্ন , যেমন এলাকার দলীয় কাজ ছাড়াও এলাকার নানা প্রকার কোলহ কোন্দল নিবারনে রাজনৈতিক জনপ্রতিনিধিরা, জেলা রাজনিতীবিদ দের “ফোনালাপ” ছাড়া তেমন একটা পরামর্শ, সহায়তা পান না বল্লেই চলে। শুধুমাত্র স্থানীয় নেতা কর্মী, সুধীজন নিয়ে সামাল দেন বৈরী পরিস্থিতি। আপাতঃ দৃষ্টিতে প্রতীয়মান না হলেও, উজান-ভাটি লোকালয়ের দিন রাতের ফারাক বৈশিষ্ট আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতেও বেশ বিদ্যমান। তবে, জাতীয় রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ভাইট্টাদের আবেগ আগ্রহ অন্যানয় জনপদের’চে বেশি বলে মনে হয়।
উল্লেখ্য, এক সময়ের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হাওরজনপদের মানুষ পদব্রজে, এমন কি হাওর সাতরিয়ে, কিশোরগঞ্জের কোর্ট, ষ্টেশনের বাড়ান্দায়, বাড়ী থেকে পুটূলি বাঁধা চিড়া, মুড়ী খেয়ে লুঙ্গী গায়ে জড়িয়ে রাত্রি যাপন শেষে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহনের জীবন্ত কিংবদন্তীদের দেখা এখনো পাওয়া যায়। আর এ কারনেই দেশ প্রেমিক দলবদ্ধ স্বার্থহিন অকুতোভয় ভাটির ছেলেরাই বার বার কিশোরগঞ্জের রাজনৈতিক আন্দোলনের পুরোভাগে থেকে নেত্রিত্ব দিয়েছে জাতির ক্রান্তিলগ্নে।
একটি ব্যাপার স্বতঃসিদ্ধ যে, কিশোরগঞ্জ সদর রাজনীতি বিজ্ঞ/মুরুব্বি মহলের আশির্বাদপুষ্ট প্রিয়ভাজন না হয়ে এলাকায় রাজনিতী অঙ্গনে বিচরন বেশ দূরহ ব্যপার। যদিও বিসয়টি কখনো সুখকর ছিলো না, তবুও কালক্রমে জেলা শহরের রাজনিতীতে এই রেওয়াজ খানি অনেক দিনের প্রতিষ্ঠিত ব্যাপার। দিন দুনিয়ার সবকিছুর মত অবহেলিত ভাটি এলাকার জনপদের এবং রাজনিতীতেও দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। কিশোরগঞ্জের জেলা রাজনিতীতে “উজান-ভাটির” ফারাক নিরসন এখন শুধু সময়ের দাবী। রাত পোহালে অনেক দিন পর কিশোরগঞ্জ জেলা রাজনিতীর সম্মেলন হতে যাচ্ছে। এলাকার ছেলেরা দলবেধে জেলা শহরে আসছে। অবস্থানে আমি বিশ্বের অন্য গোলার্ধে হলেও, অনেকেই বিভিন্ন সামাজিক ও অন্যান্য মাধ্যমে আমার সাথে যোগাযোগ করছে। আমাদের এলাকার সাংসদের জেলা সাধারন সম্পাদক পদপ্রাথিতা সমর্থনে। আমি ভাটির মানুষ।
জেলা সদরের রাজনিতীতে ভাটির প্রতিনিধি নেতৃত্ব দেবেন এটা আমার অহংকার, কাম্য এবং গর্ব। পরিশেষে, রাজনৈতিক দলীয় সিদ্ধান্ত যাই আসুক, ভাটির জনপ্রতিনিধি যেনো জেলা রাজনিতী অংগনে বিমাতাসুলভ আচরন না পেয়ে মুরব্বী মহলের স্নেহাধন্য হয়ে নিজ এলাকার রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জেলার সার্বিক সমর্থন নিয়ে “উজান-ভাটির” দূরত্ব নিরসনকল্পে এলাকার উন্নয়ন মুলক কাজ অব্যাহত রাখতে পারেন সেটাই কামনা করছি, এই দূর পরবাসে।