ছিপছিপে গড়নের ছোট সুন্দর পাখিটির নামও রোমান্টিক কবিতার শিরোনামের মতো—সোয়ালো। শীতকালে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে দেখা মেলে এদের। দ্রুতগামী। চঞ্চল। তীক্ষ দৃষ্টিসম্পন্ন ও কুশলী শিকারি। শিকার অবশ্য বড় কিছু নয়, ছোট ছোট পোকা, ছোট জলমাকড়সা ইত্যাদি। ওড়ে বেশি। বিশ্রাম করে কম। ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা যায় খোদ রাজধানী ঢাকা শহরেও। তবে, এখানে থিতু হয় না ওরা। দিগন্ত বিস্তৃত ধানখেত, সরষেখেত, হাওর-বাঁওড়-জলাশয় ও নদী-খালের ওপর এরা ওড়ে, ঘোরে। নদীর জল ছুঁয়ে ওড়ে বলে খাদ্য পেলেই নিপুণভাবে দুই ঠোঁটে ধরে ফেলে। জলপানও করে এরা উড়তে উড়তে। খাবার না মিললে সামনের দিকেই উড়তে থাকে এরা। মাঝেমধ্যে ডাকে। মিষ্টি ধাতব শব্দের মতো কণ্ঠস্বর। অনেকটা ‘ঠিক ঠিক’ শব্দের মতো লাগে। ধান-সরষেখেতের ওপর দিয়ে ধান-সরষে ছুঁই ছুঁই করে উড়তে উড়তে দুই পাখার বাতাসের ঝাপটায় পলাতক পোকা-পতঙ্গকে উড়তে বাধ্য করে এরা। উড়লেই ধরে ফেলে। শীতের পরিযায়ী এই পাখিটির পিঠ ও লেজের উপরিভাগের রং চকচকে ধাতব নীলচে সবুজ। ডানার উপরিভাগ ধাতব হালকা নীলচে ও সবুজ। গণ্ডদেশ ও কপাল পোড়া ইটের মতো লাল। ঠোঁট, গা কালচে। চোখটা মায়াবী নীলচে কালো। যখন ওড়ে, তখন লেজের দুই প্রান্তের দুটি পালক সুচের মতো বেরিয়ে থাকে, বগলে ওই দুটি সুচ পালক মিলে একটি সুচ হয়ে যায়। বুকটা এদের তুলট সাদা। রাতে এরা অনেক সময় জেলে নৌকার মাস্তুলে আশ্রয় নেয়। পাখিটির ইংরেজি নামটাই কাব্যিক Barn swallow। বৈজ্ঞানিক নাম Hirndo rustica। মাপ ১৮ সেন্টিমিটার। ঝাঁকে ঝাঁকে আসুক ওরা আমাদের এই সোনার বাংলাদেশে। থাকুক মহা সুখে। উড়ে উড়ে ওরা বাংলার আকাশে আঁকুক অলৌকিক ছবি।
– শরীফ খান